আজ- রবিবার | ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫
১২ মাঘ, ১৪৩১ | রাত ৪:১৪
২৬ জানুয়ারি, ২০২৫
১২ মাঘ, ১৪৩১
২৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২ মাঘ, ১৪৩১

টাঙ্গাইলের পোল্ট্রি শিল্প সিন্ডিকেটের কবলে

দৃষ্টি নিউজ:

dristy-pic-9টাঙ্গাইলের পোল্ট্রিশিল্প সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ধসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। অথচ জেলা পোল্ট্রি শিল্প রক্ষা মালিক সমিতির দাবি, দেশের অন্যতম পোল্ট্রি শিল্প এলাকা টাঙ্গাইল। দেশের এক তৃতীয়াংশ মাংস ও ডিমের চাহিদার যোগানদাতা এই জেলার পোল্ট্রিশিল্প।
এ শিল্পকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। কোম্পানীর আদলে গড়ে ওঠা ওই সিন্ডিকেট জেলঅর পুরো পোল্ট্রিশিল্পকে জিম্মি করে রেখেছে। একদিনের বাচ্চা সঙ্কট, ফিডের মূল্য বৃদ্ধিসহ মেডিসিন ও ভ্যাকসিনের মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে এ শিল্পে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। বহুবিধ আগ্রাসনের কবল আর নানাবিধ প্রতিবন্ধকতায় পড়ে স্ব-উদ্যোগে গড়ে উঠা এই শিল্প এখন ধংসের পথে। দিশেহারা হয়ে পড়ছেন সংশ্লিষ্ট খামারিরা।
জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের সূত্রমতে, জেলায় রেজিস্ট্রিকৃত লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ১ হাজার ২৭৬টি ও ব্রয়লার খামার রয়েছে ১ হাজার ৬৭৮টি। এছাড়াও রেজিস্ট্রিবিহীন ভাবে চলছে ৩ হাজার ৪০০ মুরগির খামার। এর মধ্যে ২টি লেয়ার হ্যাচারিও রয়েছে। এর ১টি সরকারি ও ১টি বেসরকারি। এছাড়াও জেলায় বেসরকারি ৬টি ব্রয়লার মুরগির হ্যাচারি রয়েছে।
জেলা পোল্ট্রি শিল্প রক্ষা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও খামারীদের অভিযোগ, দেশের বস্ত্র শিল্পের পাশাপাশি অর্থনীতিতে অবদান রাখা এ পোল্ট্রি শিল্পের অগ্রসরতা ধংসে একটি বহুজাতিক কোম্পানীর আদলে গড়া সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। পোল্টি শিল্পের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে ও অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জনে এ সিন্ডিকেট ১ দিনের বাচ্চা সঙ্কট, ফিডের মূল্য বৃদ্ধি ও মেডিসিন এবং ভ্যাকসিনের মূল্য বৃদ্ধি করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে।
বিগত দিনে তারা খাদ্য ও ডিমে সিন্ডিকেট করলেও এবার তারা বেছে নিয়েছে ভিন্ন এই পন্থা। পোল্ট্রি শিল্পের অগ্রগতিতে সর্বোচ্চ প্রয়োজনীয় একদিন বয়সী বাচ্চার ক্ষেত্রে খামারিদের ‘গলাটিপে’ ধরা হচ্ছে। কৃত্রিম এ সঙ্কট সৃষ্টি করে বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো একদিন বয়সের বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে  কয়েকগুন। এছাড়া চাহিদার তুলানায় বাচ্চা সরবরাহ বন্ধ করে এ সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এর ফলে বাড়তি দাম দিয়েও বাচ্চা পাচ্ছেন না খামারিরা। আবার কোম্পানিগুলো নিজেরাই মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য বাজারে তৈরি করছে এই কৃত্রিম সঙ্কট। এ সিন্ডিকেটের অপকৌশলের ফলে স্ব-উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রান্তজনের এই শিল্প আবার ধংসের পথে দাঁড়িয়েছে।
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার, ভূঞাপুর, কালিহাতী, ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খামারে সরেজমিনে দেখা গেছে একই চিত্র। সর্বত্রই একদিন বয়সী বাচ্চার জন্য হাহাকার।
খামারিরা জানান, দু’মাস আগে একদিন বয়সের ব্রয়লার বাচ্চার দাম ধরা হতো ৪০ টাকা। বর্তমানে সেই বাচ্চার দাম ধরা হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। আগে লেয়ার বাচ্চার দাম ধরা হতো ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর এখন সেই বাচ্চার দাম ধরা হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আইন ভঙ্গ করে মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য তাদের উৎপাদিত একদিন বয়সের এসব বাচ্চা নিজেদের খামারে ব্যবহার করছে। এতে করে বাজারে বাচ্চার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ভূঞাপুর উপজেলা লেয়ার পোল্ট্রি মালিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর ফকির বলেন, ভাইরাস জনিত রোগে অনেকগুলো খামারের মুরগি মারা গেছে। যে সমস্ত খামারের মুরগি মারা গেছে তারা এখন নতুন করে বাচ্চা উঠাবে কিন্তু বাজারে কোনো কোম্পানির বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না। বাচ্চা না পাওয়ার কারণে ওই খামারিরা এখন দিশেহারা।
কালিহাতী উপজেলার জোকার চর গ্রামের লেয়ার খামারি আসাদ বলেন, নানা সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে একজন খামারিকে দিন পার করতে হয়। এ যেন এক যুদ্ধ ক্ষেত্র। অধিকাংশ খামারি এই যুদ্ধে পরাজিত। তারপরও যখন এই শিল্পের একটু সুদিন আসে তখনি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো চালায় নতুন নতুন চক্রান্ত।
পোল্ট্রি শিল্প রক্ষা জাতীয় পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন বলেন, আমরা বারবার সরকারের কাছে দাবি তুলেছি বহুজাতিক কোম্পানির আগ্রাসনের হাত থেকে এই শিল্পকে রক্ষার জন্য। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সরকার আমাদের দাবি আমলে নেন না। আমরা খামারিরা দেশের মাংস ও ডিমের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। আমরা মনে করি, দেশের পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বহুজাতিক কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিনয় কুমার নাগ বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো আমরা সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সরকারিভাবে একদিন বয়সের বাচ্চা উৎপাদনের কার্যক্রম চালু হয়েছে কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। যে সকল বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এসব কাজে জড়িত রয়েছে হাইকোর্টে একটি মামলা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে  কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছিনা। সরকার এই বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। অচিরেই এসকল সমস্যার সমাধান হবে।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়