আজ- শুক্রবার | ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
১ ফাল্গুন, ১৪৩১ | রাত ১২:২১
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
১ ফাল্গুন, ১৪৩১
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১ ফাল্গুন, ১৪৩১

টাঙ্গাইলে পাটপণ্যের বিনিয়োগ হুমকির মুখে ॥ উদ্যোক্তারা হতাশ

দৃষ্টি নিউজ:

dristy-3
টাঙ্গাইলের বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্র (জেইএসসি) এর কার্যালয় স্থানান্তর নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হওয়ায় ২৫০ বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম হতাশা ও ব্যবসায়ীক ধসের শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। তাদের বিনিয়োগও হুমকির মুখেও পড়েছে।
জানা যায়, দেশের প্রচলিত পাট পণ্যের চাহিদা ও দ্রুত মূল্য-হ্রাসের প্রোপটে পাট শিল্পকে ধংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রচলিত পাটপণ্য সামগ্রীর পাশাপাশি উচ্চমূল্য সংযোজিত বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনসহ দেশে-বিদেশে ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষে ২০০২ সালে ইউরোপীয় কমিশনের অর্থায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার’(জেডিপিসি) গড়ে তোলা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জেডিপিসি বিভিন্ন প্রশিণ, উদ্যোক্তা তৈরি, প্রযুক্তি সরবরাহ ও বিপণনে সহায়তা দিচ্ছে। পাটের বহুমাত্রিক ব্যবহার ও বহুমুখীকরণের মাধ্যমে পাট শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার টেকশই উন্নয়নের লক্ষ নিয়ে কার্যক্রম বিস্তৃতির অংশ হিসেবে ২০১২ সালে টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়ায় বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্র (জেইএসসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সেবা কেন্দ্রটি চালুর পর থেকে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জামালপুর ও শেরপুরের ২৫০ জন বেসরকারি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে এই উদ্যোক্তারা পাটজাত পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করতে বিনিয়োগ শুরু করে লাভবানও হচ্ছিলেন।
দীর্ঘ চার বছর ধরে বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্র (জেইএসসি) টাঙ্গাইলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় উদ্যোক্তারা ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ায় এই শিল্পে সুনাম অর্জনের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনাও। কিন্তু হঠাৎ করেই টাঙ্গাইল কেন্দ্রটি জামালপুরে স্থানান্তর করার খবরে চরম হতাশা আর ব্যবসায়িক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে এ শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। খবরটি উদ্যোক্তাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারা কেন্দ্রটি স্থানান্তর না করার জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে আবেদন করে। একই সাথে কেন্দ্রটি স্থানান্তর বন্ধে টাঙ্গাইল জেলার ৪০ লাখ মানুষের পক্ষে উদ্যোক্তা ও প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, সরকারিভাবে কোন নির্দেশনা না দিলেও জেইএসসি’র টাঙ্গাইল কার্যালয় স্থানান্তর করতে অতিউৎসাহী কতিপয় স্বার্থান্বেষী রাজনীতিক ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। একদিকে সরকারি কোন নির্দেশনা নেই অপরদিকে ভাড়ায় নেওয়া টাঙ্গাইল কার্যালয়টির চুক্তি মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন চুক্তি নিয়ে কোন তৎপরতা না থাকায় স্থানান্তর নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ব্যাপক সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্র (জেইএসসি) টাঙ্গাইলের সেন্টারটি স্থানান্তর না করার দাবি জানিয়েছে উদ্যোক্তারা।dristy-4
পারমিতা উইমেন্স ওয়ার্ল্ডের পরিচালক ও বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা ডা. সাহিদা আক্তার বলেন, এই কেন্দ্রটি টাঙ্গাইলের সম্পদ। এটা চলে গেলে আর হবে না। টাঙ্গাইলের নারী উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই পাটপণ্য নিয়ে কাজ করছে। তারা পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে এই কেন্দ্রটি থেকে নানা ধরনের ডিজাইন সংগ্রহ করছে। কিন্তু কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত হলে টাঙ্গাইলের সকল নারী উদ্যেক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা নতুন কোন ডিজাইনের পণ্য তৈরি করতে পারবে না। এই পণ্যের শো-রুম গুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে এক দিকে এই শিল্পের সাথে জড়িতরা আর্থিক ও ব্যবসায়িক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে সম্বাবনাময় এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে নারী উদ্যোক্তারা।
তিনি বলেন, এই কেন্দ্রটি অন্যত্র চলে গেলে নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে প্রযুক্তি সরবরাহ ও পণ্য বিপণন সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ফ্যাশনের শপিং ব্যাগ, লেডিস ব্যাগসহ অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য পাটপণ্য তৈরি হলেও আমরা আর আগের মত দেশ-বিদেশের মেলা গুলোতে আর অংশ নিতে পারবো না। তিনি এই শিল্প ও নারী উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে এই কেন্দ্রটি স্থানান্তর বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অন্যান্য উদ্যোক্তারা বলেন, জেইএসসি টাঙ্গাইল থেকে বহুমুখী পাটপণ্য বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতা কর্মশালা, দক্ষতা ও উচ্চ দক্ষতা প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন ও ফ্যাশনের শপিং ব্যাগ, লেডিজ ব্যাগসহ অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য পাটপণ্য তৈরি ও বিক্রয় করে আসছেন। কিন্তু এই মুহুর্তে টাঙ্গাইল সেবা কেন্দ্রটি স্থানান্তর করা হলে এ শিল্পের সাথে জড়িত আমরা সবাই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। সেই সাথে সম্ভাবনাময় এ শিল্পটিও ধংসের মুখে ধাবিত হবে।
জেইএসসি টাঙ্গাইল কেন্দ্রের ইনচার্জ দিদারুল হক জানান, তিনি প্রধান কার্যালয়ে চিঠির মাধ্যমে টাঙ্গাইল কেন্দ্রের সকল তথ্য জানিয়েছেন। সেই সাথে অফিস- এর চুক্তিপত্র নবায়নের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত চেয়েছেন। বিষয়টি এখন প্রধান কার্যালয়ের অধীনে। তবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রটি স্থানান্তর হচ্ছে কিনা এ ধরনের কোন অফিসিয়াল পত্র তারা পাননি।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়