আজ- ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সকাল ৯:০৮

টাঙ্গাইলে বিএডিসির ‘অচল নলকূপ সচলকরণ প্রকল্প’ মুখ থুবড়ে পড়ছে!

 

দৃষ্টি নিউজ:

dristy-pic-18
টাঙ্গাইলে ‘অচল নলকূপ সচলকরণ প্রকল্প’ গতি পাচ্ছেনা। বিএডিসি’র অব্যবস্থাপনার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো চাষীরা। স্কীম পরিচালনা কমিটি নিয়ে জালিয়াতি ও দুর্নীতি করায় অবকাঠামোগত কাজ মুখ থুবড়ে পড়ছে। ফলে কোনো কোনো স্থানে সেচের অভাবে জমি পতিত থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিশেষ আগ্রহে ২০১২/১৩ সেচ বর্ষ থেকে দেশে প্রায় ২০ হাজার অচল গভীর নলকূপ সচল করণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এজন্য সরকার প্রায় ছয়শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে অচল গভীর নলকূপ সেচের উপযোগী করার জন্য ভূগর্ভস্থ সেচ পাইপ বসানো হয়। সেচনাল ও অবকাঠামোগত কাজ শেষে বিনা খরচে দেয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। প্রিপেইড পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে কৃষকরা গভীর নলকূপ থেকে বোরো ও রোপা আমন মৌসুমে সুলভে সেচ দেয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। টাঙ্গাইল বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, জেলার ধনবাড়ী উপজেলায় ৪টি, গোপালপুর উপজেলায় ৭টি এবং মধুপুর উপজেলায় ৬টি গভীর নলকূপ এ পদ্ধতিতে চালু করা হয়েছে। এসব উপজেলায় আরো ১০টি নলকূপ চালুর পর্যায়ে রয়েছে। এ পদ্ধতি চালুতে সরকারের ব্যয় হয় ৬-৭ লাখ টাকা। কিন্তু বিএডিসির দুর্নীতির কারণে নলকূপের সেচ স্কীম পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে অনেক স্থানে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এজন্য প্রকৃত কৃষকরা ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যেমন ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দী ইউনিয়নের মুশুদ্দী দক্ষিণ পাড়া ১১২নং গভীর নলকূপ পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে চলছে তুঘলকী কান্ড। ওই গ্রামের আদর্শ কৃষক আরফান আলী মাস্টার টানা চার দশক ধরে ওই গভীর নলকূপ পরিচালনা করে আসছেন। বিএডিসির নিয়ম মেনে তিনি পরবর্তীতে নলকূপটি নিজ নামে কিনেও নেন। কিন্তু সেচের কমান্ড এরিয়া কমে যাওয়ায় এবং সেচের জমির সীমানা নিয়ে গ্রামীণ কোন্দল দেখা দেয়ায় মাঝে কয়েক বছর নলকূপ বন্ধ থাকে।
কৃষক আরফান আলী অভিযোগ করেন, গ্রামের কৃষকদের অন্ধকারে রেখে বিএডিসি’র দুর্নীতিপরায়ন কতিপয় কর্মকর্তারা বিপুল পরিমাণ উৎকোচের বিনিময়ে পাড়ার দুই সেনা সদস্য এমদাদুল হক ও সেলিমুল ইসলামকে জালিয়াতির মাধ্যমে ম্যানেজার ও সভাপতি করে গোপনে স্কীম পরিচালনা কমিটি দাঁড় করায়। বিএডিসি’র ঠিকাদার ভূগর্ভস্থ সেচনালা ও আনুসঙ্গিক অবকাঠামোগত কাজ করতে গেলে চাষীরা টের পান। গ্রামবাসীরা ঠিকাদারকে নির্মাণ কাজে বাধা দেয়। লিখিত অভিযোগ দেয়া হয় ধনবাড়ী উপজেলা সেচ কমিটির কাছে। সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মীর ফারুক আহমাদ বিষয়টি ফয়সালার জন্য গ্রামের কৃষকদের উপজেলা অফিসে ডেকে নেন। সেখানে উপস্থিত কৃষকদের সম্মতির ভিত্তিতে আরফান আলীকে ম্যানেজার এবং তোরাপ আলীকে সভাপতি করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট স্কীম পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়।
নির্বিঘেœ ও সুলভে সেচ পরিচালনার স্বার্থে উপজেলা চেয়ারম্যান মীর ফারুক আহমাদ এ নতুন কমিটিকে অনুমোদন দিয়ে বিএডিসিকে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার অনুরোধ করেন। কিন্তু বিএডিসি উপজেলা সেচ কমিটির এ সুপারিশ বাস্তবায়নে তালবাহানা শুরু করে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা সমস্যা তৈরি করে পূর্বের সাজানো কমিটির মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ চালানোর চেষ্টা করে বিএডিসির ওই কর্মকর্তারা।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, সাজানো কমিটির সভাপতি ও ম্যানেজার দু’জনই সেনা সদস্য। সরকারি চাকরির কারণে তারা এলাকায় থাকেন না। নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি ও ম্যানেজারকে সেচ মৌসুমে স্কীম পরিচালনার স্বার্থে সর্বক্ষণ এলাকায় থাকতে হবে। এটি জানা সত্বেও বিএডিসি স্কীম পরিচালনায় তাদেরকে জড়িত রেখে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। একপক্ষকে আদালতে পাঠিয়ে নিজেদের দুস্কর্ম আড়াল করতে চাইছেন।
নবগঠিত স্কীম ম্যানেজার আরফান আলী জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে সাজানো সেচ কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন তারা। উপজেলা সেচ কমিটির সুপারিশ মোতাবেক স্কীম পরিচালনায় নতুন কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে বিএডিসি প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠে নামায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মীর ফারুক আহমাদ জানান, চাকরিরত দুই সেনা সদস্যের তত্ত্ব¡াবধানে সাজানো স্কীম পরিচালনা কমিটি নিয়ে প্রকৃত চাষীরা প্রশ্ন তোলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চাষীদের অংশগ্রহনে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তিনি ওই বৈধ কমিটি নিয়ে কাজ করার জন্য বিএডিসিকে বলেছেন। কিন্তু বিএডিসি সাজানো কমিটি বহাল রেখে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারকে মাঠে নামিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছেন।
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিএডিসির উপ-সহকারি প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম জানান, বিএডিসির বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সঠিক নয়। উপজেলা চেয়ারম্যানের পাঠানো কমিটি গ্রহন করে সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা চলছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno