প্রথম পাতা / অর্থনীতি /
টাঙ্গাইলে সোনালী আঁশের সুদিন ফিরছে
By দৃষ্টি টিভি on ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ৩:৫৭ অপরাহ্ন / no comments
বুলবুল মল্লিক:
টাঙ্গাইলে চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষি বিভাগের লক্ষমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। সোনালী আঁশ ও রূপালী কাঠি ভালো দামে বিক্রি হওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন বুনছে কৃষকরা। পাট ও পাটপণ্যের বাজার ধরে রাখতে পলিথিনের বস্তা শতভাগ পরিহারের পাশাপাশি দেশের সকল পাটকল চালু ও বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়ার দাবি করেছেন কৃষকরা।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় জেলায় প্রতিবছর সোনালী আঁশের চাষ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৩০ হাজার ৬৯০ বেল পাট উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। চলতি বছর পাট আবাদের লক্ষমাত্রা ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ধরা হয়েছিল। জেলার কৃষকরা লক্ষমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেছে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৫২ হাজার ৫৫৮ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছর জেলায় ৬ হাজার ২০০ জন কৃষককে এক কেজি করে পাটের বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে।
এবার পাট ও পাটখড়ি বা সোনালী আঁশ ও রূপালী কাঠির বাজার দরও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি মণ পাট সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাট বা সোনালী আঁশ বিক্রি করে একদিকে কৃষক টাকা পাচ্ছে, অন্যদিকে পাটের কাঠি বা রূপালী কাঠি জ্বালানি ও ঘরের বেড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে। রূপালী কাঠির বাজার দরও আশানুরূপ।
সরেজমিন জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলায়ই পাটের আবাদ হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা পাট জাগ দেওয়া, পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। বেশিরভাগ জমির পাটই কাটা শেষ হয়েছে। এর অধিকাংশই জাগ দেওয়াও হয়ে গেছে। অনেকে পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। কেউবা পাটকাঠি বা শোলার আঁটি বেঁধে রোদে শুকাচ্ছেন। কেউ আবার পাট ভাঁজ করে রোদে মেলে দিচ্ছেন।
জেলার পাট চাষিরা জানায়- টাঙ্গাইল জেলায় দেশি, তোষা, কেনাফ, রবি-১ ও ভারতীয় বঙ্গবীর জাতের পাট সব চেয়ে বেশি আবাদ হয়। কৃষি অফিস থেকে প্রতিবছর পাটের বীজ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। তবে কৃষি বিভাগের দেওয়া বীজগুলো সময় মতো চাষিদের কাছে পৌঁছায় না। ফলে পাটের আবাদ ব্যাহত হয়। সময় মতো পাট বীজ হাতে পেলে জেলায় পাটের আবাদ আরও বেশি হবে।
পাটচাষিরা জানায়, চলতি মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টিপাতের অভাবে পাটের আবাদে কিছুটা সমস্যা হলেও মৌসুমের শেষ দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় পাটের আবাদ বেড়েছে। এছাড়া নিবিড় পরিচর্যা এবং পাট ও কৃষি অফিসের পরামর্শের কারণে পাট আবাদে তেমন কোনো রোগবালাই দেখা দেয়নি। বাজারে এবার পাটের দাম ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে ওঠেছে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পয়লা গ্রামের পাট চাষি মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি এবার ২৫ শতাংশ জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ৫০০ টাকা মজুরির ১৫জন শ্রমিক লেগেছে। এতে তিনি প্রায় ৬ মণ পাট পাবেন। পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। বাজারে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকায়। এছাড়া একশ’ আটির পাটকাঠি বা রূপালীকাঠি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।
দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের আগ দেউলী গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, এ বছর তিনি চার বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় সাত মণের মতো ফলন হয়েছে। চার বিঘা জমির পাট তিন হাজার ৪০০ টাকা মন হারে বিক্রি করে ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। চার বিঘা জমির পাট আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এতে তার প্রায় ৫৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
অপর কৃষক ছানোয়ার হোসেন জানান, তিনি মূলত বর্গাচাষি। তিনি ১০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে পাট চাষ করেছিলেন। এতে তিন মণ পাট পেয়েছিলেন। প্রথমে ক্ষেতের বাছ পাটগুলো দুই হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। পরের সবল পাট তিন হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন।
আগ দেউলী গ্রামের কৃষক রমজান আলী জানান, পাট আবাদের প্রথম দিকে বৃষ্টি না থাকায় তিনি সেচ দিয়ে পাট বপণ করেন। যে পাটগুলোর বীজ বপন করেছিলেন সেগুলো চার হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছেন। পরে কিছু পাট তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। আরও কিছু পাট কাটা বাকি রয়েছে। পাটের ফলন ও দামে তিনি অনেক খুশি।
দেলদুয়ার উপজেলার ছিলিমপুর হাটের পাট ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, তারা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনে দেশের বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে বিক্রি করেন। প্রতি শুক্রবার ছিলিমপুর হাটে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনা হয়। হাটের দিনে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মণ পাট কেনাবেচা হয়। এ বছর তিন হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে পাট কিনছেন। মণে ৮০ থেকে ১০০ টাকা লাভে বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে তারা বিক্রি করে থাকেন।
জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান খান জানান, পাট অধিদপ্তর থেকে চলতি বছর জেলার ১২টি উপজেলার ৩৬ হাজার কৃষককে এক কেজি পাট বীজ ও ১২ কেজি করে সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও তালিকাভুক্ত ৯০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন জানান, পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পাট চাষে ঝুঁকছে। পাট চাষ করে কৃষক এখন লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করতে সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। দেশে আবার সোনালী আঁশের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
মন্তব্য করুন
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরমুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহীম মিয়ার দাফন সম্পন্ন
-
মওলানা ভাসানীর জীবনী পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
-
পাহারা দিয়ে উৎসব আনন্দময় হয়না :: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
-
কালিহাতীতে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা বৈষম্যের শিকার!
-
টাঙ্গাইলে বাস-মিনিবাস মালিকদের আমানতের কুপন ফেরত
-
টাঙ্গাইলে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত
-
জেলা সদর মসজিদ ও ইসলামী পাঠাগার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির পরিচিতি সভা
-
টাঙ্গাইলে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত