দৃষ্টি নিউজ:
দীর্ঘ একযুগ পর আগামী ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যেই সংগঠনটির এই সম্মেলনকে ঘিরে পদ-প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে তাঁতী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান সবচেয়ে দুর্বল বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তারা জানান, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের উপস্থিতি দেখা গেলেও, সে রকমভাবে দেখা যায় না তাঁতী লীগের অংশগ্রহণ। এমনকি সংগঠনের সম্মেলন উপলক্ষে প্রস্তুতি বৈঠকগুলোতেও নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ তেমন দেখা যাচ্ছে না। এরপরও অভিযোগ উঠেছে-পেশাজীবী এ সংগঠনে পেশাজীবী না হয়েও নেতৃত্বে আসার জন্য জোর লবিং করছেন অন্য পেশার লোকজন।
গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে তাঁতী লীগের সভাপতি হতে নিজের ইচ্ছার কথা জানান দিয়েছেন দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান গ্রæপ ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এশিয়ান টিভির চেয়ারম্যান হারুন-উর-রশীদ। হারুন ছাড়াও শীর্ষ দুই পদে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণাকারী অন্যরাও এ পেশা সংশ্লিষ্ট নয় বলে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দাবি। তাঁতী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, যারা সংগঠন সংশ্লিষ্ট নন আজকে তারাই নানা কর্মসূচিতে নিজেদের চেহারা দেখাচ্ছেন। আবার তাঁতী লীগের নেতৃত্ব পেতে অনেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্যানেলও ঘোষণা করেছেন।
সম্মেলন উপলক্ষে গত মঙ্গলবার(১৪ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে তাঁতী লীগ সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে নেতৃত্বের প্যানেল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত প্যানেলে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন। ওই প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের নাম ঘোষণা হয়।
অতীতে আওয়ামী লীগের কোনো সহযোগী সংগঠনকে এভাবে নেতৃত্বের জন্য প্যানেল ঘোষণা করতে দেখা যায়নি। কাউন্সিলেই নাম প্রস্তাব ও তাদের সমর্থনের মধ্য দিয়েই গঠিত হয় কমিটি। এভাবে প্যানেল ঘোষণার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের প্রশ্নে মোশাররফ বলেন, নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা আগে থেকে প্যানেল ঘোষণা করেছি। এদিকে সভাপতি পদ প্রত্যাশী অন্যদের মধ্যে সাধনা দাশগুপ্তা ও কামরুল ইসলাম বিটু রয়েছেন। আর সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে জোড় লবিং করছেন মাহবুবুর রহমান খাঁন ওরফে খান মাহবুব। তবে বার বার দল পাল্টানো মাহবুবকে নিয়ে চলছে ব্যাপক বিতর্ক। সম্মেলন ঘিরে কোনো প্যানেল ঘোষণার নিয়ম না থাকলেও বিটু ও মাহবুবও ‘জয়বাংলা পরিষদ’ নামে আরেকটি প্যানেল ঘোষণা করেছেন। সম্মেলনের আগে এভাবে প্যানেল ঘোষণা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভও বিরাজ করছে।
এসব বিষয়ে তাঁতী লীগের আহ্বায়ক এনাজুর রহমান বলেন, এরকমভাবে প্যানেল ঘোষণার কোনো নজির আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনে নেই। তাঁতী লীগেও আমি দেখিনি। হারুন ও মোশাররফ তাঁতী লীগের বর্তমান কমিটিতে না থাকলেও সংগঠনের সাধারণ সদস্য হিসেবে রয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, তাদের দু’জনকে আগে তাঁতী লীগের কোনো সভা-সমাবেশে দেখা যায়নি। ইদানীং দেখা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের পেশাভিত্তিক কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে ওই পেশার বহির্ভূত ব্যক্তিরা রয়েছেন, যার সমালোচনা করছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কৃষক লীগের এক সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, যারা তাঁতি নয়, তারা এখন তাঁতী লীগে, যারা কৃষক নয়, তারা এখন কৃষক লীগে, আর শ্রমিক নয় এমন অনেকেই শ্রমিক নেতা।
এদিকে তাঁতী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘনিয়ে আসায় পদ পেতে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন সহযোগী সংগঠনটির নেতারা। তারা বলছেন, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তি নেতৃত্বে আসবে বলে তাদের প্রত্যাশা। রাতারাতি দল পাল্টানো কোন হাইব্রিড নেতাকে নেতৃত্বে দেখতে চান না তারা। এ বিষয়ে তারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
১৯৬৫ সালে গঠনের পর থেকে তাঁতী লীগের সঙ্গে যুক্ত এনাজুর। তখন পূর্ব পাকিস্তান তাঁতী সমিতির নামে যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ তাঁতী সমিতি হয়ে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ তাঁতী লীগ নাম হয়। ২০০৪ সালের ৭ অগাস্ট ১৬ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর তার নেতৃত্বেই চলছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির কার্যক্রম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী খান মাহবুব ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে রূপগঞ্জের সোনালি পেপার মিলের সিবিএ সভাপতি মনোনীত হন। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে তিনি জাতীয় পার্টি ছেড়ে ক্ষতাসীন দল বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তারাবো পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। পরে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর ২০০৯ সালের ২৩ আগস্ট তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলার তারাবো পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়। যে পদ থেকে তিনি এখনও পদত্যাগ করেননি। ওই চিঠিটিও এখন তাঁতী লীগ নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সম্মেলনের এই তারিখ চূড়ান্ত করা হয়। এদিকে সম্মেলন উপলক্ষে তাঁতী লীগ কাজ শুরু করেছে। ১৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই চারটি সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর তাঁতী লীগ ১৬ সদস্যবিশিষ্ট প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেছে।