আজ- শনিবার | ২২ মার্চ, ২০২৫
৮ চৈত্র, ১৪৩১ | সকাল ৮:২২
২২ মার্চ, ২০২৫
৮ চৈত্র, ১৪৩১
২২ মার্চ, ২০২৫, ৮ চৈত্র, ১৪৩১

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির দ্বন্দ্ব

দৃষ্টি রিপোর্ট:

বাংলাদেশে যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়, তখন আন্দোলনে থাকা সবগুলো দলের মধ্যে একধরনের ঐক্য স্পষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এরপর সময় যত গড়িয়েছে, দলগুলোও তাদের নিজস্ব রাজনীতি আর কৌশল নিয়ে হাজির হয়েছে। বিএনপি শুরু থেকেই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলে আসছে। জামায়াতে ইসলামী চাইছে, সংস্কার শেষে ‘যৌক্তিক সময়ের’ মধ্যে নির্বাচন। অন্য দলগুলোও কমবেশি এর মধ্যেই ঘুরপাক খেয়েছে। তবে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বলছে, গণপরিষদ কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা। যেটাকে বিএনপি দেখছে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে।

 

 

 

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ঢাকায় সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গণপরিষদের দাবির সমালোচনা করেন।

 

 

 

 

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যারা গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি সামনে আনছে, হয় তারা বোঝে না অথবা বুঝেও আমাদের এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরো দীর্ঘায়িত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র আছে।’ বিএনপি ইতোমধ্যেই সেকেন্ড রিপাবলিক, নতুন সংবিধান কিংবা গণপরিষদের দাবির বিরোধিতা করেছে। দলটি মনে করছে, এর ফলে নির্বাচন পিছিয়ে যাবে।

 

 

 

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে কেউ যেকোনো কথা বলতেই পারে। কিন্তু সেটা পূরণের জন্য অবশ্যই জনগণের ম্যান্ডেট লাগবে।

 

 

 

 

 

তিনি বলেন, ‘এখানে ইলেকশন পেছানোর তো কোনো সুযোগ নেই। অলরেডি ডিসেম্বর ইজ টু লেইট। একেক দিন গণতন্ত্রহীন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এ রকম একটা অবস্থা তো এক দিনও থাকার প্রয়োজন নেই।

 

 

 

 

 

 

 

আমাদের অনেকের অনেক চাহিদা থাকতে পারে। সে চাহিদা পূরণের সময় তো এটা না। সে চাহিদা পূরণ করতে হলে আপনাকে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসতে হবে। সংসদের কাজই হচ্ছে, আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে সংবিধান সংশোধন। এটার জন্য নতুন কিছু আবিষ্কার করার প্রয়োজন নেই তো।’

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রথমে যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়, সেটা ছিল সংস্কারকে ঘিরে। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে -এমন প্রশ্নের মধ্যে দ্রুত নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক চাপ তৈরি করে বিএনপি।

 

 

 

 

 

 

 

 

সরকার অবশ্য ইতিমধ্যেই আগামী ডিসেম্বরকে ধরে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমার কথা জানিয়েছে। এর মধ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টির গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি ঘিরে রাজনীতিতে আবারও আলোচনা। কিন্তু গণপরিষদ নির্বাচন এবং এর মাধ্যমে নতুন সংবিধান তৈরির মতো সময়সাপেক্ষ দাবি তুলে ধরে ছাত্রদের দল এনসিপি কি আসলে নির্বাচন পেছাতে চায়?

 

 

 

 

 

 

এমন প্রশ্নে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল আসলাম আদিব অবশ্য তা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচন চেয়ে আমরা আসলে জাতীয় নির্বাচন পেছাতে চেয়েছি, এমন ধারণা সঠিক নয়। আমাদের দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ইতিমধ্যেই বলেছেন যে গণপরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে। এটার জন্য কোনো নির্বাচনই পেছাতে হবে না। সরকার প্রস্তুতি নিলে দুটি নির্বাচনই একসঙ্গে ডিসেম্বরে বা জুন মাসে সরকার যখন চাইবে সেটা সম্ভব।’

 

 

 

 

 

 

 

আরিফুল আসলাম আদিব আরও বলেন, ‘এটা একসঙ্গে আমরা এ কারণে চাই, যেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংবিধান পরিবর্তন এবং নতুন সংবিধান করার ম্যান্ডেট পান, একই সঙ্গে তারা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার ম্যান্ডেটও পান।’

 

 

 

 

 

 

 

জামায়াতের পক্ষ থেকেও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, তার দল মনে করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হওয়া দরকার।
কিন্তু কেন- এই প্রশ্নে জামায়াত নেতা পরওয়ার বলেন, ‘এখানে দুটি কারণ আছে।

 

 

 

 

প্রথমটা হচ্ছে, এখন কোনো সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই, পৌরসভায় নেই, উপজেলায় নেই। নিচের স্তরগুলোও নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। উন্নয়ন হচ্ছে না, মানুষ জনদুর্ভোগের প্রতিকারে তো জনপ্রতিনিধিকে পাচ্ছে না। ফলে স্থানীয় নির্বাচনটি দ্রুত দরকার। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা হয়ে যায়, তাহলে সেটা নিরপেক্ষ হবে বলেই আমরা আশা করি।

 

 

 

 

 

 

তা না হলে যেকোনো রাজনৈতিক দলের অধীনেই নির্বাচন হোক না কেন, তারা সেটা কবজা করে নিতে চাইবে। যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পনেরো বা ষোলো বছর আমরা অপেক্ষা করেছি, এখন দুই মাস আগে হলো না পরে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ইলেকশনটা সুষ্ঠু হচ্ছে কি না। এ কারণেই আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা আগে চাই।’

 

 

 

 

 

 

 

 

তবে স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে জাতীয় নির্বাচন পেছাতে হবে বলে জানাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কারণ বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সময়সাপেক্ষ। পাঁচ থেকে ছয় ধাপে এই নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সে ক্ষেত্রে আগামী ডিসেম্বর বা জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করতে হলে এবং এর আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তার তফসিল ঘোষণা করতে হবে এখনই।

 

 

 

 

 

 

 

যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, স্থানীয় নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য তাদের কাছে আসেনি। নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘যদি আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেতে চাই, তাহলে সরকারের প্রস্তুতিটাও লাগবে। একই সঙ্গে লাগবে রাজনৈতিক ঐকমত্য। সব কিছু মিলে যদি বিষয়টি একবিন্দুতে আসে, তখনই কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যাবে।’

 

 

 

 

 

 

 

 

তার মতে, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন ধাপে ধাপে করতে হয়। সেটা করতে গেলে অন্তত এক বছর সময় দরকার হবে। আমরা যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করি, তাহলে জাতীয় নির্বাচন অনেক পিছিয়ে যাবে। তখন প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে ডিসেম্বর এবং পরের বছরের জুন নাগাদ যে একটা কথা বলা হয়েছে, সেটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।’

 

 

 

 

 

 

 

 

তবে জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে- প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যকে সম্ভাব্য সময় হিসেবে ধরে নিয়ে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে নির্বাচন কমিশন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্য আমাদের একটা মিনিমাম সময় প্রয়োজন। সেটা আমরা জুনের মধ্যে করে ফেলব। এর মধ্যে আসন বিন্যাস হবে, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়টি চূড়ান্তু হবে, নির্বাচনসামগ্রীর কেনাকাটা হবে। একপর্যায়ে সব যখন হয়ে যাবে, তখন আমরা তফসিল ঘোষণার দিকে যাবো। এখানে ডিসেম্বরটাই আমাদের টার্গেট।’

 

 

 

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা

 

 

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়