আজ- বুধবার | ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
২৯ মাঘ, ১৪৩১ | রাত ৮:২৯
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
২৯ মাঘ, ১৪৩১
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৯ মাঘ, ১৪৩১

পাবনায় সালিশে যুবককে পিটিয়ে মুখে বিষ ঢেলে হত্যার অভিযোগে মামলা

মোবারক বিশ্বাস, পাবনা:

পাবনা সদর উপজেলায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পরও বাড়িতে রেখে সংসার করার অভিযোগে সালিশি বৈঠকে আব্দুল আলীম নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ২০ মাস পর আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বাবা জিল্লুর রহমান বাদি হয়ে পাবনা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পাবনা সদর থানা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মামলায় হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর কৌশল হিসেবে যুবকের মুখে গ্যাস ট্যাবলেট পুরে দেওয়া এবং মৃত্যু নিবন্ধন জালিয়াতি করে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও করা হয়েছে। অভিযুক্ত দাপুনিয়া ইউনিয়নের সদস্য ও ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. শহিদুল প্রামাণিক বর্তমানে আত্মগোপণে রয়েছেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

জানাগেছে, পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের পাঁচুরিয়া গ্রামের মো. জিল্লুর রহমানের ছেলে আব্দুল আলীম(২৮) প্রায় ৯ বছর আগে একই উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের রুপপুর বাঙ্গাবড়িয়া গ্রামের মো. কাশেম বিশ^াসের মেয়ে মুর্শিদাকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

দাম্পত্য কলহের জের ধরে আলীম গোপণে কাজী অফিসের মাধ্যমে তার স্ত্রী মুর্শিদাকে তালাক দেয়। তালাকের কাগজ মুর্শিদার বাবার বাড়িতে গেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শহিদুল প্রামাণিক সহ তার আত্মীয়-স্বজনরা আব্দুল আলীমের বাড়িতে উপস্থিত হন। স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কারণ ও তালাকের পরে স্ত্রীকে কেন তার বাড়িতে রেখে সংসার করছে- তা জানতে চান। এক পর্যায়ে ওই অভিযোগে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শহিদুল প্রামাণিক গত বছরের ৯ মার্চ সন্ধ্যায় আব্দুল আলীমের বাড়িতে একটি সালিশি বৈঠকের আয়োজন করেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দাপুনিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. শহিদুল প্রাপ্রামাণিক ও ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা মহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে সালিশি বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সালিশে কথাবার্তা চলাকালে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য শহিদ ও মহিদুল ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুল আলীমকে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করে। আলীমের অবস্থা গুরুত্বর হলে ইউপি সদস্য মো. শহিদ প্রামাণিক ব্যাথানাশক ট্যাবলেটের নাম করে কীটনাশক জাতীয় গ্যাস ট্যাবলেট মুখে পুরে দেন। এতে তার অবস্থা আরও গুরুতর হয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পরে আলীমের বাবা-মা তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ডাক্তার তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর(রেফার্ড) করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আলীমের মৃত্যু হয়। সে সময় ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. শহিদ প্রামাণিকের ভয়ে কেউ মামলা বা প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ইউপি সদস্য শহিদ প্রামাণিক আত্মগোপণে চলে গেলে ঘটনাটি স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে প্রচার হতে থাকে। নিহতের স্ত্রী মুর্শিদার চাচা ইউনুস বিশ্বাস, স্থানীয় কাশেম বিশ্বাসের ছেলে নাজমুলসহ আত্মীয়-স্বজনরা আব্দুল আলীমকে পিটিয়ে আহত করে মুখে কীটনাশক জাতীয় বিষ দিয়ে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এদিকে, নিহত আব্দুল আলীমের মেয়ে মোছা. আমেনা খাতুন আখি জানান, তার বাবাকে ইউপি সদস্য শহিদ ও মহিদুল কিল ঘুষি ও লাথি মারে। পরে তার বাবাকে চেয়ার দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে তার বাবা পাশের চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে পড়ে যায়। তারপর তার দাদা ও দাদি হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার বাবাকে আঘাত করার সময় সে ও তার মা বারান্দায় বসেছিলেন।

 

 

 

 

 

দাপুনিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা মহিদুল ইসলাম সালিশি বৈঠকে উত্তেজনার কথা স্বীকার করলেও পিটিয়ে হত্যা করার বিষয়টি এড়িয়ে যান।

 

 

 

 

 

 

 

দাপুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক জানান, আব্দুল আলীম কীটনাশক জাতীয় গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে কেউ তার কাছে কোন অভিযোগ করেনি।

 

 

 

আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর শহিদ মেম্বার আত্মগোপনে রয়েছে। মৃত্যু নিবন্ধন জালিয়াতির কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে চেয়ারম্যানের (তার) স্বাক্ষর জালিয়াতি করে থাকলে তৎকালিন ইউপি সচিব মো. মিজানুর ও ইউপি সদস্য শহিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান চেয়ারম্যান।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পাবনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, সেই সময়ে তিনি ওসির দায়িত্বে ছিলেন না। তবে মামলাটি তদন্ত করেন এসআই জাহিদ। মেডিকেল রিপোর্টে গ্যাস ট্যাবলেট জনিত মৃত্যুর কারণ থাকায়, মামলাটিতে কাউকে অভিযুক্ত না করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

 

 

 

 

 

 

মৃত্যু সনদ জালিয়াতির বিষয়ে অবগত বা চেয়ারম্যান অভিযোগ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রশাসনের দায়িত্বরত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফ আহমেদ জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়