আজ- শুক্রবার | ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
২৪ মাঘ, ১৪৩১ | সকাল ৮:২০
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
২৪ মাঘ, ১৪৩১
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৪ মাঘ, ১৪৩১

পালাও পালাও, আগুন আগুন……

বুলবুল মল্লিক:

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

‘পালাও পালাও, আগুন, আগুন…. ধর ধর…’ চারদিকে চিৎকার, চেচাঁমেচি, হট্টগোল। দিকবিদিক ছুটছে লোকজন, দাউ দাউ করে জ্বলছে প্যান্ডেল, দৌঁড়ে পালাচ্ছে ওরা, কেউ আছড়ে পড়ে লাল মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, আবার ওঠে দৌঁড়াচ্ছে। মঙ্গলবার(৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এভাইে মুহুর্তে জনশূণ্য হয়ে গেল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রাম নামক পাহাড়িয়া এলাকার মলংচালা বাঈদ। আগুনের লেলিহান শিখার শো শো শব্দও এক সময় থেমে যায়। কিছুক্ষণ আগেও যেখানে কলরবমুখর ছিল মুহুর্তে সেখানে নেমে আসে শুনসান নিরবতা। ঘটনাটি এখন ঘাটাইলে ‘টক অব দ্যা টাউন’।
জানাগেছে, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল শহীদ সালাহ উদ্দিন সেনানিবাস সীমানা ঘেষে উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ডেলুটিয়া ও ঘোড়ামারা গ্রামের মাঝখানে মলংচালা বাঈদে দুই সপ্তাহ যাবত তাবু টাঙিয়ে জুয়ার আসর বসানো হয়েছিল। টাঙ্গাইলে জুয়াড়ি হিসেবে সমধিক পরিচিত মিয়া চাঁন ওই জুয়ার আসর পরিচালনা করছিল। আসরে ওয়ানটেন, ফরগুটি, চড়কী, তিন তাস ইত্যাদি নামীয় জুয়া খেলা চালানো হতো। ন্যূনতম পাঁচ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতিজন প্রতিবার জুয়ায় ধরার নিয়মে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলার সেরা সেরা জুয়াড়িরা ওই আসরে যোগ দিত। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্জন পাহাড়িয়া এলাকা জুয়াড়িদের আনাগোনায় মুখর ছিল। প্রতিদিন জুয়াড়িদের বহনকারী অর্ধশতাধিক মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি চালিত অটোরিকশার লাইন এলাকাবাসীর চোখ খুলে দেয়। তারা ওই জুয়ার আসর বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাদের কাছে ঘুরে ব্যর্থ হয়। পরে ওই এলাকার ডেলুটিয়া, ধাইড়াবাড়ী, শিবের পাড়া, হরিণাচালা, ঘোড়ামারা গ্রামের লোকজন একাত্ন হয়ে মঙ্গলবার(৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ওই জুয়ার আসরের তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং কয়েকজন জুয়াড়িকে পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়। মামলায় হয়রানি হওয়ার ভয়ে রাতেই ভস্মিভূত জুয়ার প্যান্ডেল(তাঁবু) সরিয়ে ঝেড়ে পরিস্কার করা হয় আগুনের ছাই।dristy-dir-96
প্রত্যক্ষদর্শী ধাইড়াবাড়ী গ্রামের হেকিম মিয়া জানান, ‘ওরে বাবারে আগুন, ভাই একটু পানি দ্যান’ বলে হাঁপাতে হাঁপাতে হারুন নামে এক জুয়াড়ি তার বাড়িতে আশ্রয় নেন। মানবতার খাতিরে তিনি হারুনকে আশ্রয় দেন। প্রায় একই কথা বলেন, মলংচালার রশিদ।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হোসেন আলী জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে মিয়া চান জুয়ার আসর বসিয়ে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছিল। গভীর রাত পর্যন্ত জুয়ার আসরের মাইকের উচ্চশব্দে এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছিল। ইউএনও এবং ওসি সহ স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। অসহ্য হয়ে আশপাশের এলাকার সচেতন মানুষ একাত্ন হয়ে জুয়ার আসর উচ্ছেদ করেছে।
দেওপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা জানান, তিনি নিজে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসিকে বিস্তারিত জানানোর পরও কোন ব্যবস্থাই নেন নি। পরে এলাকাবাসী একত্র হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জুয়ার আসর উচ্ছেদ ও তাঁবুটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মিয়া চাঁন জানান, ওই জুয়ার আসরটি তাঁর ছিলনা। স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ওই আসর চালাতো। এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে মঙ্গলবার রাতে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) মো. আমীর হোসেন জানান, জুয়ার আসর চালানো বা মঙ্গলবার রাতে ওই আসর পুড়িয়ে দেয়ার কথা তারা জানেন না।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীন আবুল কাশেম জানান, স্থানীয় আওয়ামীলীগের জনৈক নেতার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ঘোড়ামারার মলংচালা বাঈদে জুয়ার আসর বসছে। আমরা পুলিশ পাঠালে খবর পেয়ে জুয়াড়িরা অন্যত্র চলে যায়। এভাবে আমার একাধিকবার পুলিশ পাঠিয়েছি, জুয়াড়িরা কিভাবে যেন খবর পেয়ে স্থান পরিবর্তন করে বা আত্নগোপণে চলে যায়। পরে তারা যদি অঅবারও জুয়ার আসর বসাতে চেষ্টা করে আমরা ভ্রাম্যমান আদালত পাঠিয়ে বন্ধ করে দেব।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়