আজ- বৃহস্পতিবার | ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
৩০ মাঘ, ১৪৩১ | রাত ১১:৪৫
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
৩০ মাঘ, ১৪৩১
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৩০ মাঘ, ১৪৩১

ফুলঝাড়ুতে শুভ্র শত পরিবার

দৃষ্টি নিউজ:

dristy-pic-6টাঙ্গাইলে পাহাড়ি বন-বাদারে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা পাহাড়ি উলুফুলে তৈরি ফুলঝাড়ুতে শতাধিক পরিবারের ভাগ্য বদলে গেছে। উলুফুলের ঝাড়ু তৈরি করে এখন তারা স্বাবলম্বী। উলুফুলের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি দেখে জেলার পাহাড়ি নদী ঘেষা জমিতে দেদার চাষ করা হচ্ছে এই ফুলগাছ। এ ফুল দিয়ে তৈরি ঝাড়ু ব্যাপকভাবে ঘরকন্যার কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় এটাকে অনেকে ফুলঝাড়ুও বলে থাকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ও গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নে পাহাড়ি উলুফুলের তৈরি ‘ফুলঝাড়ু’ কারখানা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফলে, জেলার চরাঞ্চল এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। স্বাবলম্বী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এসব কারখানার সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিকরা। কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ও গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নে ১৫-১৬টি ফুলঝাড়ু কারখানা রয়েছে। নারীপুরুষ মিলে ৫০০-৬০০ শ্রমিক এসব কারখানায় কাজ করেন।  খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এ উলুফুলের আদি উৎপত্তি মূলতঃ নদী বিধৌত বরিশাল জেলায়। দেশে প্রথম ফুলঝাড়ু পেশার প্রচলন শুরুও হয় বরিশালে। চাহিদার প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর কারখানা তৈরি হয়েছে। বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিসে রয়েছে ফুলঝাড়ুর বিশেষ কদর। বাঁশ দিয়ে তৈরি ঝাড়ুর নিত্যদিনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে জায়গা দখল করে নিয়েছে এই ফুলঝাড়ু। পাহাড়ি লাল মাটিতে এর আবাদ ভাল হয় বলে এক সময় তা রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ইছাখালি, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালি সহ বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে উলুফুল চাষ ছড়িয়ে পড়ে। dristy-pic-7বরিশাল জেলায় এক সময় উলুফুল প্রকৃতিগতভাবে আপনা-আপনি জন্মাতো। কিন্তু বর্তমানে উলুফুল  বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। উলুফুল মহাজনের কাছ থেকে ক্রয় করে কারখানার মালিকরা নিয়ে আসে। এক ট্রাক উলুফুলের দাম পড়ে ৭-৮ লাখ টাকা। কারখানায় উলুফুল প্রক্রিয়াজাত করে ‘ফুলঝাড়ু’ হিসেবে বাজারজাত করা হয়।
কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে অধিকাংশ কারখানা রয়েছে, পাশাপাশি যমুনা পূর্ব থানার দক্ষিণে বঙ্গবন্ধুসেতু ঘেষে আরো দুইটি কারখানা রয়েছে। প্রতিদিন এসব এলাকা থেকে পাইকারি ও হকারের মাধ্যমে ১২-১৩ হাজার পিস ফুলঝাড়ু খুচরা বাজারজাত করা হয়ে থাকে। প্রতিটি ফুলঝাড়ু ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।  ঢাকা সহ উত্তরবঙ্গের প্রায় জেলায় ফুলঝাড়ুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
রহিমা বেগম নামে এক ফুলঝাড়ু শ্রমিক বলেন, প্রতিটি ঝাড়ু তৈরি করে এক টাকা করে পান। বাড়ির কাজ করার পর প্রতিদিন ১০০-১২০ টাকা বাড়তি আয় হয়।
জব্বার নামে অপর শ্রমিক জানান, সারাদিনে ৪০০-৫০০ ফুলঝাড়ু তৈরি করে ৪-৫শ’ টাকা মুজুরি পান। তিনি ও তার স্ত্রী ৫ বছর ধরে এই কাজের সাথে জড়িত। সংসারে আমাদের দুইটি সন্তান আছে। গৃহস্তালীর খরচ মিটিয়ে সন্তানদের স্কুল-কলেজের খরচও সহজেই মিটাতে পারেন।
ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বলেন, উলুফুল ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে আসি। তারপর ঝাড়ু, পাইপ, কস্টটেপ, ফিতা, ক্যাংক ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে ব্যবহার উপযোগী হিসেবে তৈরি করে বিক্রি করা হয়। ৫ বছর যাবত এই ব্যবসার সাথে জড়িত আছি। ফুলঝাড়ুতে খুব বেশি লাভ নেই। তারপরও স্বচ্ছলভাবে জীবন ধারণ করা যায়।
ব্যবসায়ী সোলায়মান হোসেন জানান, ২০০১ সাল থেকে ফুলঝাড়ু ব্যবসা সাথে জড়িত আছি। ৭ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে এই ব্যবসায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিনোয়োগ আছে। সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে আমরা আরোও ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারতাম পাশাপাশি অনেক বেশি শ্রমিক কাজ করতে পারতো।
দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের কয়েক’শ পরিবার এই ফুলঝাড়ু শিল্পের উপর নির্ভরশীল এবং এ কাজে যুক্ত থেকে তাঁরা এখন স্বাবলম্বী। সরকারের সুদৃষ্টি থাকলে এই শিল্পের প্রসার আরো ব্যাপক ভাবে বিস্তর লাভ করতো। এতে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হত। বেকারত্ব কমে যেতো।
কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, নদী পাড়ের মানুষগুলো সেই সুদুুর দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকা থেকে উলুফুল এনে ব্যবহারের উপযোগী করে বাজারে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। সরকার ফুলঝাড়ু–কে কুটির শিল্পের মর্যাদা দিয়ে সহজ শর্তে বা সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করলে হাজার হাজার পরিবার এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবে। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতো।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়