আজ- বৃহস্পতিবার | ২৭ মার্চ, ২০২৫
১৩ চৈত্র, ১৪৩১ | দুপুর ১:৫১
২৭ মার্চ, ২০২৫
১৩ চৈত্র, ১৪৩১
২৭ মার্চ, ২০২৫, ১৩ চৈত্র, ১৪৩১

ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক- আজ বসন্ত

বুলবুল মল্লিক:

dristy-d-21‘আকাশে আজ কোন চরণের আসা যাওয়া/বাতাসে আজ কোন পরশের লাগে হাওয়া/অনেক দিনের বিদায়বেলার ব্যাকুল বাণী/আজ উদাসীর বাঁশির সুরে কে দেয় আনি/… বকুলতলায় কাজ ভোলা সেই কোন দুপুরে/যেসব কথা ভাসিয়ে দিলেম গানের সুরে/ব্যথায় ভরে ফিরে আসে সে গান-গাওয়া।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়ত এমন দিনকে ঘিরেই হৃদয়ের সবটুকু সুর তুলেছিলেন তানপুরাতে। যে সুর ছড়িয়ে পড়েছিল বাঙালি প্রেমিক মনে, ‘তোমার অশোকে কিংশুকে/অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে।’

আজ হৃদয়ে সুখের অসুখ লাগার দিন। মনে অকারণে রঙ লাগার দিন। কি জানি কিসের লাগি প্রাণ আকুল করার দিন। আজ বসন্ত বরণের প্রথম দিন, পহেলা ফাগুন। তাই শিমুল-অশোকে-পলাশের ঔজ্জ্বল্যে সেজে উঠেছে বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রান্তর। কোকিলের কুহুতানে তরুণ মনে আবেগের বিহ্বলতা ছড়িয়ে ভালোবাসার ডাক ছড়িয়ে দেয়ার সময়, আজ দখিনা দুয়ার খোলা…। ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক- আজ বসন্ত। রক্ত রাঙা ফাগুন আজ। ফাগুন হাওয়ার দোল লেগেছে বাংলার নিসর্গ প্রকৃতিতে। ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে ওঠছে প্রকৃতির সবুজ অঙ্গন। মাঘের শেষ দিক থেকেই গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। শীতে খোলসে ঠুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। মৃদুমন্দা বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে, সত্যি সত্যি সে ঋতুর রাজা। স্বাগত বসন্ত, স্বাগত ঋতুরাজ।

তবে আগুনরাঙা এই ফাগুন অশোক-পলাশ-শিমুলের রঙ শুধু প্রকৃতিতেই উচ্ছ্বাসের রঙ ছড়ায় না, ছড়ায় ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্ত-রঙিন স্মৃতির ওপরও। বায়ান্ন’র ৮ ফাল্গুনের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার মিলেমিশে একাকার। আজ অন্যরকম হয়ে উঠবে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ। পিছিয়ে থাকবে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, চারুকলা ইনস্টিটিউট, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকা। টাঙ্গাইলের ডিসি পার্ক, সোলপার্ক, বিরতি রিসোর্ট, যমুনা ফিউচার পার্কেও দোল লাগবে বসন্তের। মেয়েরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশসহ নানা রকম ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পাজামা আর ফতুয়ায় শাশ্বত বাঙালির সাজে উৎসবের হাওয়ায় ভেসে বেড়াবেন এখান থেকে ওখানে। হৃদয়ে বাজবে কবিগুরুর অমিয় বাণী, মোর বীণা ওঠে কার সুরে বাজি/কোন নবচঞ্চল ছন্দে।’

ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যধন্য আমাদের এই দেশে শীত শেষের রুক্ষপ্রকৃতিতে বসন্তের আগমনে জেগে ওঠে সবুজ আভা। কচি কিশলয় আর ফুলের মেলায় জেগে ওঠে বৃক্ষলতা। মনীষী জন পল রিচার্ড বলেছেন, বসন্তকাল সব জিনিসকেই যৌবনদান করে। প্রাণ খুলে তাই যেন কবির ভাষায় বলা যায়, ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে/এত বাঁশি বাজে/এত পাখি গায়…।’ মানুষের মনোজগতের পালেও নতুন হাওয়া জাগায় বসন্ত। শীতের শেষ গোধূলির আভা রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত গানের আকুতি ছড়ায়, ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/আমার আপনহারা প্রাণ/আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ/তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান।’

বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি অনাদিকাল থেকেই। কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায় আছে বসন্তবন্দনা। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে নানা অনুপ্রাস, উপমা ও অলঙ্কারে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম- বাউল মন থেকে শুরু করে আধুনিককালের কবির মনকেও বারবার দুলিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। হালের বিখ্যাত শিল্পী অনুপম রায় গেয়েছেন তরুণ হৃদয় নিংড়ানো গান, ‘বসন্ত এসে গেছে।’
যানজট, কোলাহল ছাপিয়েও যেটুকু প্রকৃতি খুঁজে পাওয়া যায় নগরে, একেই অতি আপন করে নেন নগরের কর্মব্যস্ত মানুষ। প্রকৃতিবিচ্ছিন্ন মানুষও ফাগুনের প্রথম দিনে গেয়ে ওঠেন ‘বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে/ঘুমন্ত মন তাই জেগেছে’ অথবা ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে।’
সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠন বসন্তবরণ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নিয়েছে। সারাদেশ ভাসবে হলুদ-সবুজের মিলন উৎসবে।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়