আজ- বুধবার | ৯ জুলাই, ২০২৫
২৫ আষাঢ়, ১৪৩২ | সকাল ৬:০৩
৯ জুলাই, ২০২৫
২৫ আষাঢ়, ১৪৩২
৯ জুলাই, ২০২৫, ২৫ আষাঢ়, ১৪৩২

বিশালাকার ‘মানিক’কে নিয়ে বিপাকে উদ্যোক্তা হামিদা!

*বিক্রি নয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চান*

দৃষ্টি নিউজ:

ঈদুল আজহায় অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের বিশালাকার ষাড় ‘মানিক’কে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উদ্যোক্তা হামিদা। ৫৪ মণ ওজনের বিশাল আকৃতির মানিককে গত তিন বছর ধরে কোরবানির হাটে ওঠালেও বিক্রি না হওয়ায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন ওই নারী উদ্যোক্তা। বার বার অবিক্রিত গরুটি এবারের কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার হিসেবে মানিককে দিতে চান তিনি।

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের মেয়ে হামিদা আক্তার। বঙ্গের আলীগড় খ্যাত করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করা হামিদার স্বপ্ন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার।


মনের ভেতরের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে চাকুরি না করে গত ৮ বছর ধরে গরু লালন-পালন শুরু করেন হামিদা আক্তার। গত ৮ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের দুটি গাভী কিনে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাটতে থাকেন তিনি। গাভী থেকে দুটি বাছুর জন্ম নিলে তাদের নাম রাখেন মানিক ও রতন। দুই বছর আগে কোরবানির ঈদে রতনকে বিক্রি করতে পারলেও অবিক্রিত থেকে যায় মানিক।

গত বছর কোরবানির ঈদে মানিকের কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার মানিককে কোরবানির হাটে নিয়ে বিক্রি করতে চান না হামিদা। তিনি এবার মানিককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার হিসেবে দিতে চান। বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নারী উদ্যোক্তা হতে সহযোগিতা চাইবেন বলে জানান।


নারী উদ্যোক্তা হামিদা আক্তার জানান, এর আগে ২০২১ সালে ৩৬ মণ ওজনের মানিকের দাম চেয়েছিলেন ১৪ লাখ টাকা। কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় সেবার বিক্রি করেননি। ২০২২ সালে হাটে না উঠিয়ে বাড়ি থেকে বিক্রি করতে চেয়ে নিরাশ হন। সর্বশেষ ২০২৩ সালে কোরবানির হাট কাঁপিয়েছে তার ৫২ মণের মানিক।

রাজধানীর গাবতলী কোরবানির হাটে ৫২ মণ ওজনের ওই মানিকের দাম চাওয়া হয় ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু সেইবারও কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় মানিককে ফেরত আনা হয়। তবে মানিককে ফেরত আনার পর হামিদার বাড়িতে গিয়ে জনৈক ক্রেতা মানিকের দাম দিতে চান ১০ লাখ টাকা। কিন্তু তাতে তিনি মানিককে বিক্রি করতে রাজি হননি।

এখন সেই মানিককে নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি ও তার পরিবারের লোকজন। প্রতিদিন মানিককে সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে গোসল- সময়মতো খাওয়াতে হয়। গত ৮ বছর ধরে এভাবেই মানিককে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করছেন হামিদা ও তার পরিবার। এবার মানিকের ওজন দাঁড়িয়েছে ৫৪ মণ। বিশালাকার মানিককে কোরবানির হাটে ওঠাতে ভয় পাচ্ছেন- যদি বিক্রি না হয়?


হামিদা আক্তার জানান, তিনি চাকুরি না করে নারী উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গরু দুটি লালন-পালন করেছেন। তার মা মারা গেছে প্রায় ছয় মাস আগে। বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে হামিদার সংসার। দানব আকৃতির ষাঁড়টির প্রতিদিনের খরচ মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এরমধ্যে রতনকে গত বছর(২০২৩) বিক্রি করা হয়েছে। এবার মানিককে তিনি কোরবানির হাটে ওঠাতে চান না।


তিনি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেন বলে তিনি শুনেছেন। তাই দানবাকৃতির মানিককে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে উপহার হিসেবে দিতে চান। বিনিময়ে তিনি কিছু চান না। তবে নারী উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রশানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চাইবেন।


তিনি আরও জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি যোগাযোগের চেষ্টা করছেন- পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী যদি তার মানিককে উপহার হিসেবে গ্রহণ না করেন- তাহলে মানিককে নিয়ে তার কোনো গত্যন্তর নেই। তিনি আর দানবাকৃতির মানিককে লালন-পালন করতে পারবেন না।


নারী উদ্যোক্তা হামিদার বাবা জানান, ছেলে সন্তান না থাকায় ছোটবেলা থেকে মেয়ে হামিদাই তার সব কাজে সহযোগিতা করেছে। হামিদা একদিকে লেখাপড়া করেছে অন্যদিকে তার কাজে হাত লাগিয়েছে। তিনি বৃদ্ধ হওয়ায় এখন নানা অসুখ-বিসুখে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছেন।

প্রায় ছয় মাস আগে হামিদার মা মারা যাওয়ায় মেয়ে হামিদাই সংসারের হাল ধরেছে। তার বাকী দুই মেয়ের একজনকে বিয়ে দিয়েছেন, অন্যজন নার্সিংয়ে পড়ছে। সন্তানদের সুশিক্ষিত করাই তার শেষ ইচ্ছা।


দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শহীদুজ্জামান জানান, বিশাল আকৃতির ওই ষাঁড়টি গত কয়েক বছর ধরে বিক্রি করতে পারছেন না হামিদা। এতে দিন দিন ষাঁড় গরুটির ওজন বাড়ছে। বর্তমানের ওজন প্রায় দুই হাজার একশ’ কেজি। এমন দানবাকৃতির গরু বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়