আজ- শুক্রবার | ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
২৪ মাঘ, ১৪৩১ | সকাল ৬:৫৯
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
২৪ মাঘ, ১৪৩১
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৪ মাঘ, ১৪৩১

মফস্বল সাংবাদিকতা কতটা ঝুঁকির?

দৃষ্টি ডেস্ক:

dristy-d-12
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের সংঘাতের সময় ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন সিরাজগঞ্জের সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল। হঠাৎ করে গুলি এসে জীবন কেড়ে নেবে এমনটা হয়তো তিনি কখনোই ভাবেননি।
তাকে লক্ষ্য করেই গুলি করা হয়েছিল কি না সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। কিন্তু বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় মফস্বলে সাংবাদিকদের টার্গেট করে হত্যা এবং নির্যাতন প্রায়ই ঘটে।
ফেনীর টিপু সুলতানের কথা অনেকেরই হয়তো এখনো মনে আছে। হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল সেটি বেশ বিরল।
তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে ছিল মূল অভিযোগ। তার পর থেকে ফেনীতে আর সাংবাদিকতা করা হয়নি টিপু সুলতানের।
গত ১৪ বছর ধরে তিনি ঢাকায় কাজ করছেন। টিপু সুলতান জানান মফস্বলে সাংবাদিকতা ঢাকার তুলনায় তার কাছে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে হয়। মফস্বলের প্রত্যেকটা সাংবাদিক পরিচিত। সবাই সবাইকে চেনে। ওখানে কোনো সংবাদ হলে তাকে টার্গেট করা সহজ। ঢাকায় সেটা সম্ভব না। মফস্বলের সাংবাদিক প্রতি মুহূর্তে, প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
বেশ কিছু অঞ্চল আছে যেখানে সাংবাদিকতা বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ঝুঁকি তৈরি হয় নানা দিক থেকে। এর মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অন্যতম।
চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, সরকারি প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন সময় মফস্বল সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে।
পাশাপাশি মফস্বলে একজন সাংবাদিক তার পেশাগত কারণে যখন কোনো প্রতিকূলতার মাঝে পড়ে তখন তার নিয়োগকারী সংবাদমাধ্যম তাকে সহায়তার জন্য কতটা এগিয়ে আসে সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে।
যশোরের সাংবাদিক সাজেদ রহমানের বড় ভাই শামসুর রহমানকে ১৭ বছর আগে তার অফিসে গুলি করে হত্যা করা হয়। সাজেদ রহমানও দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করছেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু বড় পত্রিকা আছে যারা সাংবাদিকরা সমস্যায় পড়লে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ দেখে। মামলায় পড়লে কর্তৃপক্ষ সেটা দেখে এবং সহযোগিতা করে। কিন্তু আমরা দেখেছি অধিকাংশ পত্রিকা কোনো সহযোগিতা করে না।’
জেলা পর্যায়ে যেসব সাংবাদিকরা কাজ করছেন তাদের অনেকেরই প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে কোনো নিয়োগপত্র নেই। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম জেলা প্রতিনিধিদের কোনো মাসিক বেতন দেয় না।
অনেক জায়গায় রাজনৈতিক মতাদর্শকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের মাঝেও রয়েছে তীব্র বিভেদ।
মফস্বল সাংবাদিকদের অনেকেই বলছেন এসব কারণে অনেক সাংবাদিক সাংবাদিকতার বাইরেও অন্য ক্ষেত্রে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। ফলে তার কাজের ঝুঁকিও বাড়ছে।
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন ইউনিয়নগুলোও রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বিভক্ত। এই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো অধিকার রক্ষায় কতটা কাজ করতে পারছে?
বাংলাদেশে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভুঁইয়া মনে করেন নানা ‘সীমাবদ্ধতা’ সত্ত্বেও সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো সবসময় নির্যাতিত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র এবং মাসিক বেতনের নিশ্চয়তা না থাকলেও খবর পাঠানোর চাপ ঠিকই থাকছে মফস্বল সাংবাদিকদের ওপর।
ফলে খবরের পেছনে যখন সাংবাদিক ছুটছেন তখন অনেক সময় নিজের নিরাপত্তার দিকে নজর দেবার সুযোগ থাকে না তাদের। পরিস্থিতি মোকাবেলার কোন প্রশিক্ষণও নেই তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শামীম রেজা মনে করেন, যেসব জায়গায় বা পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা সহিংসতা কিংবা অন্যকোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন, সেসব জায়গায় সাংবাদিকদের নিজস্ব কিছু প্রস্তুতি থাকা উচিত।
তিনি বলেন আমাদের একজন স্থানীয় সাংবাদিক হয়তো লেখার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন কিন্তু পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে এবং কীভাবে ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে হবে, সে প্রশিক্ষণ তার নেই।
বিশ্লেষক এবং সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয়রা বলছেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে টেলিভিশন, পত্রিকা এবং অনলাইনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়লেও মফস্বল সাংবাদিকদের স্বার্থ উপেক্ষিতই রয়ে গেছে।
শীঘ্রই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে- এমন আশাও করেছন না মফস্বল সাংবাদিকরা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়