বিখ্যাত মারাকানায় ঢুকে তাঁর চোখেমুখে শুধুই বিস্ময়ই খেলা করে গেল। কোথায় এসে দাঁড়ালেন! জীবনে তো কখনো ভাবেননি ১৯৫০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সেই দুঃখের স্মৃতিবিজড়িত স্টেডিয়ামে একদিন যাবেন, ছবি তুলবেন। মাহফিজুর রহমান সাগর একেবারে আপ্লুত। রিও ডি জেনিরোর গেমস পল্লি থেকে আজ প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর কণ্ঠে রোমাঞ্চ খেলা করে, ‘ব্রাজিলের জন্য ওই হারটা ছিল সারাজীবনের কষ্ট। আর আমার সারা জীবনে এটি হবে সবার কাছে গল্প করার উপলক্ষ।’
রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দলের বাকি ছয় সদস্যের সঙ্গে মাহফিজুরও ছিলেন। গতবার লন্ডন অলিম্পিকে এই সাঁতারুর হাতেই ছিল বাংলাদেশের পতাকা। এবার গর্বের সেই লাল-সবুজ পতাকা বইলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। নিজে পতাকা বহন করতে পারেননি বলে এতটুকু কষ্ট নেই মাহফিজুরের। বরং সিদ্দিকুরকে নিয়ে মুগ্ধ মাহফিজুর বলছেন,‘সিদ্দিক ভাইয়ের হাতে পতাকাটা দারুণ লাগছিল। ওটা তাঁর হাতেই মানিয়েছে ভালো। আমার খুব ভালো লেগেছে, যখন দেখলাম সিদ্দিক ভাই পতাকা দুলিয়ে মার্চ পাস্টে হেঁটে যাচ্ছেন। সঙ্গে হেঁটে গেলাম আমরা সবাই।’
বহু বর্ণের এমন মহামিলনের মঞ্চে আসা যাওয়ার ওই সময়টা বাংলাদেশের এই সাঁতারু কখনোই ভুলবেন না। ভুলবেন না শেষ কয়েক মিনিটের আতশবাজির কথা। সব গেমসেরই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ থাকে এই আতশবাজি। লন্ডন অলিম্পিকে মাহফিজুর স্টেডিয়ামে বসেই সেটি উপভোগ করেছেন। তবে ‘ফুটবলের দেশের’ এই অলিম্পিকে আতশবাজিটা তাঁর কাছে লেগেছে অন্যরকম,‘ শেষ কয়েক মিনিটে মনে হলো রঙিন এক দুনিয়ায় ঢুকে গেলাম। আর শেষের ত্রিশ সেকেন্ড ছাড়িয়ে গেছে অন্য সবকিছুকেই। ওই মুহূর্তটা মনে হয়েছে, রাত নয়, রিওতে বোধ হয় ঝলমলে রোদ!’
মাহফিজুরের রাতটি কেটেছে স্বপ্নের মতো। গেমস পল্লিতে এসে দেখেন গলফার সিদ্দিকুরও স্বপ্নের ঘোরে আছেন। দুজনই আবার রুমমেট। অনেক গল্প করলেন, অভিজ্ঞতা বিনিময় করলেন একে অন্যের সঙ্গে। রিও থেকে মাহফিজুর ফোনে দিয়ে যান সেসব বর্ণনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়া-আসার সময়ে গেমস পল্লিতে শত শত গাড়ির সারি তাঁর মনে গেঁথে আছে। তাই আলাদা করে বললেন,‘ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে হাত নাড়া, সবার শুভেচ্ছা গ্রহণ করা এসব আছেই, তবে গেমস ভিলেজে নিচে নামার পর খেলোয়াড়দের নেওয়ার জন্য গাড়ির যে সারি দেখলাম এও তো বিরাট এক অভিজ্ঞতা।’