আজ- বুধবার | ২৬ মার্চ, ২০২৫
১২ চৈত্র, ১৪৩১ | বিকাল ৫:২৩
২৬ মার্চ, ২০২৫
১২ চৈত্র, ১৪৩১
২৬ মার্চ, ২০২৫, ১২ চৈত্র, ১৪৩১

লৌহজং নদী তীরবর্তী স্থাপনা ১৫ তারিখে না সরালে ২৯ নভেম্বর উচ্ছেদ!

দৃষ্টি নিউজ:

dristy-pic-fo-21
টাঙ্গাইল শহরের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদীর দু’পাড়ের অবৈধ দাখলদাররা নিজ উদ্যোগে তাদের স্থাপনা ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সরিয়ে না নিলে আগামী ২৯ নভেম্বর উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। মঙ্গলবার(১ নভেম্বর) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কে ‘লৌহজং নদী উদ্ধার’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ ইবনে সাঈদ, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক খ. আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার জহিরুল হক ডিপটি, টাঙ্গাইল প্রেসকাবের সভাপতি জাফর আহাম্মদ প্রমুখ।
সভায় জনপ্রতিনিধি, বীরমুক্তিযোদ্ধা, সকল দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক, সাংবাদিক, পরিবেশবাদী সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে লৌহজং নদীর দুই তীরে বসবাসরত অবৈধ দখলদারদের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়া সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ব্যাপক প্রচার, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়ে নকশা অনুযায়ী নদীর জায়গা পরিমাপ করে লাল পতাকা টাঙানোর ব্যবস্থা গ্রহণ, আগামী ২৯ নভেম্বর সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে লৌহজং নদী উদ্ধার কার্যক্রম শুরু এবং উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষে পর্যায়ক্রমে নদীর দুই তীরে পাড় বাধাই করে সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছ লাগানো ইত্যাদি।
এদিকে, লৌহজং নদীর জন্ম ও প্রবাহ টাঙ্গাইল জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নদীটি পুর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে সরাসরি দক্ষিণে বাঁক নিয়েছে। তারপর আঁকাবাঁকা পথে দেলদুয়ার উপজেলার এলংজানি নদীতে গিয়ে মিশেছে। লৌহজং নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৬ কিমি, প্রস্থ ৪০ মিটার এবং নদী অববাহিকার আয়তন ১০৪ বর্গ কিমি।
টাঙ্গাইল শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এ নদী দখল হয়ে ইতোমধ্যে তার অবয়ব হারিয়েছে। এককালের খরস্রোতা লৌহজং নদী এখন মৃতপ্রায়। নদীর দু’পাশে মাটি ভরাট করে বাড়িঘর, দালানকোঠা নির্মাণ করায় আগের লৌহজং নদীকে এখন আর চেনাই যায়না। অবৈধভাবে দখল হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোন মাথাব্যাথা ছিলনা। এতে আরো বেপরোয়া হয়ে দখলে মত্ত লোকেরা দালানকোঠা নির্মাণে আগ্রাসী হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, লৌহজং নদী এককালে খুব খরস্রোতা ছিল। নদীতে কোন সেতু ছিলনা। পশ্চিম এলাকার লোকদের টাঙ্গাইলে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হত। নৌকা দিয়ে দু’পাড়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক সময় স্রোতের ঘূর্ণিপাকে পড়ে নৌকা ডুবে গেছে। বর্তমান পার্ক বাজারের কাছে ছিল নৌবন্দর। দূরদূরান্ত থেকে স্টীমার, জাহাজ, লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা বাণিজ্যে এ বন্দরে ভীড়তো। এখন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয় একসময় এ নদী দিয়েই চলতো ষ্টীমার, জাহাজ ও বড় বড় নৌকা। ছিল নৌবন্দর। নদীটি সংস্কার না করায় কালের পরিক্রমায় তার নাব্যতা হারিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষাকালের ২-৩ মাস এ নদীতে পানির দেখা মেলে। আর অবশিষ্ট সময় এ নদী শুকনো খা খা করে। আর এর সুযোগ নিয়ে ভূমিদস্যুরা নদীর দু’পাশে মাটি ভরাট করে গড়ে তুলছে বাড়িঘর, দালানকোঠা। ফলে এতে ক্রমেই এটি সরু খালে পরিণত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরেই লৌহজং নদীর অস্তিত্ব বিলীন হওয়া সময়ের অপেক্ষা ছিল মাত্র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নদী, খাল জলাশয় অবৈধ দখলমুক্তকরণ’ নির্দেশনায় টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের উদ্যোগে গত ১০ আগস্ট(বুধবার) লৌহজং নদীর পানি প্রবাহ সৃষ্টি ও অবৈধ দখলমুক্তকরণ কাজের উদ্বোধন করেন, টাঙ্গাইল-৫(সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন। এ সময় জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ছানোয়ারুল হক সহ স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক ও বাস্তবায়ন করতে একাধিকবার উন্মুক্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন আগামী ১৫ ও ২৯ নভেম্বরের দিকে তাকিয়ে আছে জেলাবাসী।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়