আজ- মঙ্গলবার | ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
১২ কার্তিক, ১৪৩২ | রাত ৮:৪৩
২৮ অক্টোবর, ২০২৫
১২ কার্তিক, ১৪৩২
২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১২ কার্তিক, ১৪৩২

অভিভাবকবিহীন এলজিইডিতে উন্নয়ন কাজ স্থবির

দ্রুত বৈষম্যহীন পদায়নের দাবি

বুলবুল মল্লিক:

দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের প্রধান সংস্থা হচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ সংস্থাটি সারাদেশব্যাপী পল্লী ও নগর অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে। গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ, পুরোনো রাস্তা মেরামত, সেতু, কালভার্ট ও হাটবাজার উন্নয়নের কাজ করে এলজিইডি ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেছে। এরই মধ্যে রোববার(২৬ অক্টোবর) থেকে এলজিইডিতে প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার শূন্য রয়েছে। প্রধান প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের চাকরির মেয়াদ শনিবার(২৫ অক্টোবর) শেষ হওয়ায় পদটি শূন্য হয়েছে। ফলে গত তিন দিনেও প্রধান প্রকৌশলী পদে সিনিয়র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীদের মধ্য থেকে বৈষম্যহীনভাবে কাউকে পদায়ন না করায় এলজিইডির সকল কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে এলজিইডির অভ্যন্তরে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

 

 

 

 

 

এলজিইডির অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানায়, জ্যেষ্ঠতম অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম থাকলেও রোববার থেকে পদটি শূন্য করে রাখা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী সংস্থার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাবেদ করিম, কাজী গোলাম মোস্তফা ও মো. শাহানুর। এর পরের তালিকায় রয়েছেন- অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন, শাহ মো. নুরুল ইসলাম ও গৌতম প্রসাদ চৌধুরী। তারা প্রধান প্রকৌশলী পদে পদায়ন পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে এহেন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

জানা যায়, এলজিইডির সার্বিক কর্মকাণ্ড দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের অবহেলার শিকার হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থাটি। ফলে এর কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে ব্যাপক দুর্নীতির খবর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে সংস্থাটিতে ঘুষ ছাড়া নিয়োগ বা পদোন্নতি মেলে না। প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, নির্বাহী প্রকৌশলী, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলীসহ সকল নিয়োগের ক্ষমতা বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হাতে। মন্ত্রণালয়ের ইশারা ছাড়া কোনো ফাইল উঠে-নামে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্যই মূলত ফাইল নড়ে না, নিয়োগ-পদায়ন হচ্ছেনা বলে অভিযোগে প্রকাশ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সূত্রমতে, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর পদটি প্রথম গ্রেডের। ফ্যাসিবাদী হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত এবং দেশ ছেড়ে পলায়নের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কারণে শহর-নগর এবং গ্রাম-বাংলার উন্নয়নের প্রধান প্রতিষ্ঠানটির ছন্দপতন ঘটে। হাসিনা সরকারের পতনের পর সচিব পদমর্যাদার প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তা আলী আকতার অবসরে গেলে কয়েকদিন পদটি শূন্য রেখে গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথকে রুটিন দায়িত্বে প্রধান প্রকৌশলী করা হলেও প্রথম গ্রেডে উন্নীত করা হয়নি।

 

 

 

 

 

গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ অবসরে চলে গেলে উৎকোচের মূল্য বাড়াতে প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার বা পদটি কয়েকদিন শূন্য রাখা হয়। তারপর সিনিয়র তিনজন কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করে গত ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ মিয়াকে চলতি দায়িত্বে প্রধান প্রকৌশলী করা হয়- বৈষম্য ও নিয়ম বহির্ভুততার অনন্য নজির। এ নিয়ে তখন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় এবং টিভির টকশোতে আলোচনার খোরাক জোগায়।

 

 

 

 

 

 

 

সূত্র জানায়, দ্বিতীয় গ্রেডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী (গ্রেড-১) করার নিয়ম থাকলেও এই সংস্থার ইতিহাসের সকল রেকর্ড ও রেওয়াজ ভঙ্গ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে একটি বৈষম্যমূলক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ফেলেছেন। স্ব-বেতনে চলতি দায়িত্ব মানেই পদোন্নতি নয়। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী যদি রুটিন দায়িত্বও দেওয়া হতো, তবুও অভিভাবকশূন্য হতো না সংস্থাটি। এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বতী সরকারের আমলে এমন ঘটনা কর্মরত প্রকৌশলীরা মেনে নিতে পারছেন না।

 

 

 

 

 

 

বর্তমান জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী যিনি প্রাপ্য তাকেই প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু যথাযথ সময়ে সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে রোববার থেকে প্রতিষ্ঠানকে অভিভাবকশূন্য করে রাখার কারণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

 

 

 

 

 

 

 

প্রকাশ, ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো এবং পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে অধিদপ্তরে রূপান্তরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশে এলজিইডির অধীনে সাড়ে ৩ লাখ কিলোমিটার রাস্তা নির্মিত হয়েছে।

 

 

 

 

 

 

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এলজিইডি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করলেও পরবর্তীতে এর কাজের পরিধি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। এলজিইডি স্থানীয় পর্যায়ে অবকাঠামোগত সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে তিনটি সেক্টরে কাজ করে থাকে। এগুলো হচ্ছে- পল্লী উন্নয়ন, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন ও নগর উন্নয়ন। একই সঙ্গে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে কারিগরি সহায়তা প্রদান।

 

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়