আজ- ২৩শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  সকাল ৮:৩৬

আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন

 

:: বীরেন মুখার্জী ::

‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।/ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে \’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই ধারণ করেছিলেন বর্ষা ঋতুকে। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। আর বর্ষা মানেই আবেগ, অনুভূতির জোয়ার। আর বর্ষার মেঘ-বৃষ্টির জোয়ারে ভাসেননি এমন কবি, সাহিত্যিক পাওয়া যায় না। শুধু যে কবি-সাহিত্যিক, তা নয়- সাধারণ মানুষও।


কালীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ বা নির্মলেন্দু গুণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ- কেউই বর্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিনে বর্ষা এক বিপুল বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত। কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জোয়ার আনা বর্ষা ঋতুর প্রথম মাস আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ।


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘বর্ষা-মঙ্গল’ কাব্যে লাবণ্যস্নিগ্ধ রূপবতী বর্ষাকালকে নিয়ে লিখেছেন, ‘ওগো সন্ন্যাসী, কী গান ঘনাল মনে।/গুরু গুরু গুরু নাচের ডমরু/বাজিল ক্ষণে ক্ষণে।/তোমার ললাটে জটিল জটার ভার/নেমে নেমে আজি পড়িছে বারম্বার/বাদল আঁধার মাতাল তোমার হিয়া,/বাঁকা বিদ্যুৎ চোখে উঠে চমকিয়া।’


বর্ষাকাল মানেই মেঘ, বৃষ্টি, প্রেম, নতুন প্রাণ, জেগে ওঠার গান। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ তাই তো বলেছেন, ‘এই জল ভালো লাগে;- বৃষ্টির রুপালি জল কত দিন এসে/ধুয়েছে আমার দেহ- বুলায়ে দিয়েছে চুল- চোখের উপরে/তার শান্ত স্নিগ্ধ হাত রেখে কত খেলিয়াছে,- আবেগের ভরে।’ বর্ষা আমাদের মনকে স্নিগ্ধ করে তোলে। পুরানো জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে আমরাও জেগে উঠি প্রাণচাঞ্চল্যে।


বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায়, তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে শ্যামলে। বর্ষার পানিতে নদীনালা, খালবিল ভরে ওঠে। সেখানে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। তাই বর্ষা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এক পশলা বৃষ্টি যে নতুন মাত্রা নিয়ে আসে জীবনে, তা অন্য কিছুতেই পাওয়া যায় না।


বর্ষায় বাংলার নদনদী পূর্ণ যৌবনা হয়ে ওঠে। নদীর ফেঁপে ওঠা জোয়ারের পানি প্রচুর পলি জমায় মাটিতে, যা নিয়ে আসে শস্যের প্রাচুর্যের খবর। এ সময় বিলে-ঝিলে ফোটে শাপলা-শালুক। হিজল আর কেয়াফুলের অরূপ দৃশ্য মোহিত করে মনকে।


জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে ঋতুর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এ বছর বর্ষা আশার আগে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলেও দীর্ঘদিন খরা ও গরম পোহাতে হয়েছে মানুষকে। এরপরও আজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো বর্ষাকাল।
বর্ষায় ফোটে কদম ফুল, যা বর্ষার রূপকে আরও বাড়িয়ে দেয়। আরও ফোটে কেতকী।

শহরের একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনে বর্ষা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। বৃষ্টি শহরের ধুলোবালিকে বশ করে। তবে বর্ষায় শহরের রাস্তাঘাট অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়, যা মানুষের ভোগান্তি বাড়ায়। অতি বর্ষণে দেখা দেয় নদীভাঙন ও বন্যা।

বাংলার কৃষি ও অর্থনীতি বৃষ্টিনির্ভর। যথাযথ বৃষ্টিপাত ফসল ফলাতে সহায়তা করে। অন্যদিকে অনাবৃষ্টি ও খরায় কৃষি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। তাই বর্ষাকাল আমাদের জীবনে সামগ্রিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno