দৃষ্টি রিপোর্ট:

বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এক অনন্য ও অজেয় রেকর্ডের অধিকারী ছিলেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি যে কটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী হয়েছেন, তার সবকটিতেই বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৮০ বছর বয়সে তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটলেও নির্বাচনী ময়দানে তিনি থেকে গেলেন চির-অপরাজিত।
বেগম জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে তিনি পাঁচটি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং প্রতিবারই সবকটি আসনে বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি তিনটি আসনে লড়ে তিনটিতেই জয়লাভ করেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি বগুড়া-৭, ঢাকা-৫, ঢাকা-৯, ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের মোট পাঁচটি করে আসনে লড়ে অপরাজিত থাকেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ এবং ফেনী-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনটিতেই জয় পান। শুধু জয় নয়, প্রতিটি নির্বাচনেই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে তাঁর ভোটের ব্যবধান ছিল আকাশচুম্বী। মূলত বগুড়া ও ফেনীর আসনগুলোতে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
রাজনৈতিক সাফল্যের পাশাপাশি সরকার প্রধান হিসেবেও তিনি বহু দূরদর্শী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাঁর শাসনামলে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা, ছাত্রীদের উপবৃত্তি এবং শিক্ষা সহায়তা হিসেবে খাদ্য কর্মসূচি চালুর মতো যুগান্তকারী উদ্যোগ নেওয়া হয়। এছাড়াও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছরে উন্নীত করা এবং শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে তিনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনেন।
দীর্ঘদিন লিভার সিরোসিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হলো, তবে নির্বাচনী ময়দানে পরাজয়হীন এক কিংবদন্তি হিসেবেই ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
