আ’লীগ নেতা পিস্তলের ভয় দেখিয়ে প্রথমে যৌন নিগ্রহ চালায়!

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনির পিস্তলের ভয় দেখিয়ে প্রথমে কিশোরীর উপর যৌন নিগ্রহ চালায় এবং ছবি তুলে রাখে। পরে ওই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার যৌন নিগ্রহ করেন। এতে তিনি অন্ত:স্বত্তা হয়ে পড়েন।

টাঙ্গাইল সদর থানায় দায়েরকৃত মামলায় দন্ডবিধির ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে যৌন নিগ্রহের শিকার ওই কিশোরী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার(৬ এপ্রিল) বিকালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেস্কে জান্নাত রিপা ওই কিশোরীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে ফুফুর জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। আদালতের পরিদর্শক তানবীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড়মনির বিরুদ্ধে বুধবার(৫ এপ্রিল) দিনগত রাতভর দেন-দরবার শেষে তিন মাসের অন্ত:স্বত্তা এক কিশোরী(১৭) নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা (নং ৮, তাং-০৫/০৪/২০২৩ইং) দায়ের করেন। মামলায় গোলাম কিবরিয়া বড় মনির স্ত্রী নিগার আফতাবকেও অভিযুক্ত করা হয়। আ’লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বড় মনি টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল গফুরের ছেলে ও টাঙ্গাইল-২(গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির বড় ভাই।

মামলা সূত্রে জানাগেছে, ওই কিশোরীর বাবা ও মা মারা গেছেন। পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে তার ভাইয়ের সাথে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এ কারণে ওই কিশোরী টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া বড় মনির কাছে সহযোগিতা চায়। গোলাম কিবরিয়া বড় মনি সহযোগিতার আশ^াস দিয়ে ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাকে বাসায় ডেকে নেন।

পরে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রস্তাব দেন। ওই কিশোরী তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক যৌন নিগ্রহ করেন এবং মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন। পরে মোবাইল ফোনে তুলে রাখা ছবি দেখিয়ে বার বার ওই কিশোরীকে তানভীর হাসান বড় মনি যৌন নিগ্রহ করেন। বর্তমানে ওই কিশোরী তিন মাসের অন্ত:সত্ত্বা। অন্ত:স্বত্তার বিষয়টি বড় মনিকে জানালে কিশোরীর গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেয়।

সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনি তার শ্বশুরবাড়ি আদালত পাড়ায় জোর করে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেন। এরপরও কিশোরী গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় ওই বাসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে তাকে সেখানে আবারও যৌন নিগ্রহ(ধর্ষণ) করেন।

যৌন নিগ্রহের পর বড় মনির স্ত্রী নিগার আফতাব ওই কিশোরীকে মারপিট করেন। এতে কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ওইদিন রাত ৩টার দিকে তাকে বাসায় পৌঁছে দেন। এরপর থেকেই তাকে নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে বলে মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন।

মামলা দায়ের করার পর বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ওই কিশোরীর শারীরিক(মেডিকেল) পরীক্ষা করা হয়। পরে দন্ডবিধির ২২ ধারায় জবানবন্দি দিতে আদালতে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে কিশোরীর শরীরে যৌন নিগ্রহের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তবে সোয়াপ টেস্ট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে মেয়েটি অন্ত:সত্ত্বা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনি জানান, এ ঘটনাটি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের একজন সংসদ সদস্য প্রার্থী আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য একাত্তর টিভির সহযোগিতায় এ ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। এ ঘটনার সত্যতা পুলিশি তদন্ত ও মেডিকেল রিপোর্টে প্রকাশ পাবে বলে তিনি দাবি করেন।

টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানান, গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে থানায় যৌন নিগ্রহের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন এক কিশোরী। মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনাটি গভীরতর তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে