আজ- শুক্রবার | ২৪ অক্টোবর, ২০২৫
৮ কার্তিক, ১৪৩২ | রাত ৪:০৯
২৪ অক্টোবর, ২০২৫
৮ কার্তিক, ১৪৩২
২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ৮ কার্তিক, ১৪৩২

কোটি টাকার খাট ‘পরি পালং’

দৃষ্টি নিউজ:

কোটি টাকার খাট ‘পরি পালং’

প্রবাদ আছে- শখের তোলা আশি টাকা। অর্থাৎ শখ পূরণ করতে উদ্যোগ নেওয়া বা অর্থ খরচ করতে সংকোচ না করা। এ জন্যই দেখা যায়, শখের বসে বিলাসবহুল গাড়ি, ইয়ট, বাড়ি- এ রকম কত কিছুই না করছে মানুষ! এ রকমই নিজের শখ পূরণ করতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা দিয়ে একটি খাট তৈরি করেছেন খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. নুরুন্নবী। নাম দিয়েছেন পরি পালং খাট।


শখের সেই খাট নিয়ে নুরুন্নবী হাজির হয়েছেন রাজধানীর পূর্বাচলে অনুষ্ঠিত এ বছরের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় (ডিআইটিএফ)। মেলায় ছয় লাখ টাকা দিয়ে একটি স্টল নিয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য তিনি প্রদর্শন করছেন খাটটি। খাটটি বিক্রির জন্য দাম হাঁকিয়েছেন এক কোটি টাকা। কী আছে সেই পরি পালং খাটে, যে কারণে মো. নুরুন্নবী তার দাম এক কোটি টাকা হাঁকিয়েছেন!


দৃষ্টিনন্দন খাটটির চার কোনায় আছে চারটি নারীর অবয়ব। নুরুন্নবী এদের নাম দিয়েছেন ‘কল্পনার পরি’। খাটের বিভিন্ন অংশে এ রকম আরও ১২টি পরি রয়েছে। বড় চার পরির হাতে চারটি প্রজাপতি। এ ছাড়া খাটের বিভিন্ন অংশে আছে বিশেষ নকশা।


ইতোমধ্যে মেলা প্রাঙ্গণে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে খাটটি। যাঁরাই জানছেন, একটিবার দেখার জন্য স্টলের সামনে ভিড় করছেন। তবে দেখার পর খাটটি নিয়ে তাঁদের মধ্যে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।


পেশায় পল্লিচিকিৎসক মো. নুরুন্নবী জানান, নিজের শখ থেকেই প্রথম এ ধরনের খাট বানানোর চিন্তা করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে জেনে আসছি, আগের দিনে রাজা-বাদশাহরা নানা নকশা করা বিলাসি খাটে ঘুমাতেন। আমি তো রাজা-বাদশা নই, তবে এ রকম একটি খাটে ঘুমানোর খুব ইচ্ছা ছিল। ফলে অনেক দিন ধরেই চাইতাম, বিশেষ নকশা করা বিলাসি খাট বানাব।’


২০১৭ সালের শুরুর দিকে নুরুন্নবীর ঘরের জন্য সোফা ও ক্যাবিনেট বানানোর কাজ করতে আসেন স্থানীয় কাঠমিস্ত্রি আবু বকর সিদ্দিক। তাঁর কাজের মান ভালো দেখে নিজের শখের কথা মিস্ত্রিকে জানান নুরুন্নবী। সব শুনে খাটটি বানানো সম্ভব বলে আশ্বাস দেন মিস্ত্রি।


তবে তা সত্ত্বেও মন ঠিক সায় দিচ্ছিল না নুরুন্নবীর। এভাবে প্রায় আড়াই মাস চলে যায়। এর ভেতর মিস্ত্রি আবু বকর বেশ কয়েকবার তাঁর কাছে খাটটি বানানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে সম্মতি দেন নুরুন্নবী। পরে কাঠসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে দেওয়ার পর কাজ শুরু করেন মিস্ত্রি।


নুরুন্নবী জানান, তিন বছর দুই মাস সময় নিয়ে এই খাট বানানো হয়েছে। এ কাজে মিস্ত্রি আবু বকরের সঙ্গে কাজ করেছেন একজন সহকারী ও পাঁচজন বার্নিশ মিস্ত্রি। আর সঙ্গে সব সময়ের জন্য ‘একনিষ্ঠ সহযোগী’ ছিলেন নুরুন্নবী নিজেই। নুরুন্নবী বলেন, ‘যেহেতু সুযোগ ও সামর্থ্য আছে, সেহেতু খাটটি বানানোর সিদ্ধান্ত নিই। মনের কল্পনা থেকে কাগজে এঁকে খাটটির নকশা করি আমি। তারপর মিস্ত্রি সেভাবে নকশা প্রণয়ন করে খাট বানানো শুরু করেন।’


খাট বানানোর জন্য প্রথমে ২০০ ফুট আকারের সেগুন কাঠের গুঁড়ি কেনেন নুরুন্নবী। সেখান থেকে ৮৫ ফুট ভালো মানের কাঠ সংগ্রহ করা হয়- যা দিয়ে পরিখাটটি তৈরি হয় বলে জানান তিনি। মিস্ত্রি আবু বকরকে বেশ দক্ষ বলে দাবি করেন নুরুন্নবী। তিনি বলেন, কাঠমিস্ত্রি আবু বকর দীর্ঘদিন এই পেশায় আছেন। বিশেষ করে নকশা খোদাইয়ে তাঁর পারদর্শিতা আছে।


নানা রকম চ্যালেঞ্জও ছিল সে সময়। যেমন খাটের সব অংশ তৈরির পর এর সংযোজন নিয়ে সমস্যায় পড়েন তাঁরা। কারণ, কোনো কোনো অংশ ঠিকভাবে জোড়া লাগছিল না। সেসব অংশে পুনরায় কাজ করে খাটটি ভালোভাবে সংযোজন করা হয়। ২০২০ সালে দেশে করোনা মহামারি শুরুর কিছুদিন আগে খাটটি তৈরির কাজ শেষ হয় বলে জানান নুরুন্নবী।


তবে খাটটি তৈরির পেছনে আরেকটি উদ্দেশ্যও ছিল। নুরুন্নবী বলেন, ‘আমাদের পার্বত্য অঞ্চল বনজ সম্পদ অনেক সমৃদ্ধ। দেশে-বিদেশে এর খ্যাতি আছে। তবে বনজ কাঠনির্ভর কারুশিল্প খুব একটা বিস্তৃত হয়নি। সে জন্য বিশেষ কিছু করে সবার দৃষ্টি এদিকে আকর্ষণ করাও আমার লক্ষ্য ছিল।’


এবারের বাণিজ্য মেলার চতুর্থ দিন থেকে খাটটি প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দাম ওঠে ৫০ লাখের ঘরে। সব শেষ তথ্যানুসারে, খাটটি কেনার জন্য আটজন গ্রাহক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে তাঁদের সবার প্রস্তাবিত দামই ৬০ লাখ টাকার নিচে। তবে খাটের দাম এক কোটি চাওয়া হলেও কিছুটা কম দামে ছাড়তে রাজি আছেন বলে জানান নুরুন্নবী।


তিনি বলেন, ‘খাটটি তৈরি ও অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫০ লাখের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এই খরচ ওঠার মতো দাম পেলে খাটটি বিক্রি করে দেব।’


কিন্তু খাটটি আদৌ বিক্রি না হলে কী করবেন নুরুন্নবী? এ প্রশ্নের উত্তরে গুইমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক নুরুন্নবী জানান, ‘আশা করছি, কাঙ্ক্ষিত দামে খাটটি বিক্রি করতে পারব। তবে যদি বিক্রি করতে না পারি, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে এটিকে জাদুঘরে রাখার চেষ্টা করব। আর বিক্রি করতে পারলে এর লভ্যাংশের একটি অংশ প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে জমা দেব।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়