আজ- মঙ্গলবার | ১৮ নভেম্বর, ২০২৫
৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | দুপুর ১২:৩০
১৮ নভেম্বর, ২০২৫
৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
১৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

গোপালপুরে ১৭ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মঞ্চে ॥ পুুলিশের দাবি ‘পলাতক’!

দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তালুকদার সুরুজের অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে ১৭ বছরের কারাদন্ড হয়েছে দু’সপ্তাহ আগে। এর আগের এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জামিনে মুক্তি পেয়ে কাগজে-কলমে তিনি ‘পলাতক’ ছিলেন। ফলে রায়ের আগে-পরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অথচ ওই সাজা-পরোয়ানা মাথায় নিয়েই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সহ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে শনিবার (২৫ নভেম্বর) একই মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন সাইফুল! জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় ওই আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।
গোপালপুর থানা সেতুর মোড়ে আয়োজিত সমাবেশে সাজাপ্রাপ্ত সাইফুলকে বক্তৃতা দিতে দেখে বিস্মিত উপজেলাবাসী। ইউএনও দিলরুবা শারমীনের সভাপতিত্বে ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ ইসলাম তালুকদার। সাইফুল ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য দেন, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনি, স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মির্জা হারুন-অর-রশিদ বীরপ্রতীক, গোপালপুর থানার ওসি হাসান আল মামুন, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম আক্তার, গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রকিবুল হক ছানা প্রমুখ।
জানাগেছে, গত ১৫ নভেম্বর টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিঞার আদালত সাইফুল ইসলাম তালুকদারকে অস্ত্র মামলায় ১৭ বছর কারাদন্ড দেন। গত বছরের ৮ এপ্রিল সাইফুলের উপজেলা সদরের নন্দনপুর এলাকার বাসভবনে অভিযান চালায় টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এ সময় সাইফুল পালিয়ের যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে এবং তার কাছ থেকে চার রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল জব্দ করে। পরদিন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আসাদুজ্জামান টিটু বাদি হয়ে গোপালপুর থানায় সাইফুলের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশের অপর এসআই মিজানুর রহমান ওই মামলায় সাইফুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন। গত বছরের ১৬ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে পুলিশ ও আদালতের কাগজপত্রে তিনি ‘পলাতক’ রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি নুরুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, গত বছরের অক্টোবরে সাইফুল পলাতক হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়নি। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই সাইফুল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ড-কর্মসূচি ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে প্রশাসনের কর্তাদের সামনেই অংশ নিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চলছেন তিনি। আদালতের কারাদন্ডের রায়ের প্রতিবাদে অনুসারীদের দিয়ে উপজেলা সদরে একাধিক মিছিল-সমাবেশও করেছেন। সেসব সমাবেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরকেও প্রভাব খাটিয়ে হাজির করিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, সাইফুলের কর্মকান্ডে গোপালপুরে দল ও সরকারের বদনাম হচ্ছে। আইনের প্রতি তার কোনো শ্রদ্ধা নেই। তাকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আমরাও বিব্রত।
সাইফুলের সাজা হওয়ার দিন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, যেহেতু আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেহেতু সাইফুলের আর দলের নেতৃত্বে থাকার সুযোগ নেই। তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
ইউএনও দিলরুবা শারমিনের দাবি, শোভাযাত্রা শেষ করে তিনি স্বাগত বক্তব্য দিয়ে চলে এসেছেন। তাই সাইফুল বক্তব্য দিয়েছেন কি-না তিনি জানেন না।
গোপালপুর থানার ওসি হাসান আল মামুন দাবি করেন, তিনি সাইফুলের কারাদন্ডের রায়ের কোনো কাগজপত্র পাননি। তবে যেহেতু তাকে আদালত ১৭ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন, সেহেতু তার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়াটা মোটেও উচিত হয়নি।
সাইফুল ইসলাম তালুকদার সুরুজের বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়