আজ- ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  রাত ৯:৩৫

টাঙ্গাইলে এনজিওকর্মীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে পাঁচ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোসাল এ্যাডভান্সমেন্ট থ্রু ইউনিটি (সেতু) সহকারী হিসাবরক্ষক মো. হাসান আলী প্রামাণিককে পিটিয়ে সেতু টাওয়ারের ৭ম তলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার অভিযোগে সেতু’র পাঁচ কর্মকর্তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে। নিহত হাসান আলী প্রামাণিক সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার পুঠিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ প্রমাণিকের ছেলে।


গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- সোসাল এ্যাডভান্সমেন্ট থ্রু ইউনিটির(সেতু) নির্বাহী পরিচালক মির্জা সাহাদত হোসেনের ছেলে উপ-পরিচালক (মানব সম্পদ) মির্জা সাকিব হোসেন, উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সহকারী কর্মকর্তা(আইন) শরিফুল ইসলাম, স্টাফ অফিসার রাশেদুল ইসলাম হৃদয় ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার খায়রুল হাসান।


জানা যায়, পাঁচ বছর আগে সেতু এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে যোগদান করেন হাসান। ভালো কাজের জন্য দুই বছর আগে সহকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি ওই পদে জামালপুর সদরের পিয়ারপুর শাখায় কর্মরত ছিলেন। সেতু কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ওই শাখার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপক ও সহকারী হিসাব রক্ষক তিনজনে যোগসাজশ করে সংস্থার প্রায় ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এ ঘটনায় ওই তিনজনকেই ক্লোজ করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সেতুর প্রধান কার্যারয় টাঙ্গাইলের সেতু টাওয়ারে নিয়ে আসা হয়। কর্তৃপক্ষ তাদের অর্থ আত্মসাতের বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। হাসান টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন। শেষে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপককে ছেড়ে দিলেও ব্যবস্থাপক ও হিসাব রক্ষককে ৭ম তলার একটি কক্ষে আটকে রাখেন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাসানের মা-বাবাকে সেতুর প্রধান কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। তার মা বাবার সামনেই হাসানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। টাকা না দিলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করে হাসানের বাবা। হাসানের মা-বাবা সাতদিনের সময় নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। তখন থেকে দুজনকে সেতু টাওয়ারের ৭ম তলায় আটকে রাখা হয়।


শুক্রবার(২০ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে টাঙ্গাইল শহরে অবস্থিত সেতু টাওয়ারে পশ্চিম পাশ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের অভিযোগ সেতু কর্তৃপক্ষ তাকে পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ ভবন থেকে নিচে ফেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালাচ্ছে। পরে শনিবার(২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিহতের মা সুফিয়া বেগম বাদি হয়ে গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।


হাসানের বাবা আব্দুল লতিফ প্রামাণিক অভিযোগ করেন, তার ছেলে মো. হাসান আলী প্রামাণিককে তারা পিটিয়ে মেরে ভবন থেকে ফেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর অপচেষ্টা করছে। ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি ছেলের সাথে কথা বলেছেন। সে তাকে বলেছে কোন টাকা আত্মসাৎ করে নাই। তিনি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। অভাবের সংসার। তাকে শুক্রবার রাতে ফোন করে বলা হয় আপনার ছেলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে। আপনি আসেন। শনিবার রাতে এসে তিনি ছেলের মরদেহ দেখতে পান। হাসানের চার বছরের হিয়া মনি নামে একটি মেয়ে রয়েছে। সে কেন আত্মহত্যা করবে। তিনি প্রশাসনের কাছে এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।


হাসানের ফুফু বাহাতন বেওয়া জানান, এক মাস আগে হাসান বাড়ি গিয়েছিল। বলছিল ফুফু তোমাকে তো কিছুই দিতে পারি নাই। কারণ যে টাকা বেতন পাই খেতেই তা সব ফুরিয়ে যায়। বেশি বেতন পেলে তোমাকে কিছু কিনে দেব। তার সেই হাসান কোনভাবেই মরতে পারে না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তারা এর সুষ্ঠু বিচার চান।


হাসানের ছোট ভাই আবুল হাশেম জানান, তার ভাই অত্যন্ত সততার সঙ্গে চাকুরি করতেন। টাকা আত্মসাৎ হয়ে থাকলে অফিসের অন্য কর্মকর্তারা করেছে। তার ভাই বার বার অস্বীকার করেছে। তারপরও কর্তৃপক্ষ তার ভাইয়ের কোন কথাই শুনেনি। তার ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না- তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।


সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পুর্ণিমাগাতী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য(মেম্বার) আব্দুর রউফ জানান, হাসান অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহারের ছেলে ছিল। তার এই ভাবে মৃত্যু তারা মেনে নিতে পারছেন না।


এদিকে, হাসানের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন টাঙ্গাইল সদর থানার উপ-পরির্দশক(এসআই) আরিফ রব্বানী। তিনি জানান, হাসানের মাথার বাম দিকে ভুরুর উপরে গভীর কাটা ও ফাঁটা ছিল। এছাড়া বাম হাতের কনুইতে চামড়া ছিলা পাওয়া গেছে।


সেতুর উপ-পরিচালক (প্রশাসন) বিমল বাবু জানান, পিয়ারপুর শাখার ম্যানেজার ও সহকারী হিসাব রক্ষক দুইজন মিলে ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় দুজনকে শহরের প্রধান শাখায় সংযুক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা টাকা আত্মাসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। অফিসের নিমাণাধীন সাত তলায় তাদের থাকার জন্য একটি রুম দেওয়া হয়। সেখান থেকে লাফ দিয়ে হাসান আত্মহত্যা করেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।


টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) তানভীর আহমেদ জানান, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ম্যানেজার লিটন ও হাসানকে আটক করে রাখে সেতু কর্তৃপক্ষ। পরে তিনি জানতে পারেন হাসানের মরদেহ সেতু ভবনের পশ্চিম পাশে পাওয়া গেছে।

পুলিশ মরদেহ দেখতে পায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে। পরে ময়না তদন্ত করে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করায় সেতু এনজিও’র পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno