আজ- ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার  রাত ১:১৯

টাঙ্গাইলে এমপির বাসা ও পেট্রোল পাম্পে আগুন ॥ মহাসড়ক অবরোধ, গুলিবিদ্ধ ১৩

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে একদফা দাবিতে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে নগরজালফৈ এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী এবং বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১১ টায় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে কাজী নজরুল স্মরণি সড়ক অবরোধ করে দিনের কর্মসূচি শুরু করে তারা।


পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী এবং অভিভাবক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেয়।


রোববার সকাল ১১টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়। সেখানে রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং ছাত্র-জনতার ঢল নামে। অনেকের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে জমায়েতস্থলে হঠাৎ খবর আসে শহরের বটতলায় দুই ছাত্রীকে মারধর করা হয়েছে। এ খবর পেয়ে জমায়েতের লোকজন শহরের বটতলার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যেতে থাকে।

বিক্ষোভকারীরা বটতলাস্থ বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে সেখানে ভাঙচুর চালায়। সেখানে রাখা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের(ভিপি জোয়াহের) ব্যক্তিগত গাড়িতে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়।


পরে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা সদর রোড হয়ে সিঅ্যান্ডবি রোড দিয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত স্থান থেকে কে বা কারা মিছিলের উপর গুলি চালায়। গুলিতে কয়েকজন জন আহত হয়। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি জঙ্গি আকার ধারন করে। পরে জঙ্গি মিছিলটি পুরাতন বাসস্ট্যান্ড হয়ে থানাপাড়া রোডের দিকে যায়।

বিক্ষোভকারীরা থানাপাড়ায় জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনিরের চারতলা ভবনে হামলা চালিয়ে প্রথমে ব্যাপক ভাঙচুর ও পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ফায়ারসার্ভিসে ফোন করা হলেও তারা আসতে পারেনি। পরে আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের দিকে চলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।


এরপর বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে পুনরায় বাসস্ট্যান্ড হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের দিকে যাওয়ার সময় আবারও অজ্ঞাত স্থান থেকে কে বা কারা গুলি চালায়।

এতেও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ ১৩ আন্দোলনকারীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অত:পর বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের নগরজালফৈ এলাকায় গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।

মিছিলকারীরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ এবং ‘ভুয়া ভুয়া সহ সরকার বিরোধী নানা ধরনের স্লোগান দেয়। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা আশেকপুর এলাকায় এমপি তানভীর হাসান ছোট মনিরের মালিকানাধীন ‘দি টাঙ্গাইল মডেল পাম্প অ্যান্ড ধ্রুব রেস্টুরেণ্ট’ নামীয় পেট্রোল পাম্পে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এদিন দুপুর ২টার পর আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক ছেড়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে শহরের দিকে চলে যাওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।


এদিন বিকাল পৌণে তিনটার দিকে একটি বড় বিক্ষোভ মিছিল আদালত চত্ত্বরের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আদালত চত্ত্বরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ২-৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে। এতে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিলটি পিছু হটে নিরালামোড়ের দিকে যাওয়ার সময় বটতলাস্থ ‘রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও আশ্রমে’ ভাঙচুর চালায়।

এদিকে, আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল ও বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। এদিন বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে কবি নজরুল স্মরণিতে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে তারা টাঙ্গাইল পৌরসভা ভবনের সামনে গিয়ে মুহুর্মুহু স্লোগানের পর তিনতলা পৌরভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর আবার পুরাতন বাসস্ট্যান্ড হয়ে পোস্ট অফিসের সামনে গিয়ে সেখানে রাখা ৮-১০টি মোটরসাইকেল এবং পোস্টঅফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়।


অপরদিকে, এদিন বিকালে মির্জাপুর উপজেলার দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়িতে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। কালিহাতীতে আ’লীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মোল্লা সহ ১৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।


ঘাটাইলে আন্দোলনকারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, শিক্ষা অফিস, কলেজ মোড়ের পুলিশ বক্স, পৌরভবন, ডাকবাংলোতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। উপজেলা আ’লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে আন্দোলনকারীরা অগুন ধরিয়ে দেয়।


টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) মো. শরফুদ্দিন জানান, একটি বিক্ষোভ মিছিল আদালত চত্ত্বরের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ ২-৩টি টিয়ার শেল ছুড়ে মিছিলটি ফিরিয়ে দেয়। অন্য কোথাও পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি। আন্দোলনকারীরা নির্বিঘেœ বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

তবে জনসাধারণের জান-মাল রক্ষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী শহরে টহল দিচ্ছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno