ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন টাঙ্গাইল-৫
বুলবুল মল্লিক:
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে টাঙ্গাইল-৫(সদর) আসনে ব্যাপক প্রচারণা চলছে। বেশ কয়েকজন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ কাপাচ্ছেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায়ের অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। এ আসনে অন্য সব প্রার্থীর চেয়ে প্রচারণায় যোজন যোজন এগিয়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও তৃণমূল বিএনপির প্রিয়মুখ অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। এখানে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন দিতে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে না পারলে দলকে কঠিন মাশুল দিতে হবে বলে মনে করছেন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনে সপ্তম ও ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে প্রতীয়মান হয়- অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এ আসন কোনো একক দলের ঘাঁটি নয়। ওই তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়পার্টি, আওয়ামীলীগ ও বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে। এ আসনে ওই তিনটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক এখনো একই পর্যায়ে রয়েছে।
জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেন, টাঙ্গাইল-৫(সদর) আসনে যে দলের প্রার্থী নির্বাচিত হয় জাতীয় পর্যায়ে সে দলই সরকার গঠন করে- বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে এ চিত্র ফুটে ওঠেছে। বর্তমানে আওয়ামীলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেনা। কিন্তু তাদের বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক রয়েছে। বিএনপি ও জাতীয়পার্টির ভোটও এ আসনে প্রায় সমানে সমান। আগামি নির্বাচনে যদি জাতীয়পার্টি অংশ নেয়- সেক্ষেত্রে বিএনপি প্রার্থীকে জাতীয়পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
তাদের মতে, দলীয় জোয়ারের আশায় বিএনপি যদি ত্যাগী, নিবেদিত ও জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল বা পক্ষপাতিত্বমূলক সিদ্ধান্ত নেয়- তাহলে দলকে খেসারত দিতে হবে।
সরেজমিনে জানা যায়, এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি অর্ধডজন নেতা। তবে দলের মনোনয়ন দৌঁড়ে মাঠপর্যায়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। তারা একত্রে দলীয় কর্মসূচি সহ দলের ইউনিয়ন ও শহর পর্যায়ের নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। ওয়ার্ড পর্যায়ে দুজনই ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক সহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় স্ব স্ব অবস্থান স্পষ্ট করছেন।
দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি অন্য নেতাদের মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু, জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সভাপতি খন্দকার আহমেদুল হক সাতিল, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালেদা পান্নার ছেলে জিয়াউর রহমান (প্লেটো) এবং সব সময়ের প্রার্থী সৈয়দ খালেদ মোস্তফাও প্রচারণায় নেমেছেন।
জেলা সদরের তৃণমূলের বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল ছাত্রাবস্থা থেকে জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন সৈনিক। কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি থেকে জেলা ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে তিল তিল করে বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
জেলা শহরের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক নাজিম, রফিক, ঠান্ডু মিয়া, হযরত আলী, নাজমুল, আজমত, খালেক সহ অনেকেই জানান, তারা টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাসিন্দা। বিএনপি নেতা বলতে তারা ফরহাদ ইকবালকেই বুঝেন। যেকোন বিপদ-আপদে তিনি তাদের পাশে দাঁড়ান। যেকোন সময় তাকে ফোন করে কথা বলা যায়। তিনি অত্যন্ত সদালাপি ও মিশুক প্রকৃতির মানুষ।
সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষক হাছান আলী, আরশেদ মিয়া, আরফান তালুকদার, হারাধন কর্মকার, ঋষিনাথ দেব, নাজিমুদ্দিন, সোলায়মান, শাজাহান সরকার, রুস্তম আলী সহ অনেকেই জানান, রাত-বিতারে বা সব সময় যাকে কাছে পাওয়া যায় তিনি বিএনপি নেতা ফরহাদ ইকবাল। তিনি ছোটবেলা থেকে তাদের সামনে বড় হয়েছেন। চলাঞ্চলের প্রত্যেকটা মানুষ তাকে চিনে-জানে। এলাকার মা-বোনদের মুখে মুখে তার নাম। এলাকায় এলে তিনি মা-বোনদেরও খোঁজখবর নেন। ছোট বাচ্চা ছেলেরাও তার সাথে অনায়াসে কথা বলতে পারে- যেকোন সমস্যা শেয়ার করতে পারে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার কাছে অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। তিনিও তাদেরকে খুব ভালোবাসেন- যেকোন কাজে পাশে দাঁড়ান। এরআগেও তিনি একাধিকবার দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছেন। না পেলেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নিবেদিত হয়ে কাজ করেছেন।
তারা আশা করেন, বিএনপি এবার তার কর্ম ও ত্যাগের মূল্যায় করে দলীয় মনোনয়ন দিবে এবং তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হবেন।
সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নাজমুন্নাহার, আছমা বেগম, ফজিলা আক্তার, আনজুম আরা, রাশেদা আক্তার, কল্পনা বেওয়া, ঝর্ণারাণী দাস, সবিতা রাণী কর্মকার সহ অনেকেই জানান, তারা বিএনপি নেতা ফরহাদ ইকবালকে ভোট দিতে চান। আগামি নির্বাচনে ফরহাদ ইকবাল তাদের এক তরফা সমর্থন পাবে। তিনি সবার ঘরের খবর রাখেন, কেউ কোন সমস্যায় পড়লে নিজ উদ্যোগে তা সমাধানের চেষ্টা করেন। ফরহাদ ইকবালই তাদের প্রার্থী- তাকেই তারা ভোট দিবেন।
তারা জানায়, অন্য এলাকার এক পরগাছা বিএনপির মনোনয়ন চান বলে তারা শুনেছেন। এ বিষয়ে জানান, তারা টাঙ্গাইল সদরের ছেলেকে চান- অন্য কাউকে নয়। যদি সদরের ছেলে মনোনয়ন না পায় তাহলে অন্য যেকোন দলের সদরের ছেলে প্রার্থীকে ভোট দিবেন- তবু কোন অন্য এলাকার প্রার্থীকে নয়।
টাঙ্গাইল-৫(সদর) সংসদীয় আসনে ১২টি ইউনিয়ন ও প্রথম শ্রেণির ১টি পৌরসভা রয়েছে। এখানে মোট ভোটার চার লাখ ৪০ হাজার ২৪জন। এরমধ্যে পুরুষ দুই লাখ ২০ হাজার ৯৭৬জন, নারী ভোটার দুই লাখ ১৯ হাজার ৪৮জন।