আজ- বৃহস্পতিবার | ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
৭ কার্তিক, ১৪৩২ | রাত ৩:০০
২৩ অক্টোবর, ২০২৫
৭ কার্তিক, ১৪৩২
২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ৭ কার্তিক, ১৪৩২

নিরাপত্তার ঘাটতি নিয়ে জমজমাট এসএমই পণ্য মেলা সম্পন্ন

দৃষ্টি নিউজ:

আমি প্রতিদিন সকালে মালামাল এনে স্টল সাজাই, সারাদিন বিক্রি করি, আবার রাতে মেলা শেষ করে মালামাল প্যাকেট করে হোটেলে নিয়ে রাখি। মালামাল স্টলে রাখতে পারি না। কারণ যেভাবে স্টল নির্মাণ করা হয়েছে, এই খোলা স্টলে মাল রাখা সম্ভব না। তাই সারাদিন পরিশ্রমের পর যত কষ্টই হোক, মালামাল হোটেলে নিয়ে রাখি। আমার স্টলে প্রায় চার লাখ টাকার পণ্য আছে। এই পণ্য কি আমি খোলা জায়গায় ফেলে রাখতে পারবো? কথাগুলো বলছিলেন এসএমই মেলায় অংশগ্রহণকারী অর্ক হস্তশিল্পের স্বত্বাধিকারী মাসুমা আক্তার (লিজা)। তিনি আরো বলেন, আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে এই মেলায় তারপরও একটু প্রশান্তি যে, বিকিকিনি ভাল হয়েছে। প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকার উপর বিক্রি করেছি। আমার একদিনের সর্বোচ্চ বিক্রি ৬৫ হাজার টাকা।
মেলায় অংশ নেয়া তাসনিম ইন্টারন্যাশনালের মালিক আখতারুজ্জামান তুষার, এসএম জুট অ্যান্ড সূচি বুটিক সপের মালিক সাহীমা খাতুন, আলিফ ইন্টারন্যাশনাল ফেব্রিক্স অ্যান্ড জুট প্রোডাক্টসের মালিক মোমেনা সুলতানা (সালমা), রুমী ফ্যাশন হাউজ অ্যান্ড বুটিকস্ সেন্টারের মালিক মর্জিনা আক্তার রুমী জানান, দুর্বল অবকাঠামো ও দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের। মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন রকম অভিযোগ থাকলেও নিরাপত্তার বিষয়ে সকলেই একমত।
এসময় নারী উন্নয়ন সংস্থার প্রোগ্রাম ও ফাইন্যান্স কর্মকর্তা ফারজানা খান বলেন, এবছরই প্রথম টাঙ্গাইলে এসএমই পণ্য মেলা অনুষ্ঠিত হল। এজন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা কলাগাছের আঁশ, আনারসের পাতার আঁশ থেকে সুতা তৈরি করে সেই সুতার দিয়ে কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে থাকি। এগুলোর প্রচার ও বাজারজাত করা আমার একার পক্ষে সম্ভব না। তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য এই মেলা যে কত বড় একটা প্রাপ্তি তা বলে বোঝানো যাবে না। মেলায় বিক্রিও ভাল হয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন মেলা শেষে মালামাল গুছিয়ে নিয়ে অফিসে রেখে তারপর বাসায় যেতে হয়। এটি একটি ঝামেলা।
আর পি হ্যান্ডিক্র্যাফটের স্বত্বাধিকারী রুকছানা পারভীন রোজি, এসএম জুট অ্যান্ড সূচি বুটিক সপের মালিক সাহীমা খাতুন, আলিফ ইন্টারন্যাশনাল ফেব্রিক্স অ্যান্ড জুট প্রোডাক্টসের মালিক মোমেনা সুলতানা (সালমা) একই সুরে বলেন, এটা আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা। এই মেলায় অন্যান্য জেলার বড় বড় উদ্যোক্তারা অংশ গ্রহণ করেছে। তাতে আমাদের জেলার ছোট ছোট উদ্যোক্তারা মার খাচ্ছে। তাই আগামি বছর থেকে শুধু জেলার উদ্যোক্তাদের নিয়ে মেলা করার আহ্বান জানাচ্ছি। তারা আরো বলেন, এই মেলায় জেলার ছোট ছোট উদ্যোক্তারা যদি ভাল বিক্রি করতে পারে, তবে তারা আরো উৎসাহিত হবে। কিন্তু বড়দের ভিরে ছোটরা নিজেদের দাঁড় করাতেই ব্যর্থ হচ্ছে। এসময় তারা আরো বলেন, প্রতিদিন মাল টেনে বাসায় নিতে হয়, আবার সকালে এনে সাজাতে হয়। এটা খুবই খারাপ লাগে। কিন্তু যদি মেলা আঙিনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাল হত, স্টলগুলো নিরাপদ হত- তবে আমাদের এই বাড়তি ঝামেলা করতে হত না। আগামিতে স্টলের অবস্থা দেখে মেলায় অংশ গ্রহণ করব।
এবিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নেসার উদ্দিন জুয়েল বলেন, এবারই প্রথম টাঙ্গাইলে এসএমই পণ্য মেলা হলো। কিছু ভুল-ভ্রান্তি ছিল, কিছু অভিযোগ ছিল। সেগুলো আমাদের কাছেও এসেছে, আগামিতে এই সকল ভুল-ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং অভিযোগ যেন না করতে পারে সেভাবেই মেলার আয়োজন করব। এসময় তিনি আরো বলেন, কিছু প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা থাকা সত্ত্বেও জমজমাট হয়েছে টাঙ্গাইলের প্রথম আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা। মানুষ উপভোগ করেছে এই মেলা। এটাই আমাদের প্রাপ্তি।
সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশ (নাসিব) এর সভাপতি নুরুল গণি শোভন। তিনি বলেন, এই প্রথম টাঙ্গাইলে আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলাটি অনুষ্ঠিত হল। আমরা টাঙ্গাইলে এই মেলাটি শুরু করতে পেরেছি। সেখানে কিছু কিছু বিষয়ে কিছু কিছু সমস্যা দেখা গেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে তা সমাধান করেছি। তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কুটির শিল্পের বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বিনিয়োগ। আমি তাদের জন্য জেলার সকল ব্যাংক ম্যানেজার ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভা করেছি। সেখানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাকে আশ্বস্ত করেছে যে, এসএমই প্রজেক্টে উদ্যোক্তাদের মূলধনের অভাব হবে না। প্রত্যেকটি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করবে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি থেকে টাঙ্গাইলে শুরু হয় ৭ দিনব্যাপী আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা। ২৪ জানুয়ারি মেলার শেষ হয়।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়