আজ- শুক্রবার | ১৭ অক্টোবর, ২০২৫
১ কার্তিক, ১৪৩২ | রাত ২:১০
১৭ অক্টোবর, ২০২৫
১ কার্তিক, ১৪৩২
১৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১ কার্তিক, ১৪৩২

প্রমিলা ফুটবলার কৃষ্ণার গ্রামে বিজয় র‌্যালি ও মিষ্টি বিতরণ

দৃষ্টি নিউজ:

নেপালে সাফ ফুটবলের শিরোপা অর্জন ও দুই গোল দেওয়া প্রমিলা ফুটবলার কৃষ্ণা রানী সরকারের নিজ জেলা টাঙ্গাইলে বিজয় র‌্যালি ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসার বন্যা বইছে। আনন্দে ভাসছে জেলার ফুটবল প্রেমিরা।


স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী ফুটবল দল চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জয়ী ও খেলায় তিন গোলের মধ্যে দুই গোল করা প্রমিলা ফুটবলার কৃষ্ণার নিজ গ্রাম টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার উত্তর পাথালিয়া।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় তার মা নমিতা রানী সরকার মেয়ের ক্যারিয়ারের আলোচিত খেলাটি দেখতে পারেননি। বাবা অন্য গ্রামে গিয়ে খেলা দেখেছেন। বোনের ভালো খেলার জন্য একমাত্র ভাই পলাশ সারা দিন ব্রত পালন করেছিলেন। পলাশ ঢাকায় গ্রীন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত। প্রথম বর্ষের এই ছাত্র বলেছেন, দিদির খেলা দেখার জন্য সারাদিন না খেয়ে তিনি ব্রত পালন করেছিলেন।

বিজয়ের পর দিদির সঙ্গে কথা বলে তারপর খাবার খেয়েছেন। তিনি বলেন, দিদি টেনশনে ছিল- আমি তাকে সকালে বলেছি, তুমি টেনশন করোনা; মহান সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে তোমার সেরা খেলাটা খেলার চেষ্টা করবে। এদিকে আমরাও উদ্বিগ্ন ছিলাম ফাইনাল নিয়ে। প্রার্থনা করেছি আমার দিদি যেন ভালো খেলতে পারে। সৃষ্টিকর্তা আমার কথা রেখেছেন। এই আনন্দ কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না।

কৃষ্ণার মা নমিতা রানী সরকার আফসোস করে জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় তিনি খেলা দেখতে পারেন নি। খেলা শেষ হওয়ার পর প্রতিবেশিরা বাড়িতে এসে বিজয়ী হওয়ার কথা জানায়। তিনি কৃষ্ণাসহ দলের সকলের জন্য দেশবাসীর কাছে আশীর্বাদ চান।


পেছনের ইতিহাস টেনে তিনি জানান, তার মেয়ে যখন প্রথমে খেলতে যেত- তখন অনেক কটুকথা সহ্য করতে হয়েছে। তবে এখন মেয়ের সাফল্যে ভালো লাগে। যারা একসময় সমালোচনা করত তারাই এখন প্রশংসা করছে। সমাজ বদলাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনোভাবও। ক্রীড়াক্ষেত্রে মেয়েদের সাফল্যও মানুষ ভীষণ উপভোগ করে।

কৃষ্ণা রানী সরকারের বাবা বাসুদেব সরকার জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় তিনি পাশের গ্রামে গিয়ে খেলা দেখেছেন। মেয়ে যখন দুটি গোল করলো- তখন তার খুব ভাল লাগছিল। এলাকার মানুষও ওই সময় আনন্দসহ গ্রামে বিজয় র‌্যালি বের করে মিষ্টি বিতরণ করেছে। জয়ের পর অনেকেই আনন্দে শুভেচ্ছা জানাতে বাড়িতে আসছে। কৃষ্ণা যেন দেশের জন্য আরও গৌরব বয়ে আনতে পারে- সকলের কাছে সেই আশীর্বাদ চান।


স্থানীয়রা জানায়, একদিকে দেশের বিজয় অপরদিকে গ্রামের মেয়ে কৃষ্ণার দুই গোল, বাধভাঙা আনন্দে তারা আত্মহারা হয়ে যান। মুহুর্তে খুশির জোয়ার নেমে আসে পাথালিয়া গ্রামে। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোররা মেতে উঠে আনন্দে। বের করা হয় র‌্যালি, বিরতরণ করা হয় মিষ্টি। তারা কৃষ্ণার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।


গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ মল্লিক জানান, কৃষ্ণাকে অবশ্যই সংবর্ধনা দেওয়া হবে। কৃষ্ণা শুধু গোপালপুর কিংবা টাঙ্গাইল জেলার নয়, সারা দেশের গর্ব। বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেণ্টের মাধ্যমে তার উত্থান। দেশে ফেরার পর ওকে একটি সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে কৃষ্ণার মাকে রত্নগর্ভা সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।


টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি জানান, কৃষ্ণা নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ওর অর্জনে দেশের মানুষ আজ গর্বিত। ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন সময় ওকে তারা সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন।

সমাজের নানা কুসংস্কার ও জটিলতার কারণে গ্রামের মেয়েরা খেলাধূলায় আসতে চায় না। কৃষ্ণা সেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আজ জাতীয় তারকায় পরিণত হয়েছে। তিনি কৃষ্ণার সাফল্যকে সম্মান জানান। পাশাপাশি গ্রামের মেয়েদের প্রতিভা বিকাশের জন্য সমাজের বিত্তবানসহ সবাইকে সংরক্ষণশীলতা ভেঙে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়