আজ- বুধবার | ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২ আশ্বিন, ১৪৩২ | দুপুর ২:২৩
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২ আশ্বিন, ১৪৩২
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২ আশ্বিন, ১৪৩২

সাথী ফসল হলুদে সুদিনের স্বপ্ন দেখছে কৃষক

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, মধুপুর ও সখীপুর উপজেলায় মশলা জাতীয় ফসল হলুদের চাষ করে সুদিনের স্বপ্ন দেখছে কৃষকরা। অতিবৃষ্টি ও খরা সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে হলুদ চাষিরা তৃপ্তির হাসি হাসবেন। হলুদ চাষ অন্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভজনক। অল্প জমিতে কম খরচে অধিক হলুদ চাষ করা যায়। পাহাড়ি এলাকায় অন্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে হলুদের চাষ হয়ে থাকে। হলুদ চাষে নিয়মিত পরিচর্যার দরকার হয়না। এ ফসলে গরু, ছাগল ও পোকা-মাকড়ের কোনো উপদ্রব নেই, ফসল হানির আশঙ্কাও কম। পরিত্যক্ত জমিতে হলুদের চাষ ভালো হয়। বাজারে মশলা জাতীয় পণ্য হলুদের চাহিদা অনেক, দামও অন্য ফসলের চেয়ে ভাল। এ কারণে ঘাটাইল, মধুপুর ও সখীপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় হলুদের আবাদ দিন দিন বাড়ছে।

 

 

 

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলায় তিন হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৪৫ হেক্টর, বাসাইলে ২০, কালিহাতীতে ৩০, ঘাটাইলে এক হাজার ৪৫৬ হেক্টর, নাগরপুরে ৫০, মির্জাপুরে ১২৫, মধুপুরে ৯৮০, ভূঞাপুরে ১৫, গোপালপুরে ৩৭, সখীপুরে ৩৫০, দেলদুয়ারে ৮০ ও ধনবকাড়ী উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদ করা হয়েছে।

 

 

 

 

 

 

সূত্রমতে, উর্বরতা ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো’আঁশ ও বেলে দো’আঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য ভালো। তবে সবচেয়ে উত্তম দো’আঁশ ও বেলে দো’আঁশ লালমাটি। জেলার ঘাটাইল, মধুপুর ও সখীপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে দো’আঁশ ও বেলে দো’আঁশ লালমাটি অধিক পরিমাণে রয়েছে। ফলে জেলার ওই তিন উপজেলায় মশলা জাতীয় পণ্য হলুদের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

কৃষি বিভাগ জানায়, হলুদ উষ্ণ, অব-উষ্ণ ও আর্র্দ্র জলবায়ুর ফসল। ছায়া, আধোছায়া, বৃষ্টিপাত সমৃদ্ধ পাহাড়ি অঞ্চলে হলুদ জন্মে। তবে প্রখর রোদযুক্ত জায়গায় বেশি কন্দ উৎপন্ন হয়। কম তাপমাত্রায় বা ঠান্ডায় হলুদের বৃদ্ধি কমে যায়। হলুদের স্থানীয় জাতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হরিণপালি, আদাগতি, মহিষবাট, পাটনাই, আড়ানী ইত্যাদি। তবে উচ্চফলনশীল ডিমলা ও সিন্দুরী নামে দুটি জাতের হলুদ রয়েছে। ডিমলা জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় ৩ গুণ এবং সিন্দুরী জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় ২ গুণ ফলন বেশি দেয়। দুটি জাতই লিফ ব্লাইট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বারি হলুদ-৩, বারি হলুদ-৪, বারি হলুদ-৫ জাতের হলুদ চাষ করে কৃষকরা আশানুরূপ ফলন পাচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

কৃষিবিদদের মতে, হলুদকে অনেকসময় ‘মিরাকল হার্ব’ বা অলৌকিক ভেষজ বলা হয়ে থাকে। হলুদ আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি মশলা, রোজকার রান্নায় হলুদ না দিলে রান্নাটাই যেন কেমন অসম্পূর্ণ মনে হয়। মশলা জাতীয় ফসল হলুদ বাঙালি তো বটেই প্রায় গোটা এশিয়ার রান্নাতেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি উপাদান। হলুদে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন সি থাকে এবং কারকিউমিন নামক রাসায়নিক থাকে- যা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মানবকুলকে বাঁচায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁচা হলুদ খেলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে, খাবার ঠিকমতো হজম হয়। মশলা হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও অনেক ধরণের প্রসাধনীর কাজে ও রং শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সরেজমিনে জানা যায়, মধুপুর উপজেলার মধুপুর উপজেলার জয়নাতলী, ভুিটয়া, অরণখোলা, বেরিবাইদ, কুড়াগাছা, মমিনপুর, মির্জাবাড়ি, গাছাবাড়ি এলাকায় হলুদ চাষ হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে এ বছর ৯৮০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ৭৬০ হেক্টর জমিতে হলুদের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ৯ হাজার মেট্রিক টন। লক্ষমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হলুদ উৎপাদন হয়েছিল। কোন প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে এ বছর মধুপুরে প্রায় ৫৮ কোটি টাকার হলুদ বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

 

 

 

 

 

 

 

এ উপজেলার মির্জাবাড়ি ইউনিয়নের ব্রা²ণবাড়ি গ্রামের হলুদ চাষি রেজাউল করিম, আক্তার হোসেন, নজরুল ইসলাম সহ অনেকেই জানান, প্রতি বছরের মত এ বছরও হলুদ রোপন করেছেন। সাথী ফসল হিসেবে অন্য ফসলের সঙ্গে বেশিরভাগ উঁচু জমিতে হলুদ চাষ করেছেন। অন্য ফসলের তুলনায় হলুদ চাষ অনেকাংশে সহজ ও লাভজনক। প্রতি বিঘায় সব মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি বিঘায় ৭০ থেকে ৮০ মন হলুদ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাজার মৃল্য আশানুরূপ পাওয়া গেলে বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভের আশা দেখছেন তারা।

 

 

 

 

 

ভবানীটিকি গ্রামের বাপ্পি জানান, হলুদের কন্দ রোপণের পর পরিপক্ক হতে জাতভেদে ৭ থেকে ১০ মাস সময় লাগে। যখন গাছের নিচের পাতা হলুদ হয়ে আসে এবং গাছটি মরে যেতে শুরু করে তখন ফসল তোলার জন্য প্রস্তুত হয়- যা সাধারণত শীতকালে দেখা যায়। তবে হলুদ চাষে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না। সার ও কীটনাশকও ব্যবহার করতে হয় খুবই কম। প্রতি বিঘা জমি হলুদ চাষের জন্য খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। উৎপাদন ভালো হলে খরচ বাদে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ থাকে।

 

 

 

 

 

 

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা জানান, হলুদ বছরব্যাপী ফসল হওয়ায় সাথী ফসল হিসেবে কৃষকরা এর আবাদ করে থাকে। হলুদে তেমন কোনো রোগবালাই নেই বললেই চলে। ফলে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। হলুদের কন্দ রোপন থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের আবাদ দেখভাল করে থাকেন।

 

 

 

 

 

 

 

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ দুলাল উদ্দিন জানান, জেলার ১২টি উপজেলায় এবার তিন হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে হলুদের আবাদ হয়েছে। জেলার পাহাড়ি অঞ্চল বা উঁচু এলাকায় সাধারণত হলুদ সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হয়। হলুদে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি মশলা জাতীয় পণ্য। কাঁচা হলুদের ন্যূনতম ৪৬টি ভোষজগুণাগুণ রয়েছে। এবার জেলায় হলুদের বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বাজারে দাম ভালো থাকলে কৃষকরা লাভবান হবে।

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়