আজ- মঙ্গলবার | ২৫ নভেম্বর, ২০২৫
১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | রাত ৮:১২
২৫ নভেম্বর, ২০২৫
১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
২৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কালিহাতীর আল-আমিনের বাড়িতে শোকের মাতম

বুলবুল মল্লিক:

সৌদি আরবের জেদ্দায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন বাংলাদেশির মধ্যে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আওলাতৈল গ্রামের আল-আমিনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। এলাকায়ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সরেজমিনে জানা যায়, রেমিটেন্স যোদ্ধা আল-আমিনের মা ফিরোজা খাতুন ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকে শোকে পাথর হয়ে গেছেন। মাঝে মাঝে দু’হাত তুলে বির বির করে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছেন। বাবা ফরহাদ আলী ওরফে ফরকে দু’হাতে বুক চাপরাচ্ছেন আর পাশে যাকে পাচ্ছেন তাকেই জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। সাংবাদিকদের দেখে তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে দ্রুত লাশ এনে দেয়ার দাবি জানান। আল-আমিনের স্ত্রী বিলকিছ বেগম স্বামীর শোকে মূহ্যমান। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।

অতিকষ্টে বিলকিছ বেগমের সাথে কথা বলার সুযোগ হলে প্রথমেই দ্রুত লাশ এনে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এখন তার কী উপায় হবে?’ তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর কিছুদিন ছুটি কাটিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় পুনরায় সৌদি পাড়ি জমান আল-আমিন। বিয়ের পাঁচ বছর হলে আমাদের কোন সন্তানাদি নেই’।

তিনি বলেন, ‘আল-আমিনই ছিল তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। তার বৃদ্ধ বাবা-মা অসুস্থ থাকায় আগামি ১২ ফেব্রুয়ারি তার দেশে ফেরার কথা ছিল। আমাদের তিন লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। তাকে হারিয়ে আমরা খুবই অসহায়। এখন আমাদের কে দেখবে?’

আবেগাপ্লুতকন্ঠে বিলকিছ বেগম আরো বলেন, ‘আমি স্বামীকে আর পাব না, তবে আমার মৃত স্বামীর মরদেহটি শেষবারের মত যেন দেখতে পাই।’ তিনি দ্রুত সৌদিতে নিহত তার স্বামী আল-আমিনের মরদেহটি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

স্থানীয়রা জানায়, আল-আমিন এলাকায় একজন সজ্জ্বন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল। সদালাপী আল-আমিন সবার সাথে ভাল ব্যবহার করত। এমনভাবে আল-আমিন তাদের ছেড়ে পরপারে চলে যাবেন কেউ ভাবতে পারেন নি। আল-আমিনের অকালমৃত্যুতে পরিবারসহ গ্রাম জুড়ে বইছে শোকের ছায়া।

কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের আওলাতৈল গ্রামের ফরহাদ আলী ওরফে ফরকে’র(৬০) একমাত্র ছেলে আল-আমিন(৩১)। তার মেয়ে মমতাজ বেগমকে সখীপুর উপজেলার কচুয়া এলাকায় বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের ঘরে এক নাতি ও দুই নাতনি রয়েছে। একমাত্র ছেলে আল-আমিন ১১ বছর আগে সৌদি আরবে জীবিকার সন্ধানে যান। গত পাঁচ বছর আগে বাড়ি এসে রেমিটেন্স যোদ্ধা আল-আমিন পাশের আউলিয়াবাদ গ্রামের বাবুল মিয়ার মেয়ে বিলকিছ বেগমকে বিয়ে করেন। পরে আবার প্রবাসে চলে যান।

https://youtu.be/b19CrG0cVb0

নাগবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম জানান, ফরহাদ আলী ওরফে ফরকে’র ছেলে আল-আমিন তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। তিনি অতিদ্রুত আল-আমিনের মরদেহ বাড়িতে এনে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সৌদি আরবের জেদ্দায় চার বছর আগে ইয়ামামা কোম্পানীতে গাড়ি চালক হিসেবে যোগ দেন। বুধবার(২৯ জানুয়ারি) দুপুর একটার দিকে জেদ্দার বরিমান মারমা সড়কে ডিউটিরত অবস্থায় তিনি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

এ সময় ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও এর কামাল উদ্দিনের ছেলে শাকিল মিয়া (তার পাসপোর্ট নাম্বার বিসি-০১৮৩০৩০) এবং নরসিংদী জেলার মনোহরদীর উত্তর কাচিকাটা গ্রামের কামাল মিয়ার ছেলে কাওছার মিয়াও একই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়