আজ- মঙ্গলবার | ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫
১৫ পৌষ, ১৪৩২ | দুপুর ২:০৭
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫
১৫ পৌষ, ১৪৩২
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৫ পৌষ, ১৪৩২

সখীপুরের হামিদুল হক বীরপ্রতীক আর নেই

দৃষ্টি নিউজ:


মহান মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর সহকারী বেসামরিক প্রধান ও টাঙ্গাইলের সখীপুরের কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের হামিদুল হক বীর প্রতীক আর নেই। বৃহস্পতিবার(৫ এপ্রিল) ভোরে রাজধানীর ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল লিমিটেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন(ইন্নালিল্লাহি…..রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি চার মেয়ে, এক ছেলে রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভোগছিলেন। সম্প্রতি ‘অর্থাভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না বীর প্রতীক হামিদুল হক’ শীর্ষক একটি সচিত্র প্রতিবেদন দেখে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ বীর প্রতীকের চিকিৎসার দায়িত্বভার নেন। গত ২৭ মার্চ ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হামিদুল হক বীরপ্রতীককে। ২৮ মার্চ হামিদুল হকের শারীরিক পরীক্ষা করা হলে নানা ধরণের রোগ ধরা পড়ে। তার শরীরে ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনীতে সমস্যা, প্রটেস্ট বড় হওয়া, পটাসিয়ামের পরিমাণ কম থাকা, লাঞ্চে পানি জমে ঠান্ডা লাগা, শ্বাস কষ্টজনিত রোগ ও ফুসফুসে ইনফেকশনের সমস্যা ছিল।
গত ১ এপ্রিল হামিদুল হকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে (ইন্টেনসেভ কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। তাকে কৃত্রিম শ্বাসনালী দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ১০মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ১৯৭১ সালের ৫ মার্চ ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন হামিদুল হক। উদ্দেশ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুস সামাদের হলে উঠেন তিনি। আবদুস সামাদ তার বাল্যবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য ৭ মার্চ ভোরে চলে যান রেসকোর্স ময়দানে। খুব কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। হামিদুল হক ১৯৭১ সালে স্থানীয় কচুয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। দেশের অভ্যন্তরে টাঙ্গাইলে গঠিত কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। পাশাপাশি কাদেরিয়া বাহিনীর সহকারী বেসামরিক প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য হামিদুল হককে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৪২২।
দীর্ঘ কর্মময় জীবনে মানুষটি শিক্ষকতা করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন অবলীলায়। দীক্ষিত করেছেন শত মানুষকে। অর্থ-সম্পদের পেছনে ছোটেননি কখনো। চাননি তেমন কিছুই। সবার কাছ থেকে পেয়েছেন সম্মান-শ্রদ্ধা। তাতেই তুষ্ট ছিলেন। ১৯৯০ সালে সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তাঁর বাবার নাম হাবিল উদ্দিন, মা কছিরন নেসা, স্ত্রী রোমেচা বেগম।
এদিকে, বীর প্রতীক হামিদুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ শওকত শিকদার, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিল, সখীপুর প্রেসক্লাব, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়