আজ- বৃহস্পতিবার | ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
৩ আশ্বিন, ১৪৩২ | সকাল ৮:১৪
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
৩ আশ্বিন, ১৪৩২
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩ আশ্বিন, ১৪৩২

কোরবানির চামড়ার দরপতনের নেপথ্যে…

রেজাউল করিম রাজা:

কোরবানির পশুর চামড়া বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর ব্যাপক দরপতন হয়েছে। আকার অনুযায়ী গরুর চামড়া ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেক কোরবানিদাতা আশানুরূপ দাম না পাওয়া পশুর চামড়া বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর লালবাগের পোস্তায় দেশের অন্যতম বড় পাইকারি চামড়ার বাজারে আড়তদার ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

চামড়ার এমন দরপতনের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা একে অপরকে দোষারোপ করেন। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা দোষারোপ করছেন পাইকারি ক্রেতাদের, পাইকারি ক্রেতারা বলছেন আড়তদাররা কম দামে চামড়া ক্রয় করছেন। আড়তদার বলছেন ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন থেকে আমাদের বকেয়া পরিশোধ করেনি। যার ফলে, অর্থ সংকটে চামড়া ক্রয় করতে পারছেন না। সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বলছেন সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমানো হয়েছে।

মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী সোহেল আহমেদ বলেন, আমি ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা দরে প্রায় ৬০ পিস চামড়া কিনেছি। এগুলো পাইকারি ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। এতে আমার প্রায় চার হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দা শাহ-আলম ৪০ বছর ধরে লালবাগের পোস্তায় চামড়া বিক্রি করেন। তিনি বলেন, আমি ১নম্বর গ্রেডের ২৩৩টি গরুর চামড়া ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার কিনেছি। গড়ে প্রতি পিস চামড়া ২০০ টাকা করে দাম দিয়েছে। ফলে গাড়িভাড়া, লেবার খরচসহ আমার ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লোকসান।

হাইড অ্যান্ড স্কিন ডিলার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি নওয়াব হোসেন বলেন, এবার চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। সরকার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করেছে, সেটি ঠিক হয়নি। আমরা প্রতি ফুট লবণ ছাড়া চামড়া ৩০ টাকা দরে কিনেছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি ট্যানারি মালিকরা আমাদের টাকা বাকি রাখেন, পাশাপাশি তারা ব্যাংক ঋণ পান। তাদের সেই টাকা কোথাও যায়? খোঁজ নেওয়া দরকার।

চামড়ার দাম গতকয়েক বছরের তুলনায় অনেক কম স্বীকার করে চামড়া ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি হাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, পুঁজির অভাবে আমরা চামড়া কিনতে পারছি না। তারপরেও বিভিন্ন উৎস থেকে টাকা যোগাড় করে কিনেছি। সরকার নির্ধারিত দামের থেকে প্রতি ফুট আমরা ১০ টাকা কমে চামড়া কিনেছি। কারণ সরকার লবণ চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। টাকা থাকলে চামড়া কেনার প্রতিযোগিতা হয়, ফলে দামও বেড়ে যায়। টাকা না থাকায় কোনো প্রতিযোগিতা নেই। তাই চামড়ার দাম কমেছে।

তিনি আরও বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে শুধুমাত্র পোস্তার ব্যবসায়ীদের ১০০ কোটি বকেয়া রয়েছে। তারা আমাদের ঈদের আগে বকেয়া পরিশোধ করলে এমন পরিস্থিতি হতো না। আমরা প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া না কিনতে পাড়ার কারণে মাঝখান থেকে একটি চক্র টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাবে। ট্যানারি মালিকরা ব্যাংক ঋণ এবং সরকারের কাছ থেকে নানা প্রণোদনা পান। তারপরেও তারা আমাদের টাকা বকেয়া রাখেন। আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে, তারা সব লেনদেন বন্ধ করে দেন। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ একটি টাস্কফোর্স গঠন চামড়া নীতি প্রণয়ন করে এ সমস্যার সমাধান করা হোক।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ট্যানারি মালিকরা সবসময় লবণযুক্ত চামড়া কেনেন। তবে, ঈদের সময় তিন থেকে পাঁচ শতাংশ লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া কেনা হয়।

সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে- এ অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ অভিযোগ তো আজকের না। গত বিশ বছর ধরে একই অভিযোগ করা হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে। ঢাকা শহরে এক লাখ লোক চামড়া কেনেন। এ এক লাখ লোককে কে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? এটা সম্ভব নয়। সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম বাড়ানো-কমানো যায় না।

সূত্র: বাংলানিউজ।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়