আজ- ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার  বিকাল ৪:২৭

বিএনপির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

 

দৃষ্টি নিউজ:

আজ ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সরকারের নানামুখী চাপ, সাংগঠনিক দুর্বলতার টানাপড়েনে প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরে কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে দলটি। দীর্ঘ ১১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলায় জর্জরিত। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওপর ঝুলছে সাজার খড়গ। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা শুরুতে হোঁচট খেলেও এখন তা কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দলটি। নির্বাচনকে সামনে রেখে আগ্রহী প্রার্থী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হচ্ছেন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের অনুসারীদের একমঞ্চে নিয়ে ‘জাতীয়তাবাদী দল’ (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। দলের ৩৯ বছরের ইতিহাসে ৩৫ বছর ধরে একটানা সাংগঠনিক নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। চার বার ক্ষমতায় ও দুই বার বিরোধী দলে থাকা এই দলটি বিভিন্ন সময় নানা বাধাবিপত্তির মুখেও পড়েছে। তবে সংগঠন থেমে থাকেনি, বেড়েছে জনসমর্থনও। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াতে লড়াই করে যাচ্ছে দলটি।
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বাণীতে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রমনার বটমূলে গোড়াপত্তন বিএনপির
ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত রমনা বটমূলেই গোড়াপত্তন হয়েছিল বিএনপির। বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৭৭ সালের জুন মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়া ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগো) দল গঠন করেন। ওই দলের আহ্বায়ক হয়েছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। এরপর জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করে ওই বছর প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন জিয়া। জাগো দল, ন্যাপ (মশিউর রহমান যাদু মিয়া), ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম-আকরর হোসেন), লেবার পার্টি (মতিন) ও মুসলিম লীগ (শাহ আজিজুর রহমান) নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়ার নেতৃত্বে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় যাতে বিচারপতি আবদুস সাত্তার, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, শাহ আজিজুর রহমান, অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এস এ বারী এটি, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল হালিম, জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদ-উল হক, ক্যাপ্টেন (অব.) নুরুল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত, এম সাইফুর রহমান, মওলানা আবদুল মতিন, কর্নেল (অব.) আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, আতাউদ্দিন খান প্রমুখ নেতারা ছিলেন।
১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়। দলের ১১ সদস্যের স্থায়ী কমিটির গঠন করা হয়। মনোনয়ন দেয়া হয় দলের মহাসচিব হিসেবে অধ্যাপক বি. চৌধুরীকে।
এর আগে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের পটভূমিতে ৭ নভেম্বর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। রাষ্ট্রপতি হয়ে প্রথমে তিনি নিজের ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন যা পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া বাণীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বাণীতে তিনি আরও বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের সবার জন্য আনন্দ ও প্রেরণার। ১৯৭৮ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাকশালী একদলীয় দুঃশাসনের জের ধরে সেসময়ে দেশে বিরাজমান চরম জাতীয় সংকটের কারণে যে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল তা পূরণ করতে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপি বিগত ৩৯ বছরে বারবার সবার অংশগ্রহণমূলক জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে এবং দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি ও কল্যাণে কাজ করে গেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের এই প্রিয় দল অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি ৯ বছরের স্বৈরাচারবিরোধী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি রাজপথে আপসহীন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে বিএনপি ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনকালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশসহ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিএনপির বলিষ্ঠ ভূমিকা জনগণ কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে। এই কারণেই বিএনপি দেশবাসীর কাছে এখন সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণ্ন রেখে দেশ ও জনগণের সেবায় বিএনপি আগামী দিনগুলোতেও বলিষ্ঠ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজ দেশে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। ৫ জানুয়ারির তামাশার নির্বাচনের পর গণতন্ত্র এখন মৃতপ্রায়। দেশবিরোধী নানা চুক্তি ও কর্মকা-ের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দেশব্যাপী পথেঘাটে শুধু লাশের মিছিল। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি নিয়ে হাহাকার চারদিকে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশজুড়ে গণহত্যা, গুম, গুপ্তহত্যা, নারী ও শিশদের ওপর পৈশাচিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নিপীড়ন ও নির্যাতনের মহোৎসব চলছে। ঈদুল আজহার প্রাক্কালে একের পর এক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের গুম হওয়ায় চারদিকে ভয় ও আতঙ্ক পরিব্যাপ্ত হয়েছে। দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজমান। জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এবার আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য হারানো ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং বাকব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ জনগণের মানবিক মর্যাদা সুরক্ষা করা।’
অনুরূপ এক বাণীতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভান্যুধায়ী এবং দেশবাসীকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno