আজ- বৃহস্পতিবার | ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
৩ আশ্বিন, ১৪৩২ | সকাল ১১:৪০
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
৩ আশ্বিন, ১৪৩২
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩ আশ্বিন, ১৪৩২

কমিশনে বিএনপির চিঠি :: ‘নতুন সংবিধান মানেই ক্যু, বিপ্লব নয়’

দৃষ্টি রিপোর্ট:

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাংবিধানিক সংস্কার করা সম্ভব নয়- এমনটাই জানিয়েছে বিএনপি। দলটির দাবি, নির্বাচনের পর গঠিত সরকার দুই বছরের মধ্যে সংবিধান সংস্কারের অঙ্গীকার করবে এবং সেই অঙ্গীকারই জুলাই সনদের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনপূর্ব সময়ে যেসব সংস্কারের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারবে।

 

 

 

 

বৃহস্পতিবার(৪ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিত মতামত জমা দেয় বিএনপি। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, সংবিধান সংশোধন সংসদ ছাড়া অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয়। বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে নতুন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হলে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়, বরং ক্যু হিসেবে বিবেচিত হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে গঠিত। তাই তাদের ক্ষমতা সীমিত। এই সরকার সংসদ ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবে না। অন্য কোনো উপায়ে পরিবর্তন হলে তা সারা বিশ্বেই ক্যু হিসেবে গণ্য হবে।”

 

 

 

 

 

 

বিএনপি তাদের মতামতে আরও উল্লেখ করেছে- জুলাই সনদের বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। দলটির মতে, সনদ সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য পেতে পারে না। এটি হবে কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকারনামা। নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনিক ও নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে যে সংস্কার করতে পারে, তা করলেই যথেষ্ট। বাকি কাজ পরবর্তী সরকার করবে।

 

 

 

 

 

চিঠিতে বিএনপি তিনবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে। ড. ইউনূস বলেছেন, “যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হবে, শুধু সেগুলোই জুলাই সনদে থাকবে।” বিএনপি এই অবস্থানকে সমর্থন করে বলেছে, “প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য অত্যন্ত সুচিন্তিত ও বাস্তবসম্মত। বিএনপি তা দ্ব্যর্থহীনভাবে সমর্থন করে।” জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল অবশ্য ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। তাদের দাবি, জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে এবং সাংবিধানিক সংস্কারও নির্বাচনের আগেই কার্যকর করতে হবে। জামায়াত নেতা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, “বাস্তবায়ন ছাড়া সনদে সই করার প্রশ্নই ওঠে না। সনদে যদি আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকে, তবে তা কাগুজে প্রতিশ্রুতি হয়ে যাবে।”

 

 

 

 

 

 

 

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, দলগুলোর ভিন্নমতের কারণে সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। আগে সিদ্ধান্ত ছিল বাস্তবায়ন কৌশল সনদের বাইরে থাকবে। কিন্তু জামায়াতসহ কয়েকটি দল বলেছে, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা না থাকলে তারা সনদে সই করবে না। ফলে কমিশন এখন বাস্তবায়ন পদ্ধতি সনদের অংশ করার দিকে যাচ্ছে।

 

 

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “সব দলের মতামত নেওয়া হয়েছে। এখন তা সমন্বয় করে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে।”

 

 

 

 

 

 

 

বিএনপি বলছে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অটুট রেখেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। তাই এই সরকারের হাতে সাংবিধানিক সংস্কার করার ম্যান্ডেট নেই। বিএনপির ভাষায়- “যদি অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়, তবে তা হবে বিপ্লব নয়, ক্যু।” দলটির মতে, নির্বাচনের আগেই সংবিধান সংশোধন করলে সেটি গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। বরং সংসদে নির্বাচিত সরকারকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। এজন্য বিএনপির প্রস্তাব, জুলাই সনদের মাধ্যমে সব দল অঙ্গীকার করবে- পরবর্তী সরকার দুই বছরের মধ্যে সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়ন করবে।

 

 

 

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির এই অবস্থান নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত করলেও অন্য দলগুলোর দাবি অটুট থাকলে কমিশনের জন্য সমঝোতা টানা কঠিন হবে। বিশেষ করে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন সনদ বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

অন্যদিকে বিএনপি মনে করছে, বাস্তবায়নের বিষয়টি নির্বাচনের আগেই চূড়ান্ত করতে গেলে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করবে। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিএনপি বলছে সংসদ ছাড়া সাংবিধানিক সংস্কার সম্ভব নয়, অন্যদিকে কয়েকটি দল চাইছে নির্বাচনের আগেই আইনি ভিত্তি তৈরি হোক। কমিশনের হাতে সময় খুব বেশি নেই- ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করতে হবে। এই সীমিত সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত সমন্বয় করা নিঃসন্দেহে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়