আজ- ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ৩:৫৮

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ :: দেশে নারী ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

 

দৃষ্টি নিউজ:

অসচেতনতা, সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় না করা ও ডায়াবেটিস আক্রান্তদের নিয়মিত ইনসুলিন ব্যবহারের উদাসীনতায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নারী ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আর অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস অন্ধত্ব, হৃদরোগ, কিডনি নষ্ট, স্ট্রোক ও পুঙ্গত্বের মতো কঠিন রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার(১৪ নভেম্বর) ‘সকল গর্ভ ধারণ হোক পরিকল্পিত’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। বিশ্বের ১৬০টি দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ডায়াবেটিস আক্রান্তেরর সংখ্যা ৭১ লাখেরও বেশি যাদের অর্ধেকই মহিলা। আবার বিশ্বে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে একজন এ রোগে আক্রান্ত যাদের অর্ধেকের কাছেই বিষয়টি অজানা।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) মতে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৪২ কোটি ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ২০ কোটি হলো মহিলা। মূলত রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা, গর্ভকালীন সময়ে জিডিএম সমস্যা ও রক্তে হরমোনের উচ্চমাত্রা বেড়ে যাওয়া। এছাড়া পরিবর্তিত জীবন-যাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মেয়েদের অতিরিক্ত ওজন, প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের বেশি বয়সে সন্তান নেয়া, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকার কারণে এ রোগের বিস্তার ঘটছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকরা জানান, গর্ভ ধারণের পর যদি রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া যায় তবে সে অবস্থাকে জিডিএম বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলে। বর্তমান বিশ্বে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার ১ থেকে ২৮ শতাংশ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২০ জন নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। গর্ভকালীন সময়ে এ রোগ ধরা পড়লে পরবর্তীতে ৫০ ভাগ নারীর টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি থাকে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফাউন্ডেশনের এক তালিকা অনুযায়ী ডায়াবেটিস আক্রান্ত ঝুঁকির মধ্যে থাকা বিশ্বের ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশর অবস্থান সপ্তম।
ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি একে আজাদ খান বলেন, এ রোগটি বিশ্বব্যাপী মহামারির মতো বাড়ছে। এটি সারা জীবনের রোগ যা কখনো সারেনা। রোগটির বিষয়ে মানুষ সচেতন হলেও জ্ঞাত বা অজ্ঞাতভাবে প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ এটিতে আক্রান্ত। এছাড়া নারীদের ওজন ও বয়স বাড়া ও গর্ভধারণকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এজন্য সরকারের সহয়তায় সারাদেশে ৫০টি গর্ভ ধারণ পূর্ব সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। চলতি বছরের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এখানে বিনামূল্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো হবে। এছাড়া সারাদেশে ৪০০ কাজী ও ৩০০ চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা মানুষকে অতিরিক্ত ওজন, ব্লাড প্রেসার, প্রোস্রাবে ইনফেকশন, অ্যামোনিয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়ে সচেতন করতে পারবে। কাজী নব-দম্পতিদের বিয়ের পূর্বে গর্ভবতী মায়েদের অপুষ্টি থাকলে সন্তানদের ভবিষ্যৎ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে সে বিষয়ে সচেতন করবেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়া কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
বারডেম হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার বলেন, এ হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারী ও পুরুষ সমান হলেও আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা পুরুষ রোগীদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তবে বর্তমান সময়ে নারীদের মধ্যে রোগটি বেশি পরিলক্ষিত হওয়ায় গর্ভ ধারণের পূর্বে চেকআপ করে কার্যকর চিকিৎসা নেয়া জরুরি।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির ২০১৫ সালের আরেক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। এছাড়া বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪২ কোটি। এ অবস্থায় রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলে ২০৪০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ৬৪ কোটিতে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিআইএস জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসর) অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মজিদ ভুইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মানব দেহে ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোনের অভাব কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে গেলে রক্তের গ্লুকোজ দেহের বিভিন্ন কোষে প্রয়োজন মতো ঢুকতে পারে না বলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিকেই ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিস প্রধানত টাইপ-১ ও টাইপ-২ এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। ৩০ বছরের কম বয়সীদের টাইপ-১ এর ঝুঁকি বেশি। এ ধরনের রোগীদের দেহে একেবারেই ইনসুলিন তৈরি হয় না। অন্যদিকে দেশে ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ টাইপ-২ রোগী রয়েছে। এ সকল রোগীদের শরীরে ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় অথবা ঘাটতি থাকে।
তিনি আরও বলেন, দেশে অব্যাহত নগরায়ন এর জন্য দায়ী। এতে করে ডায়াবেটিক রোগীর কিডনি হৃদপিন্ড, চোখ, পা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অন্ধত্ব বরণ করছে এক-তৃতীয়াংশ রোগী। আর এটির হাত থেকে মুক্তি পেতে নারীদের গর্ভকালীন সময়ে ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে ডায়াবেটিসের গ্লুকোজ টলারেন্স পরীক্ষা করানো, সন্তান প্রসব পরবর্তী সুষম খাদ্য গ্রহণ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত হাটাচলা করা জরুরি। এছাড়া কিশোরী মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক ও রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি বা পলিসিস্টি ওভারি সিনড্রোম দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno