প্রথম পাতা / অর্থনীতি /
মধুপুর বনের জীববৈচিত্র্য ও উজার রোধে ভূমিকা রাখছে সুফল
By দৃষ্টি টিভি on ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৬:১৯ অপরাহ্ন / no comments
বুলবুল মল্লিক:
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চলের বনজ সম্পদ উজার রোধ ও বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকা এবং বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বন বিভাগের সুফল প্রকল্প।
টেকসই বন ও জীবিকা(সুফল) প্রকল্প মধুপুর বনের ভেতরে বৃক্ষাচ্ছদন বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। রোপনকৃত বৃক্ষে ফুল-ফল ধরতে শুরু করেছে। প্রকল্প এলাকার অতিদরিদ্র ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ সাধারণ জনগোষ্ঠীর জীবনাচারে প্রভাব ফেলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বন ব্যবস্থা শক্তিশালী ও রক্ষিত এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ার আশা করছে বন বিভাগ।
টাঙ্গাইল বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মধুপুর বন এলাকায় মুখপোড়া হনুমান, লালমুখ বানর, মায়া হরিণ, শজারু, বুনো শুকর, মেছো বাঘ, বনবিড়াল, খরগোসসহ ১৯০ প্রজাতির প্রাণি রয়েছে।
তাদের মধ্যে ২১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী- মেঘ হু, মাছরাঙা, খয়ড়া গোছা পেঁচা, ভুতুম পেঁচা, নিম পেঁচা, পানকৌরি, সাদা বক, রাতকানা বক, চিল, কাঠঠোকরা, মায়া ঘুঘু, হুদহুদ, সবুজ সুইচোরা, বনমোরগ ইত্যাদি। ১৪০ প্রজাতির পাখি জাতীয় এবং ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ জাতীয় প্রাণি রয়েছে।
তাদের মধ্যে গুইসাপ, অজগর, তক্ষক, বেজী, গোখরা ও ব্যাঙসহ নানা প্রজাতির উভয়চর প্রাণিও বিদ্যমান। প্রায় একশ’ বছর আগে মধুপুর গড়াঞ্চলে হাতি, বাঘ, চিতা ও ময়ূরেরও বিচরণ ছিল।
তথ্যমতে, ১৮৬৮ থেকে ১৮৭৬ সাল পর্যন্ত মধুপুর গড় থেকে ৪১৩টি হাতি শিকার করা হয়। ১৯৮৮ সালে ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে ভাগ হয়ে টাঙ্গাইল বনবিভাগের সাথে মধুপুরকে যোগ করার পর ওই সময়ে পশু ও বন্যপ্রাণির খাবার উপভোগী গাছ চুরি হয়। এতে বনের ভেতরে থাকা পশু-পাখি ও সরীসৃপ প্রাণির সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
বন সংরক্ষণে বন উজার রোধ ও বন্যপ্রাণির আবাসস্থল উন্নয়ন ও পশুখাদ্য উপযোগী করার জন্য ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মধুপুরের এক হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে ওষুধি সহ পশু-পাখির খাদ্য উপযোগী ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি গাছের চারা রোপন করা হয়।
এরমধ্যে আমলকি, হরিতকি, বহেড়া, বগডুমুর, ডুমুর, কদবেল, মহুয়া, অর্জুন, বন আলু, আমড়া, বন আমড়া, চাপালিশ, জলপাই, শিমুল, বট, ভুতুম, গান্দি গজারী, ডায়না, সিদা, কাইক্যা উল্লেখ্যযোগ্য।
সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ সালে মধুপুর জাতীয় উদ্যানে ২০০ হেক্টর ও দোখলা রেঞ্জ এলাকায় ১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির তিন লাখ গাছের চারা রোপন করা হয়।
২০১৯-২০ সালে জাতীয় উদ্যানে ১৯০ হেক্টর, দোখলা রেঞ্জে ১৩০ হেক্টর ও মধুপুর রেঞ্জের ৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি গাছের চারা রোপন করা হয়।
২০২০-২১ সালে ধলাপাড়া রেঞ্জে ৭০ হেক্টর, হতেয়া রেঞ্জে ২৩৫ হেক্টর, বহেড়াতলী রেঞ্জে ১০৫ হেক্টর, জাতীয় উদ্যানে ১০৫ হেক্টর, দোখলা রেঞ্জে ১৫০ হেক্টর, মধুপুর রেঞ্জে ৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির মোট ১১ লাখ গাছের চারা রোপন করা হয়।
প্রতিটি বাগান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৮ সদস্য বিশিষ্ট ফরেস্ট প্রোটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন কমিটি (এফপিসিসি) গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ফরেস্ট কনভারসেশন ভিলেজ কমিটিও(এফসিবি) গঠন করা হয়।
অন্যদিকে, ৭০০ কমিউনিটি ফরেস্ট ওয়ার্কারকে (সিএফডব্লিউ) ৫ শতাংশ সরল সুদে ৫০ হাজার করে টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে প্রতিমাসে ১২শ’ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
শ্রমিক সর্দার মো. সোলায়মান উদ্দিন জানান, তার নেতৃত্বে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করে। তাদের বেকারত্ব দূরের পাশাপাশি সংসার ভালোই চলছে। বৈশি^ক মহামারী করোনা কর্মহীন হয়ে পড়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীর একটি অংশ সুফল প্রকল্পে কাজ পেয়েছে।
কমিউনিটি ফরেস্ট ওয়ার্কার(সিএফডব্লিউ) আনিসুর রহমান জানান, ২০০৩ সালে তৎকালীন সরকার ঘোষণা দিয়েছিল ‘বনের ভেতর কোন আকাঠা(প্রয়োজন বিহীন কাঠ) গাছ থাকবে না। তারপর থেকে বন থেকে আকাঠা গাছ পাচার হতে থাকে।
এতে বন্যপ্রাণিদের খাবারের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় তারা লোকালয়ে গিয়ে পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি বাগানসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা শুরু করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন বন্যপ্রাণি নিধন শুরু করায় বন্যপ্রাণির সংখ্যা কমতে থাকে।
তিনি আরও জানান, প্রকল্প এলাকায় পর্যাপ্ত বিভিন্ন ওষুধি ও ফলজ গাছ রোপন করা হয়েছে। এসব গাছের ফল ধরার পর বন্যপ্রাণির খাদ্যের অভাব থাকবেনা। মধুপুর বন আবার আগের মতো বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্যে পরিণত হবে।
দোখলা রেঞ্জ অফিসার আব্দুল আহাদ জানান, বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ করা বন বিভাগের দায়িত্ব। বন্যপ্রাণির খাবারের চাহিদা মেটাতে শাল-গজারী গাছের ফাঁকে ফাঁকে ফলজ ও ওষুধি বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে। কিছু কিছু গাছে ফুল-ফল ধরতে শুরু করেছে। এসব বৃক্ষের ফল বন্যপ্রাণির খাবারের চাহিদা মেটাবে।
টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক জানান, বন্য প্রাণির আবাসস্থল বাড়ানোর জন্য তারা যেসব গাছের ফল খায় ওইসব গাছকে গুরুত্ব দিয়ে সুফল প্রকল্পের আওতায় ১১ লাখ গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। গাছগুলো দ্রুত বেড়ে উঠছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে সুফল প্রকল্পের সফলতা দৃশ্যমান হবে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ডক্টর মো. আতাউল গনি জানান, তিনি সুফল প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। বন বিভাগের উদ্যোগে জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে গাছ লাগানো হয়েছে। যথাযথ পরিচর্যাও করা হচ্ছে। সুফল প্রকল্পে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন বিভাগকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বানরসহ বেশ কিছু বন্যপ্রাণি খাদ্যের অভাবে ভুগছে। সেসব বন্যপ্রাণির খাবারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। জেলার যেখানেই বন্যপ্রাণির খাদ্যের অভাব দেখা দিবে সেখানেই সহায়তা দেওয়া হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা পেলে মানুষও বাঁচবে।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
মধুপুরে বারোয়ারী মন্দির ও বনে অগ্নিকাণ্ডে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ!
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
-
মির্জাপুরে গভীর রাতে কৃষি শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা
-
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস :: তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে- বেড়েছে হয়রানিও
-
করোনার টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে নতুন উপসর্গ
-
নাগরপুরে কিশোরগ্যাংয়ের হামলায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৃত্যু শয্যায়
-
নাগরপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত
-
১২ কেজি এলপিজির দাম কমল ৪৯ টাকা