প্রথম পাতা / টপ সংবাদ /
মির্জাপুরে সাদিয়া টেক্সটাইলের গ্রাসে সরকারি খাল!
By দৃষ্টি টিভি on ৪ জানুয়ারী, ২০১৭ ২:১০ অপরাহ্ন / no comments
দৃষ্টি নিউজ:
বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কের পাশে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার কদিমধল্যা-বানিয়ারা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস্ নামক প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো বৃদ্ধি করতে পাশের সরকারি খাল ভরাট ও জবরদখল করা হয়েছে। ফলে আশপাশের ৪ গ্রামের কৃষকদের প্রায় ৮ হাজার একর ফসলি জমি পানির নিচে পড়েছে। জমিতে ফসল ফলাতে না পাড়ায় স্থানীয় ৫ হাজার পরিবার অর্ধাহার- অনাহারে দিনাতিপাত করছে।
জানাগেছে, বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কের পাশে মির্জাপুর উপজেলার কদিমধল্যা-বানিয়ারা এলাকায় প্রায় তিন বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বাসিন্দা ওয়াদুদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস্ নামে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো বৃদ্ধি করা হয়। এক পর্যায়ে পাশের খাল ভরাট করে দখলে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য রাস্তা নির্মাণ করা হয়। ফলে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গোড়ান, বানিয়ারা, সাটিয়াচড়া ও কাটরা গ্রামের প্রায় ৮ হাজার একর ২-৩ ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কের পাশে মির্জাপুর উপজেলার গোড়ান, বানিয়ারা, সাটিয়াচড়া ও কাটরা গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের মূল পেশা কৃষি। কৃষি কাজের মাধ্যমেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এ সব ফসলি জমিতে প্রতি বছরই ২-৩ ধরনের ফসল ফলাতো গ্রামবাসীরা। ওইসব ফসলি জমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ছিল ওই খালটি। খাল ভরাট ও দখল করে তাদের জীবন-জীবিকার পথে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস্। মহাসড়ক সংলগ্ন ওই ফসলি জমিগুলো দেখে মনে হয় এখনো বর্ষা মৌসুম। পানি শুকানোর কোন লক্ষণই নেই। আবার অনেকে সেই ফসলি জমিতে এখনো ছোট ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরার জন্য এদিক- ওদিক ছোটাছুটি করছেন। স্থানীয়রা জানায়, টেক্সটাইলটি প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে ওই খালের ওপর ছোট পরিসরে একটি কালভার্ট নির্মাণ করে কাজ শুরু করলেও পরে মহাসড়ক চারলেন করণের কাজ শুরু হলে ছোট কালর্ভাটটি বন্ধ করে দেয়া হয় এবং খালের জায়গা দখল করে সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস্ এ যাতাযাতের জন্য দুটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়। ফলে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
জনশ্রুতি রয়েছে, ১৯৮২ সালে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ মতাসীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ওয়াদুদ চৌধুরী সম্পৃক্ত থেকে মির্জাপুর উপজেলার গোড়ান, বানিয়ারা, সাটিয়াচড়া ও কাটরা এলাকার কৃষকদের সুবিধার্থে খনন করেন। ওই খালটি খনন করায় প্রতি বছর বর্ষার পর পরই পানি নিষ্কাশন হয়ে ফসলি জমি চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠে। স্থানীয় কৃষকরা ওই খালের সুবিধা ভোগ করে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। কিন্তু সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস্ এর এহেন অপরাধ কর্মকান্ডের কারণে স্থানীয় কৃষকরা জমি চাষাবাদ করতে পারছে না। অভাব তাদের নিত্য সঙ্গী হয়েছে। কেউ কেউ পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ভ্যান-রিকশা-ঠেলাগাড়ি ও দিনমজুরি করে অর্ধাহার- অনাহারে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। গোড়ান, বানিয়ারা, সাটিয়াচড়া ও কাটরা গ্রামের মানুষ স্থানীয় প্রশাসনে বার বার অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি।
কাটরা গ্রামের ফরহাদ আলী খান বলেন, এই যে পানি দেখছেন এখানে আমার ৩৩৬ শতাংশ ফসলি জমি আছে। আমি প্রতিবছর এ জমিতে তিনটি ফসল চাষ করেছি। এক প্রভাবশালী জায়গা কিনে সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস্ নামে শিল্প-প্রতিষ্ঠান করেছে। খাল ভরাট করে দখলে নিয়েছে। ফলে জমিতে পানি আটকে আছে। কারো চোখে আমাদের সমস্যাটা পড়েনা।
৬৬০ শতাংশ ফসলি জমির মালিক আব্দুল মান্নান বলেন, আমার বাপ-দাদার রেখে যাওয়া সম্পত্তি চাষ করে সংসার চালাই। এ জমিতে আমরা মৌসুম ভিত্তিক ফসল চাষ করতাম, কিন্তু এখন কিছুই করতে পারছি না। সরকারি খাল ভরাট ও দখল করে শিল্প প্রতিষ্ঠান করার কারণে আমাদের জমি এখন পানির নিচে।
বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে দাঁড়িয়ে ওই দিকে তাকালে মনে হয় বর্ষা কাল। পানি জমে রয়েছে। এখনো যে পানি রয়েছে তা দেখে মনে হয় এ বছর আর কোন ফসল ফলাতে পারবে না কৃষকরা।
কাটরা গ্রামের মকবুল হোসেন খান, চাঁন মিয়া, হাজী রেফাজ উদ্দিন, হাজী নায়েব খান, দুলাল সহ অনেকেই বলেন, আমরা কৃষক। আমাদের কথা কে শোনে। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের তো দেখার কেউ নাই। অনেক অভিযোগ দিয়েও কোন কিছুই হয়নি। সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস্ নামীয় প্রতিষ্ঠান বা তার মালিকের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। তারা যে অবৈধভাবে খাল ভরাট করে দখলে নিয়েছে তা ছেড়ে দিক। জমিতে যেন আমরা ফসল ফলাতে পারি।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, আমরা বউ-পোলাপান নিয়ে কি খাব! আমাদের তো কিছু করার নেই। যে জায়গা আছে তাতে তো আর ফসল ফলাতে পারবো না। একটি প্রতিষ্ঠানের অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে আমাদের আজ এই দশা। কেউ তো আমাদের কথা শুনছে না। অনেক সাংবাদিকই আসে, কিন্তু কিছুই তো করে না; আমাদের দোষ-ত্রুটি থাকলে তাও তুলে ধরুক। দিনরাত কাজ করে দু-বেলা খেয়ে বাঁচতে চাওয়াই সরকারের কাছে আমাদের দাবি।
স্থানীয় সাবেক মেম্বার লুৎফর রহমান খান বলেন, এই পানির নিচে আমার বাব-দাদার জমি জমাসহ আমার ৮০০ শতাংশ ফসলি জমি রয়েছে। কিন্তু আমরা তো কোন ফসল ফলাতে পারছিনা। আমার বাবা কৃষক ছিলেন, তার হাত ধরেই আমরা কৃষি কাজ করি।
জামুর্কি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ খান চৌধুরী বলেন, যেসকল ফসলি জমি এখন পানির নিচে আছে তার মালিকরা আমাকে কোন কিছুই জানায় নাই। যে সকল জমি পানিতে ডুবে আছে সেজন্য শুধু সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস্’ই দায়ী নয় অন্য আরো কিছু প্রতিষ্ঠানও জড়িত। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে পারবো না।
সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস্- এর মালিক ওয়াদুদ চৌধুরীর সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ প্রতিষ্ঠানের মালিক না। এর মালিক সঞ্জিতা চৌধুরী। তিনি এখন দেশের বাইরে আছেন। আপনি কি বিষয়ে বলবেন আমাকে বলতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা কোন জায়গা দখল করিনি, সরকারি খাল দখল করার প্রশ্নই আসেনা। মহাসড়ক চারলেন হচ্ছে, তার কারণে পানি বের হতে পারছে না। এতে আমাদের কোন হাত নেই।
মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রুমানা ইয়াসমিন বলেন, সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস্ যদি সরকারি খাল দখল করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। কাউকে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। কোন সরকারি জমি দখল করতে দিবনা। আর যে সকল ভূক্তভোগী কৃষক রয়েছে তারা যেন ঠিকভাবে চাষাবাদ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে কোম্পানির লোকদের সাথে কথা বলতে গেলে কোম্পানির প্রধান ফটক বন্ধ করে রাখা হয়। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ওখানে কর্মরত কেউ নিজ পরিচয়ে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যারা কর্মরত তাদের একজনের সাথে কথা বলার সুযোগ হলেও সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে সটকে পড়েন। পরবর্তীতে বার বার কথা বলার চেষ্টা করেও কোন সুফল হয়নি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
মধুপুরে বারোয়ারী মন্দির ও বনে অগ্নিকাণ্ডে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ!
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
-
মির্জাপুরে গভীর রাতে কৃষি শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা
-
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস :: তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে- বেড়েছে হয়রানিও
-
করোনার টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে নতুন উপসর্গ
-
নাগরপুরে কিশোরগ্যাংয়ের হামলায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৃত্যু শয্যায়
-
নাগরপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত
-
১২ কেজি এলপিজির দাম কমল ৪৯ টাকা