আজ- ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  রাত ১০:৩৫

সাড়ে ৮শ’ বছর পর লক্ষণ সেনের মতো শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন :: আমীরে জামায়াত

 

দৃষ্টি নিউজ:

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন- শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ, তিনি যে কালিমা জাতির কপালে লিখে দিতে চেয়েছিলেন- জাতি সেটা তার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি এমন রাজনীতি করলেন, বললেন- উন্নয়নের রাজপথে দেশকে উঠিয়ে দিয়েছেন, বললেন বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এমন রাজপথ তৈরি করলেন, গাড়িটা রাজপথ দিয়ে চালিয়ে আপনি যেতে পারলেন না। এমন রাজনীতি করলেন, আপনাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হলো।


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সাড়ে ৮শ’ বছর আগে লক্ষণ সেন বাংলা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল এ বছর আপনি পালিয়ে গেলেন। সোমবার(১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে জেলা জামায়াত আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের মাগফেরাত এবং আহত ও শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


আমীরে জামায়াত বলেন, বিগত সময়ে আমাদের চরিত্রে কালিমা লেপন করা হয়েছে। আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মতো মানুষকে বলা হয়েছে তিনি ‘ধর্ষক’। তিনি খুনি, তিনি লুটেরা, তিনি অগ্নিসংযোগকারী। সময় বদলায়, পরিবেশ বদলায়। সত্যকে চাপা দিয়ে রাখা যায় না। সত্য মাটির নিচ থেকে উঠে আসে। একইভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর, নির্যাতন করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের উপর, নির্যাতন করা হয়েছে গণঅধিকার পরিষদের উপর, নির্যাতন করা হয়েছে সাধারণ মানুষের উপর। হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক বন্ধুদের। কালো আইনে টেনে হিঁচড়ে তাদের জেলে নেওয়া হয়েছে। তারা কাউকে বাদ দেয়নি। সবাইকে নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ। সবাইকে ‘রাজাকার’ বলেছেন।


তিনি বলেন, দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে হাজার খানেকের মতো আমাদের কলিজার টুকরারা জীবন দিয়েছেন। এখানে কোন দলমত নাই। এখানে কোন ধর্ম নাই। এখানে সকল ধর্মের মানুষ অংশ গ্রহণ করেছেন, সকল ধর্মের মানুষই মারা গিয়েছেন। নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে। শহিদদের আমরা কোন দলের সম্পত্তি বানাতে চাই না। এই শহিদরা জাতির সম্পদ, এই শহিদরা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। এই শহিদরা আজীবন জাতীয় বীর। আমরা তাদের সেই মর্যাদায় দেখতে চাই। যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের নিয়ে কোন দল যেন ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা না করি। এটা আমাদের সকলের ত্যাগের ফসল। তাহলে সকলের প্রতি সম্মান দেখানো হবে।


আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আহতদের পাশে যাবেন। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আমরা চেষ্টা করছি, যাদের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়- তাদেরকে একটু উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। ২-১টা দেশের সাথে আমরা আলাপ আলোচনা করেছি। তারা আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা যদি একটু এগিয়ে আসে, এই সমস্ত দু:খী মানুষের বিরাট উপকার হবে। যারা এগিয়ে আসবেন, তাদের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে আমরা কবুল করবো।


বিগত সরকারের শাসনামল নিয়ে তিনি বলেন, ১৭ বছর ৬ মাস এ জাতি বন্দিত্বের নিকট বাঁধা ছিল। মুখে ছিল তালা, হাতে ছিল হ্যান্ডকাপ, পায়ে ছিল বেরি। এ দেশের ১৫ কোটি মানুষ ছিল মজলুম। রাস্তায় যে ভাই বা বোন ভিক্ষা করতেন তিনিও ছিলেন মজলুম। বিগত সরকারের সময় ভিক্ষুকদেরও চাঁদা দিতে হতো। প্রত্যেকটি মানুষই ছিল জুলুমের শিকার।


ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শহিদ নিজামী বলেছিলেন ‘আমার রক্ত বাংলাদেশে কথা বলবে। আমার রক্ত বাংলাদেশের পরিবর্তনের সূচনা করবে’। সাড়ে ১৫ বছর তারা(পতিত সরকার) জাতির উপর স্টিম রুলার চালিয়েছে। সবচেয়ে বেশি আঘাত দিয়েছে জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের উপর। আমাদের মতো মজলুম সংগঠন আর কেউ না। আর কারও এতোগুলো নেতাকে হত্যা করা হয়নি। আর কারও বাড়ি-ঘর বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়নি। আর কারও বাড়ি-ঘরে আগুন ও লুটপাট করা হয়নি। আমাদের পর্দাশীল মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করা হয়েছে।


সাংবাদিকদের নির্যাতন নিয়ে তিনি বলেন, যে সাংবাদিক ভাই বিদেশে বসে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন দেশে তার পরিবারের কোনো এক বোনকে টেনে নিয়ে টানা হেঁচড়া করা হয়েছে। কোন ভাই ফেসবুকে কিছু লিখলে, আজরাইল রূপি ডিবি তার ঘরে গিয়েছে। তাদের হেনস্থা করা হয়েছে।


জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর আহসান হাবিব মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ ও ডক্টর মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। ান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ধনবাড়ীর নিহত একরামুল হক সাজিদের বাবা জিয়াউল হক, টাঙ্গাইল শহরের নিহত মারুফের বোন সৈয়দা আক্তার, জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মনিরুল ইসলাম, জেলা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মতিউল্লাহ, শহর ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি মামুন আব্দুল্লাহ প্রমুখ।


এ সময় বিভিন্ন উপজেলা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের ছয় সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। শেষে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহিদদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. মো. শফিকুর রহমান।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno