আজ- বৃহস্পতিবার | ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
৩ আশ্বিন, ১৪৩২ | সকাল ১১:৩০
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
৩ আশ্বিন, ১৪৩২
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩ আশ্বিন, ১৪৩২

৩৬টি শীর্ষ পদ খালি- নেই পদোন্নতি :: এলজিইডিতে চলছে চাপা কান্না

শাহীন আবদুল বারী, অতিথি লেখক:

বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার প্রকৌশল সংস্থা ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে’ (এলজিইডি) চলছে চাপা ক্ষোভ ও কান্না। প্রকৌশলীদের এই কান্না চার দেয়ালে বন্দি থাকছে- কর্তৃপক্ষের নজরে কোনভাবেই আসছে না। একজন প্রকৌশলী দীর্ঘ ৩১-৩২ বছর চাকরি শেষে পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাওয়ায় তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। পদোন্নতির অভাবে প্রকৌশলীরা সামাজিক মর্যাদা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রকৌশলীরা দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

 

 

 

 

 

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রধান প্রকৌশলীর পদটি গ্রেড-১ হলেও তা শূণ্য অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া গ্রেড-২ এর ৩টি পদ বিন্যাস থাকলেও যা এখন পর্যন্ত শূণ্য। অপরদিকে গ্রেড-৩ এর জন্য পদ বিন্যাস রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে কর্মকর্তা/প্রকৌশলী রয়েছেন মাত্র ৩ জন। ফলে প্রত্যেক প্রকৌশলীকে ৩-৪টি পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে কাজের গতি ক্রমান্বয়ে থমকে যাচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

 

অন্যদিকে, এলজিইডিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদের সংখ্যা ৩৪টি। এর মধ্যে মাত্র ১১টি পদে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কর্মরত রয়েছেন। সে হিসেবে ২৩টি পদ ফাঁকা থাকায় গোটা দেশে কর্মচাঞ্চল্য দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
এলজিইডি গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের একমাত্র প্রকৌশল সংস্থা। এখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীরা মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। শুধুমাত্র পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ায় দেশব্যাপী উন্নয়নের চাকা থমকে যাচ্ছে। এর ফলে দেশের শীর্ষ স্থানীয় সরকারি প্রকৌশল সংস্থা এলজিইডি দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে! পদোন্নতির অভাবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের অনেককেই ২-৩টি অঞ্চল এবং সদর দপ্তরের ইউনিটের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে তাদের কায়িক পরিশ্রম এবং মানসিক চাপও বাড়ছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

সূত্র জানায়, ৩১-৩২ বছর চাকরি করার পর এলজিইডি’র শীর্ষ পদে পদোন্নতির সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। আবার পদের সংখ্যাও খুবই কম। একজন প্রকৌশলীর স্বপ্নই থাকে বয়সানুযায়ী পদোন্নতির মধ্য দিয়ে অবসরে যাওয়ার। অথচ বছরের পর বছর পদোন্নতি না হওয়ায় সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এ কারণে তাদের মধ্যে বহু বছর ধরে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তারা চরম বৈষম্যের শিকারও বটে। অনেক জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীরা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

এলজিইডি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ডিজাইন) সৈয়দ শফিকুল ইসলামকে ঢাকা ও মাদারীপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে। এছাড়া যশোর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শাহিনুরকে খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ফলে তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ বাড়ছে- কাজেও বিঘ্ন ঘটছে। ওই প্রকৌশলীর নিজ কার্যালয়ের আওতাধীন মূল কাজে মারাত্মক ব্যাঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে। অকারণে সুনামের পরিবর্তে দুর্নামের ভাগীদার হতে হচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

 

২০১১ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর গত ১৪ বছর ধরে আর পদোন্নতি হচ্ছে না। বর্তমানেও পুরো প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে আছে। এছাড়া প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়ার চাকরি মেয়াদ আর বেশিদিন নেই। কিন্তু তাকেও পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। ফলে চলতি দায়িত্ব নিয়েই তাকে অবসরে যেতে হবে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।

 

 

 

 

 

 

উদাহরণ হিসেবে অনেকেই বলছেন, প্রকৌশলী মঞ্জুরুল আলম সিদ্দিকী, প্রকৌশলী আহমেদ আলী ও প্রকৌশলী শাহেদ আবদুর রহিমের যথেষ্ট বয়স থাকার পরেও যথাসময়ে পদোন্নতি না হওয়ায় হতাশা আর ক্ষোভ নিয়ে এলজিইডি থেকে তাদের অবসরে যেতে হয়েছে। এই অবস্থা প্রকৌশলীদের অনেকের জীবনেই ঘটছে।

 

 

 

 

 

 

অপরদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলী সালমা শহীদ আরআরএমইপি’র (রুরাল রুটস মেইনটেনেন্সে অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম) প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পদোন্নতির অভাবে তাকে পুনরায় নির্বাহী প্রকৌশলীর পদে ফিরে যেতে হয়েছে এবং সেখানেই তাকে কর্মরত থাকতে হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে পদোন্নতি বঞ্চিত প্রকৌশলীরা আক্ষেপ করে এই প্রতিবেদককে বলেন। অথচ সালমা শহীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী অন্য একটি প্রকৌশল সংস্থায় প্রধান প্রকৌশলীর পদ অলংকৃত করছেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

পদোন্নতির সঙ্কট ছাড়াও এলজিইডিতে ১৮৫টি নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ শূণ্য রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা গ্রামীণ জনপদের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে দেশবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সরকারের সুনাম বৃদ্ধিতে অক্লান্ত পরিশ্রমও করেন তারা দীর্ঘ চাকরি জীবনের শেষ সময় এসে সম্মানের কথাও তাদের ভাবিয়ে তোলে। অথচ চরম বৈষম্যের মধ্য দিয়ে মেধাবী প্রকৌশলীদের এলজিইডি থেকে অবসরে যেতে হচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

 

তারা বলছেন, ‘দেশ আজ বৈষম্য মুক্ত। সহস্রাধিক তাজা প্রাণের বিনিময়ে আজ আমরা স্বৈরাচার মুক্ত। কিন্তু তবুও কেন আমরা বৈষম্যের শিকার।’ আক্ষেপ করে অনেকেই বলেন, এলজিইডি আজ মাথা শূণ্য। সঙ্কট সমাধানে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগী প্রকৌশলীরা ।

 

 

 

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়