আজ- ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সকাল ৭:১১

এলেঙ্গা পৌরসভা নির্বাচন :: প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকদের ঘুমহীন প্রচারণা

 

দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচন জমে উঠেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অবিরাম ঘুমহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে হাতে-পায়ে ধরে ভোট প্রার্থনা করছেন।
এবার নির্বাচনে মেয়র পদে তিন জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এলেঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নূর-এ-আলম সিদ্দিকী(নৌকা), বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি মো. শাফী খান(ধানের শীষ) এবং এলেঙ্গা ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম শফিকুল ইসলাম সাফি তালুকদার (নারিকেল গাছ)।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্বাচনকে ঘিরে দম ফেলার ফুসরত নেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের। দলীয় নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছেন কোমর বেধে। ভোটারদের মন জয় করতে তাঁরা নানা কৌশল অবলম্বন করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। হাট-বাজার, চায়ের দোকান, মাঠ-ঘাটে সর্বত্র ভোট নিয়ে আলোচনা চলছে। ভোটাররা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষন করছেন। মেয়র পদে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনা আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা ও বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থীকে ঘিরেই বেশি হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হবে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর মধ্যে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীও বসে নেই। সবাই নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছেন।
তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আ’লীগের প্রার্থী নূর-এ-আলম সিদ্দিকী নির্বাচনী দৌঁড়ে অনেকটাই সুবিধা পাচ্ছেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মতিনের সমর্থকরা বিএনপি নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম শফিকুল ইসলাম সাফি তালুকদারের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় দলীয় প্রার্থী মো. শাফী খানের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় কিছুটা ধস নেমে এসেছে। তবে বর্তমান মেয়র মো. শাফী খানের বাবা খলিলুর রহমান খান প্রায় ৩০ বছর এলেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের অত্যন্ত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান এবং তিনিও চেয়ারম্যান ছিলেন। পৌরসভায় তাঁর ভোট ব্যাংক রয়েছে।
নৌকার প্রার্থী নূর-এ-আলম সিদ্দিকী কয়েক বছর যাবত কাজ করছেন। তিনি এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক এবং সেবামূলক কাজে ব্যক্তিগতভাবে অনুদান দিয়ে আসছেন। গরিব-মেধাবী শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার খরচ প্রদান, অসহায় মানুষের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, বাসস্থান নির্মাণে ও চিকিৎসায় সাহায্য করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।
বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় এলেঙ্গা পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. শাফী খান ও এলেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এক সময়ের জাতীয় পার্টির নেতা বিএনপিতে সদ্য যোগদানকারী সাফি তালুকদারের মধ্যে। পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি মো. শাফী খানকে দলীয় মনোনয়ন দেয়। এসএম শফিকুল ইসলাম তালুকদার(সাফি তালুকদার) বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিগত পৌর নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পারিবারিকভাবে তাদের ঐতিহ্য রয়েছে। তাছাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতির কর্মী-সমর্থকরা সাফি তালুকদারের হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির প্রার্থী মো. শাফী খানের সঙ্গে কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সভাপতির বিরোধ রয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ মো. শাফী খানের পক্ষে প্রচারণায় নামলেও স্থানীয় নেতাদের দেখা যায়নি। এদিকে সাফি তালুকদারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে স্থানীয় বিএনপির একটি বৃহৎ অংশ। সবমিলিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সাফি তালুকদার বলেন, মো. শাফী খানের সঙ্গে স্থানীয় বিএনপির কেউ নেই। তিনি ঋণগ্রস্ত হওয়ায় মানুষের কাছে যেতে পারছেন না। পৌরবাসীকে কোন সেবা দিতে পারেন নাই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হব।
বিএনপির প্রার্থী মো. শাফী খান বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছি। বিএনপির ভোটার এবং কর্মী-সমর্থকরা ধানের শীষ প্রতীকে ঐক্যবদ্ধ আছেন। আর বিএনপিতে সাফি তালুকদারের কোনো পদ-পদবি নেই। তিনি বিদেশে থাকেন। মো. শাফী খান অভিযোগ করেন, আওয়ামীলীগের লোকজন তার কর্মীদের গোপনে গোপনে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
আওয়ামীলীগের প্রার্থী নূর-এ-আলম সিদ্দিকী বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিভিন্ন কারণে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এলেঙ্গা। বিএনপির মেয়র মো. শাফী খান পৌরবাসীকে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছেন। মানুষ পরিবর্তন চায়। তাই সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে পৌরবাসী নৌকা মার্কায়ই ভোট দিবেন। তিনি আরও বলেন, আমি বিজয়ী হলে মানুষকে আমার কাজের মাধ্যমেই ভোটের মূল্য দিব।
মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগের নূর-এ-আলম সিদ্দিকী পৌরসভার রাজবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। রাজাবাড়ী, চেঁচুয়া, মসিন্দা এলাকায় তাঁর একক আধিপত্য রয়েছে। বর্তমান মেয়র বিএনপি প্রার্থী মো. শাফী খানের বাড়ি পৌরসভার চিনামুড়া গ্রামে। চিনামুড়া, বিন্যাফৈর, চামুড়া, মহেলা এলাকা মো. শাফী খানের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। অপর প্রার্থী জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম শফিকুল ইসলাম সাফি তালুকদারের বাড়ি পৌরসভা কার্যালয় সংলগ্ন এলেঙ্গার বাগানবাড়ী। এলেঙ্গা বাজার, বাঁশী, মশাজান, বানিয়াবাড়ী এলাকায় সাফি তালুকদারের জনপ্রিয়তা ঈর্ষনীয়।
তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে যিনি পৌরসভার হিজুলী, হায়াতপুর, চরবাঁশী, ভাবলা, চরভাবলা, হাকিমপুর, পাথাইলকান্দি ও পৌলী সহ অন্য এলাকার ভোট আদায় করতে পারবেন তিনিই হবেন এলেঙ্গার দ্বিতীয় পৌরপিতা- এটা প্রায় নিশ্চিত।
টাঙ্গাইল জেলার নির্বাচন কর্মকর্তা ও এলেঙ্গা পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩২ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরআগে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন জাতীয় পার্টির(এরশাদ) আজিজুর রহমান তালুকদার এবং তিন জন পুরুষ কাউন্সিলর তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আরো বলেন, কয়েক প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আব্দুল করিম নির্বাচনী এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে গত ১৫ মার্চ থেকে কাজ করছেন। আগামী ২৯ মার্চ এ পৌরসভায় ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে এলেঙ্গাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। ২০১৩ সালে নির্বাচনে প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মো. শাফী খান। বর্তমানে মোট ভোটার ২৯ হাজার ৩০৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ৫৬৮ ও মহিলা ১৪ হাজার ৭৪১জন। এলেঙ্গা পৌরসভার আয়তন ২৩.২৪ বর্গ কিলোমিটার।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno