আজ- ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  রাত ৩:৫৩

টাঙ্গাইলে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পুলিশ সহ অর্ধশতাধিক আহত

 

বুলবুল মল্লিক:


টাঙ্গাইলে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে তিন পুলিশ সহ উভয় গ্রুপের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাব ভবনে হামলা চালিয়ে জানালা-দরজা ভাংচুর করে, এ ঘটনায় পুলিশ বিএনপির উভয় গ্রুপের নয় নেতাকর্মীকে আটক করেছে। রোববার(২৩ জুলাই) সকালে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার সেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। খবর পেয়ে টাঙ্গাইলে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কর্মসূচিতে যোগ দেননি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নেতাকর্মীরা জানায়, রোববার সকালে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। একই সাথে বিএনপির পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরাও একই স্থানে কর্মসূচির আবেদন করে। এ কারণে প্রশাসন ওই স্থানে কোন পক্ষকেই কর্মসূচি পালনে অনুমতি দেয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটি টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে ওই কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেয়। সকালে জেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফার সভাপতিত্বে তাদের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় বিএনপির বিদ্রোহী(পদবঞ্চিত) গ্রুপ প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। কর্মসূচি পন্ড করতে বিএনপির পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের কমিউনিটি সেন্টারে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে নবগঠিত বিএনপির নেতাকর্মীরা পদবঞ্চিত নেতাকর্মীকে ধাওয়া দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। এ ঘটনায় শহরের কাজী নজরুল ইসলাম সরণী ও আশ-পাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পথচারী এবং যানবাহন চালকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট ও ব্যস্ততম ওই সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হামলায় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের কমিউনিটি সেন্টারের দরজা, জানালা, চেয়ার-টেবিল ও সাইনবোর্ড ভাংচুর করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১২ রাউন্ড রাবার বুলেট ও চার রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে টাঙ্গাইল মডেল থানার এসআই আল মামুন, এএসআই নবীন, কনস্টেবল ইসরাফিল সহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। আহত তিন পুলিশকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অন্যরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানাগেছে। এ সময় আলতাফ হোসেন আলাল, ইকবাল হোসেন, শহিদুলসহ উভয় পক্ষের ৯জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে।
এ সময় টাঙ্গাইল রাইফেল ক্লাবের সামনে রাখা একটি প্রাইভেট কার(ঢাকা মেট্রা-গ ১৪-১০৮৫) থেকে কয়েক ডজন ধারালো অস্ত্র, চাপাতি চাকু, রড, হাতুড়ি, পেথিডিন ইনজেকশন ও সিরিঞ্জ উদ্ধার ও গাড়িটি জব্ধ করে পুলিশ।
পদবঞ্চিত নেতা হাসানুজ্জামিল শাহীন জানান, জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে আগত প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সাথে সাক্ষাত করতে তারা কয়েকজন টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব ভবনে যান। এ সময় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের বাধা দেয়া হয়। তারা সাক্ষাতের চেষ্টা চালালে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এ সময় তারা হামলা ঠেকাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা জানান, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে রোববার সকালে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের কমিউনিটি সেন্টারে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। শান্তিপূর্ণভাবে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর আগমনে কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় আকস্মিক পুলিশের পক্ষ থেকে লাঠিচার্জ করাসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রেসক্লাব ভবন থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামীলীগের কয়েকজন অনুসারি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিস্থলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এ ধরণের বর্বরাচিত হামলায় তিনি হতবাক হয়েছেন।  
টাঙ্গাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাজমুল হক ভূইয়া জানান, এ ঘটনায় নয় জনকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। তবে, আটককৃতদের নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) গোবিন্দ চন্দ্র পাল জানান, রোববার সকালে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে বিএনপির পদবঞ্চিত কিছু নেতাকর্মী কর্মসূচিস্থলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা পদবঞ্চিত নেতাকর্মীর উপর পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে। সংঘর্ষে তিন পুলিশ সহ উভয় গ্রুপের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। ওই সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি প্রাইভেট কার থেকে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মে কৃষিবিদ শামসুুল আলম তোফাকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবালকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপি কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। কৃষিবিদ শামসুুল আলম তোফা সাবেক উপমন্ত্রী ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামী আব্দুস সালাম পিণ্টু এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ভাই। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ সুলতান সালাউদ্দিন টুকু কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে তার ভাইকে সভাপতি ও তাদের অনুসারিদের কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। পরে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে এই কমিটি বাতিলের দাবিতে চার জন কমিটি থেকে পদত্যাগ করে বর্তমান কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ কমিটির সকল কর্মসূচি প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় পদবঞ্চিতরা।

 

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno