আজ- ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সকাল ১০:৫৫

অসময়ের ভাঙনে যমুনার পেটে যাচ্ছে নাগরপুরের ১২ গ্রামের স্কুল-ঘরবাড়ি

 

আবু বকর সিদ্দিক:

যমুনায় অসময়ের ভাঙনে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ, ভারড়া, ধুবরিয়া ও দপ্তিয়র ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ বছর অসময়ের ভাঙনে ইতোমধ্যে শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি যমুনার পেটে চলে গেছে। বৃহস্পতিবার(৮ জুন) থেকে ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কিন্তু আগ্রাসী যমুনার থাবা থামানো যাচ্ছেনা।


স্থানীয়রা জানায়, প্রতিবছরই নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শ’ শ’ ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যমুনা গ্রাস করে নেয়। গত কয়েক বছর নাগরপুর উপজেলার সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যমুনায় বিলীন হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের(বাপাউবো) স্থানীয় কর্মকর্তারা প্রতি বছরই স্থায়ী বাঁধের আশ্বাস দিলেও তার বাস্তবায়ন নেই।

এ বছর বর্ষা আসার আগেই নাগরপুরের তিন ইউনিয়নে যমুনার ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনের শিকার গ্রামগুলো হচ্ছে- সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইসকা মাইঝাইল, খাস ঘুনিপাড়া, চর সলিমাবাদ ও ভুতের মোড়; ভারড়া ইউনিয়নের শাহজানী, মারমা ও উলাডাব; ধুবরিয়া ইউনিয়নের ধুবরিয়া, বলরামপুর এবং দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিতপুর, কাটি নিশ্চিতপুর ও বাক কাটারি ইত্যাদি এলাকা।


সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনা নদীর ভাঙনে দিশেহারা নাগরপুরের মানুষ। চৈত্র-বৈশাখ মাসের শুষ্ক মৌসুমেও নদী তীরবর্তী ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে পড়েছে।

এখনই পদক্ষেপ না নিলে ২-৩ দিনের মধ্যে যমুনা গর্ভে চলে যাবে। এরইমধ্যে বিভিন্ন গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। রাস্তা, কালভার্ট, ঘরবাড়ি, ফসলী জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ইতোমধ্যে যমুনা নদীর গর্ভে চলে গেছে। বাড়ি-ঘর, ফসলী জমি হারিয়ে মানুষ দিশেহারা।


সলিবাদ ইউনিয়নের সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের অর্ধেক যমুনার পেটে চলে গেছে। নতুন ভবনেও ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ গত ৩ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এরই মধ্যে সম্প্রতি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু। উপমন্ত্রীর নির্দেশেণার পর গত বৃহস্পতিবার(৮ জুন) থেকে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কিন্তু যমুনার আগ্রাসী রূপ থামেনি।


বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম জানান, ভাঙন এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে- আগামি কয়েক দিনের মধ্যে বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে এলাকার শিশুদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। স্কুলটি রক্ষায় নদী ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।


সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল আওয়াল মোল্লা জানান, তাদের এলাকায় ভাঙনরোধে শুকনো মৌসুমে ব্লক ফেললে গ্রামের শ’ শ’ মানুষের উপকার হত। এছাড়া বর্ষার আগেই ভাঙন শুরু হতো না। স্কুলটিও ক্ষতির মুখে পড়তো না।


স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আখিরুল জানান, সলিবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ভুতের মোড় পর্যন্ত এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্কুলের অর্ধেক প্রায় নদীতে চলে গেছে।


সলিবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, গত বুধবার(৭ জুন) বিকালের দুই ঘণ্টার ভাঙনে বিদ্যালয়ের টয়লেট ও স্কুল ভবনের এক কক্ষ যমুনার পেটে চলে গেছে। বিদ্যালয়ের সরাঞ্জামগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছে না। স্থায়ী সমাধানের জন্য বেরীবাঁধ ও ব্লক ফেলার দাবি জানান তিনি।


সলিমাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহীদুল ইসলাম অপু জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে সলিবাদে যমুনার ভাঙনে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ পর্যন্ত চার শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি যমুনায় চলে গেছে। এ বছর অসময়ে প্রায় এক মাস যাবত যমুনায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীনের পথে।

পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম ও এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে উপমন্ত্রী দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। ভাঙনরোধে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।


নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয় রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী সমাধানের জন্যও পরিকল্পনা আছে।


টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, নাগরপুরে ভাঙনরোধে ৩০০ মিটার এলাকায় বৃহস্পতিবার থেকে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

আসন্ন বর্ষায় স্থায়ীভাবে কোন সমাধান করা যাবে না। পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে প্রকল্প চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান করার পরিকল্পনা আছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno