আজ- ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সকাল ১০:২৩

উত্তরের পথে ১৪ কিলোমিটারে যানজটের শঙ্কা

 

বুলবুল মল্লিক:

আসন্ন ঈদ যাত্রায় বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে উত্তরবঙ্গগামী দুই লেনের ১৪ কিলোমিটারে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে মহাসড়কের ফোর লেন, ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস খুলে দেওয়ায় ঈদুল ফিতরের ন্যায় যানজটমুক্ত থাকবে বলে দাবি করেছে জেলা পুলিশ।


জানাগেছে, ঈদ সহ বিভিন্ন উৎসবে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের চাপে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহসাড়কে সাধারণত যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ঘরমুখো মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়। কিন্তু গত ঈদুল ফিতরে চিরচেনা সেই দুর্ভোগ চোখে পড়েনি।

আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু আনা-নেওয়ার জন্য মহাসড়কে অতিরিক্ত ট্রাক চলাচল করায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটারে দুই লেনের সড়কে যানজটের আশঙ্কা করছে পরিবহন চালক ও সংশ্লিষ্টরা।


সড়ক ও জনপথ(সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ওই অংশের সবগুলো ফ্লাইওভার(উড়াল সড়ক), আন্ডার পাস চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এজন্য মহাসড়কের ওই অংশে নির্বিঘ্নে যান চলাচলে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকছে না।

এরপরও ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটারে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। ওই ১৪ কিলোমিটারে দুই লেন থাকার পাশাপাশি এলেঙ্গার ময়মনসিংহ রোড, পুরাতন ভূঞাপুর রোড, চরভাবলা, আনালিয়াবাড়ী, হাতিয়া, সল্লা ও জোকারচর এলাকায় বাসস্ট্যান্ড থাকায় স্থানীয় লোকজন পারাপাড় হয়ে থাকে। ফলে দুর্ঘটনার পাশাপাশি মহাসড়ক পারাপাড়ের কারণেও যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


জেলা পুলিশ জানায, গত রোজার ঈদে মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক একমুখী (ওয়ানওয়ে) করে দেওয়া হয়েছিল। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে যেত। অপরদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী যানবাহন সেতু পার হয়ে ভূঞাপুর লিংক রোড ব্যবহার করে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল- এতে মহাসড়কে গাড়ির চাপ কমে অনেকটা সুফল পাওয়া যায়।

অনেক বছর পর গত ঈদুল ফিতরে মহাসড়কে তীব্র যানজট হয়নি। এবারও মহাসড়কের ওই অংশটুকু সাধারণ যানবাহনের জন্য একমুখী করা হচ্ছে। তবে উত্তরবঙ্গ থেকে গরুবাহী ট্রাক একমুখী সড়কের আওতার বাইরে থাকবে।


সরেজমিনে মহাসড়কের টাঙ্গাইলের আশেকপুর বাইপাস, পাকুল্যা, বাঐখোলা, করটিয়া, রাবনা বাইপাস, এলেঙ্গা হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় ঘুরে দেখা যায়- বুধবার(৬ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে। ফোর লেন মহাসড়ক ও সড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেন চালু করা হয়েছে।

ঈশা এণ্টারপ্রাইজের বাসচালক শাহীন ও চালকের সহযোগী প্রিন্স, শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক ইমরান ও তার সহযোগী রায়হান জানান, এবার মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে যানজটের সম্ভাবনা নেই। তবে এলাঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত এলাকায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলাচল ও এলোপাতাড়ি পাকিং করা হয় তাহলে এক বার যানজট হলে তার ভোগান্তি অনেক দূর পর্যন্ত গড়াবে। এছাড়া এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটারে সংযোগ সড়কে চলাচলের ব্যবস্থা করা না হলে ভোগান্তি বাড়বে।


পুলিশ, পরিবহন চালক এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়ক ফোর লেন হওয়ায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন এখন কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত দ্রুত চলে আসতে পারে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক এবং সেতুটিও দুই লেনের। যানবাহনগুলো ফোর লেনের সুবিধায় দ্রুত এলেঙ্গা পর্যন্ত এসে দুই লেনের মুখে আটকে যায়। এছাড়া সেতুর টোল পরিশোধ করতে গিয়েও যানজট লেগে যায়। এ কারণে ঈদ ও উৎসবে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।


বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্র জানায়, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন ১৪-১৫ হাজার যানবাহন সেতু পারাপাড় হয়। ঈদের আগে-পরে দুইদিন ৩০ হাজারের বেশি যানবাহন সেতু পারাপার হয়। স্বাভাবিকের অধিক যানবাহন রাস্তায় থাকায় দুই লেনের সড়কে যানজট লেগে যায়। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে(সিরাজগঞ্জ অংশে) মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ করায় যানজট সৃষ্টি হয়ে সেতু অতিক্রম করে টাঙ্গাইল অংশ পর্যন্ত চলে আসে।


টাঙ্গাইল বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনি জানান, গত রমজানে তারা পুলিশ প্রশাসনের সাথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় সড়ক-মহসড়কে যানজট হয়নি। এবারও মালিক-শ্রমিকদের সমন্বয়ে গঠিত প্রায় ৫০ জন সেচ্ছাসেবক যানজট নিরসনে মাঠে থাকবে। তাছাড়া ট্রাক শ্রমিক মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন তারা এ বছর রাস্তার পাশে কোন গাড়ি পার্কিং করে গরু উঠা-নামা করবেন না।


এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ আতাউর রহমান জানান, গত রোজার ঈদে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়কটি ওয়ানওয়ে করে দেওয়ায় ভালো সুফল পাওয়া গেছে। এবারও হাইওয়ে পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। আগামি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার(৭ ও ৮ জুলাই) ঢাকা ও গাজীপুর এলাকার পোশাক কারখানাগুলোতে ছুটি হবে- তখন মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে।


টাঙ্গাইল ট্রাফিক ইন্সপেক্টর(প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন জানান, এবারও মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ট্রাফিক পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ট্রাফিক পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।


টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, গত ঈদের ন্যায় এবারও যানজট মুক্ত মহাসড়ক উপহার দেওয়ার লক্ষে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

উত্তরাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস সেতুর পূর্বপাড় গোলচত্তর থেকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা দিয়ে যাতায়াত করবে। গরুবাহী যানবাহন ও উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীবাহী বাস মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করবে।


তিনি আরও জানান, মহাসড়কে ৮০০ পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ১০০ জন এপিবিএন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন যাতে দ্রুত সরিয়ে ফেলা যায় এ জন্য হাইওয়ে পুলিশ ও সেতু কর্তৃপক্ষের চারটি রেকার সব সময় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সড়ক পর্যবেক্ষণের জন্য ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা মনিটরিং করা হবে। কোথাও কোন সমস্যা দেখলে তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno