প্রথম পাতা / টাঙ্গাইল / ঘাটাইল /
একজোড়া কানের দুল এবং জয়িতা হওয়ার গল্প
By দৃষ্টি টিভি on ৬ জানুয়ারী, ২০২০ ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন / no comments
দৃষ্টি ফিচার:
একজন মারুফা নাজনীন, টাঙ্গাইল জেলার সেরা জয়িতা। পেশায় পুলিশ অফিসার, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগাতি সার্কেলের এএসপি হিসেবে কর্মরত। এই জয়িতা হয়ে ওঠার পিছনে মায়ের একজোড়া কানের দুল বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এ বছর বেগম রোকেয়া দিবসে টাঙ্গাইল জেলা পর্যায়ে জয়িতাদের সন্মাননার দেয়ার অনুষ্ঠানে মারুফা বলেন, ‘আজ আমাকে আপনারা যে সন্মাননা দিচ্ছেন, আসলে এই সন্মাননা পাওয়ার যোগ্য আমার মা’। ওই দিন মঞ্চে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মা-মেয়ের হাতে জেলার সেরা জয়িতার ক্রেস্ট তুলে দেন।
মারুফা নাজনীন এলাকায় পরিচিত লিপি নামে। বাবা আখতার হোসেন, মাতা ফরিদা ইয়াছমিন। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পৌরসভার শহীদ আব্দুর সাত্তার রোডে তাদের বাড়ি। খুব সাধারণ পরিবারের এক মেয়ে। তিন ভাই-বোনের সংসারে মারুফা সবার বড়। তার বাবার আরো একটি সংসার ছিল। তাই ঠিকমত ভরনপোষণ করতেন না। ২-৩ মাস পর বাবা একবার তাদের সাথে দেখা করতে আসতেন, আবার কোন সময় আসতেন না। বাবা ২-৩ দিন পর পর ২০০টাকা করে পাঠাতেন। তা দিয়ে ছোট বোনের এক প্যাকেট দুধ আর এক কেজি চিনি কিনলে এককেজি চাল কেনার মত টাকা থাকত না। যেখানে চাল কেনার টাকাই নেই সেখানে বাজার কেনার কথাটা সব সময় প্রশ্নই থেকে যায়।
মারুফা নাজনীন বলেন, ‘মা ভাত রান্না করত আর মা-মেয়ে দু’জনে লবন-পানি দিয়ে খেয়ে দিন পাড় করতাম। আমার পড়ালেখার জন্য বাবা কখনো ভাবতো না। নবম শ্রেণিতে ওঠে পড়াশোনা একেবারে প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। টাকার অভাবে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করতে পারিনি। এক বছর লেখাপড়া বন্ধ ছিল। পরের বছর মা তার কানের একজোড়া দুল বিক্রি করে অতিকষ্টে ঘাটাইল এসই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগীতায় বোর্ড থেকে রেজিস্ট্রেশন করে আনেন। দশম শ্রেণিতে ক্লাস শুরু করলাম। মা ঠিকমত খাতা-কলম কিনে দিতে পারতেন না। একটা ছাড়া দুইটা জামা আমার ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘মা সেলাইয়ের কাজ জানতেন। সেসময় একজন লোকের কাছ থেকে ১৫শ’ টাকা ধার করে কিস্তিতে একটা সেলাই মেশিন কিনেন। এরপর রান্নাসহ ছোট দুই ভাই-বোনের দেখাশোনার কাজ আমার উপর এসে পড়ে। মা শুরুতে বাজার করার ব্যাগ সেলাই করতেন। প্রতি ব্যাগে ২০ পয়সা করে পেতেন। তারপর এলাকায় পরিচিত হলে কাপড় সেলাই করা শুরু করেন। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের সংসার’ যোগ করেন মারুফা।
মারুফা বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি রাত জেগে মায়ের কাজে সাহাস্য করতাম। এরই মধ্যে এসএসসি’র টেস্ট পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করি। পরে স্কুলের ইংরেজি স্যার ‘খাজা ফেরদৌস’ বাসায় এসে আমাকে এক রীম খাতা এবং দশটা কলম উপহার দেন। সেই সময় স্যার বলেছিলেন, ‘তোর কাছে একটাই চাওয়া, শুধু ভালো একটা রেজাল্ট এনে দিবি’; স্যার সবসময় আমার খোঁজ নিতেন। আমি সারা জীবন স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। এসএসসি পাস করার পর ঘাটাইল জিবিজি কলেজে ভর্তি হই। কলেজে বেতন দিতে হতোনা। স্যাররা আমাকে ফ্রিতে প্রাইভেট পড়াতেন। এভাবেই এসএসসি এবং এইচএসসি’র সময়কাল পাড় করি।
মারুফা বলেন, ‘অভাবের সংসার, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমার হবে না তাই ঘাটাইলেই বিএসসি করব- এমন সিদ্ধান্ত নিলাম। হঠাৎ একদিন মা বললেন, ‘তোমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়াবো’। আমি বললাম ফরম কিনে দিতে পারবে না কীভাবে পরীক্ষা দেব। যাক মায়ের কথামত শুরুহলো ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি। চান্স পেয়ে গেলোম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে। পড়ালেখার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়াতাম। এরই মাঝে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শিক্ষাঋণ নেই। অনার্স শেষ বর্ষে এসে আমার বিয়ে হয়। মাস্টার্স পড়ার খরচ স্বামী চালিয়েছেন।’
সেরা জয়িতা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘মাস্টার্স শেষ করে ৮ মাস একটি এনজিওতে চাকুরি করি। এরই মধ্যে ফার্ম স্ট্রাকচারের উপর থিসিস শেষ করি। পরে ফেনী সিটি কলেজে কৃষি বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি। চাকুরিরত অবস্থায় ৩৩ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেই। বিসিএস চূড়ান্ত ফলাফলে পুলিশ প্রশাসন (এএসপি) পদে টিকে যাই। এ খবর শোনার পর সেদিন আনন্দে অনেক কেঁদেছিলাম। আর আমার মা খুশিতে রাস্তা দিয়ে দৌঁড়াতে থাকেন। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে রাস্তায় যাকে পান তাকেই বলতে থাকেন ‘আমার মেয়ে এএসপি হয়েছে’ আর কাঁদতে থাকেন। আমি সর্বশেষে একটি কথাই বলতে চাই আমার মায়ের মতো মা যেন সব ছেলে-মেয়েদের হয়।’
সংসার জীবনে মারুফা, ব্যবসায়ী স্বামী মুজিবুল কাইয়ুম আরমান আর একমাত্র সন্তান শায়ানকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন বলে জানান।
মা ফরিদা ইয়াছমিন বলেন, ‘আল্লাহতালার আমাদের প্রতি দয়া ছিল। আমার পরিশ্রম আজ সার্থক’। সংগ্রামী এই জননীর অপর মেয়ে নুসরাত জাহান ইভা পড়েন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ও একমাত্র ছেলে ইফতেখাইরুল হাসান পড়েন মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
৬ জুন বাজেট দেব- বাস্তবায়নও করব :: প্রধানমন্ত্রী
-
মির্জাপুরে সাপের কামড়ে দুই গৃহবধূর মৃত্যু
-
টাঙ্গাইলে তিন দিনব্যাপী বিজ্ঞান মেলা সমাপ্ত
-
টাঙ্গাইলে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস পালিত
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
-
টাঙ্গাইলে আইসক্রিম ফ্যাক্টরীকে জরিমানা
-
মাসিক কবিতা আবৃত্তি ও স্বরচিত কবিতা পাঠ প্রতিযোগিতা
-
নতুন করে আস্থার সম্পর্ক গড়তেই এ সফর :: ডোনাল্ড লু