প্রথম পাতা / অর্থনীতি /
এক রাতে যমুনার পেটে শতাধিক বাড়িঘর ও জিওব্যাগ-তাঁত ফ্যাক্টরি
By দৃষ্টি টিভি on ৯ জুলাই, ২০২১ ৮:৩৫ অপরাহ্ন / no comments
বুলবুল মল্লিক:
প্রমত্ত্বা যমুনা বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইলের চার উপজেলায় হানা দিয়ে শতাধিক বাড়িঘর, রাস্তা, হাট, তাঁত ফ্যাক্টরি, স’মিল ও ফসলি জমি গিলে ফেলেছে।
ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরিভাবে ফেলা জিওব্যাগও যমুনার করাল থাবা থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে। যমুনার প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিতে এক রাতেই শতাধিক স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে।
জানাগেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা, কালিহাতী, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলায় বর্ষার শুরুতেই যমুনার ভাঙন শুরু হয়েছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর গত এক সপ্তাহ ধরে ভাঙন শুরু হলেও গত বুধবার(৭ জুলাই) থেকে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার(৮ জুলাই) এক রাতে শুধুমাত্র সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের শতাধিক বাড়িঘর, তাঁত ফ্যাক্টরি, স’মিল ও হাট যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এ সময় তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের সাথে বঙ্গবন্ধুসেতুর যোগাযোগের সংযোগের অসমাপ্ত শেখ হাসিনা সড়কের একাংশ যমুনার পেটে চলে গেছে।
মাহমুদ নগর ইউনিয়নের মাকরকোল, কেশবমাইঝাইল, তিতুলিয়া, নয়াপাড়া, কুকুরিয়া, বারবাড়িয়া; কাতুলী ইউনিয়নের দেওরগাছা, রশিদপুর, ইছাপাশা, খোশালিয়া, চানপাশা ও নন্দপাশা; হুগড়া ইউনিয়নের মসপুর, বারবেলা, চকগোপাল ও কচুয়া।
কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের আলীপুর, ভৈরববাড়ী। নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইকশা মাইঝাইল, খাস ঘুণি পাড়া, খাস তেবাড়িয়া,
চর সলিমাবাদ, ভূতের মোড়; ভারড়া ইউনিয়নের শাহজানি, ভারড়া, পাঁচতারা, আগদিঘলীয়া। ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেশি।
সরেজমিনে সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের উত্তর চরপৌলী, দশখাদা, হাটখোলা, পানিকোড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চরপৌলী হাটখোলা সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড হাটখোলাটি রক্ষার জন্য জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ৩০০মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে।
জিওব্যাগগুলোও যমুনার তীব্র ঘূর্ণাবর্ত স্রোতে তলিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বার বার জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতী উপজেলার সীমান্ত এলাকা উত্তর চরপৌলী ও আলীপুর গ্রামের অংশে অসমাপ্ত শেখ হাসিনা সড়ক(নর্দান প্রজেক্ট) রক্ষার জন্য ১০০মিটার এলাকায় ফেলা জিওব্যাগ তলিয়ে গিয়ে ভাঙনে সড়কটির ৫০০-৬০০মিটার নদীগর্ভে চলে গেছে।
কাকুয়া ইউনিয়নের উত্তর চরপৌলীর নুরুল ইসলামের দেড় একর জায়গায় স্থাপিত তাঁত ফ্যাক্টরি, ঠান্ডু মিস্ত্রির স’মিল, একই এলাকার আ. জলিল, আ. বাতেন, আব্দুস সামাদ, মো. ইসমাইল, মোতালেব হোসেন, আব্দুল খালেক প্রামাণিক, আব্দুল আলিম, আব্দুর রহিম,
বাবুল মোল্লা, নুর আলম মোল্লা, আব্দুল্লাহ, আবু বকর, আব্দুল মান্নান, লালচান মিয়া, মেকাম্মেল হক, শামসুল আলম, শাহ আলম, নজরুল ইসলাম; দশখাদা ও হাটখোলা এলাকার নুরুন্নাহার বেগম, মিনা আক্তার, সোনা খা, শিবলু তালুকদার, আলেয়া বেগম;
পানকোড়া ও কবরস্থানপাড়ার মন্টু শেখ, মো. রোশনাই মিয়া, আব্দুস ছবুর, আনছের মন্ডল, গোলাপ খা, আব্দুল গফুর মন্ডল ও আজিজ মন্ডল সহ শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি ভাঙনের শিকার হয়ে যমুনা গর্ভে চলে গেছে।
উত্তর চরপৌলী গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, দেড় একর জায়গায় তার তাঁত ফ্যাক্টরি ছিল। ফ্যাক্টরিতে ৫০টি পাওয়ারলোম চালু অবস্থায় ছিল।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাতে যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে। তিনি শ্রমিকদের নিয়ে ফ্যাক্টরির তাঁতগুলো কোন রকমে সরিয়ে নিতে পারলেও ঘরটি নদীর পেটে চলে গেছে।
হাটখোলা এলাকার গৃহবধূ মিনা আক্তার জানান, তাদের ৬০ শতাংশের বসতবাড়ি ছিল। সাম্প্রতিক ভাঙনের শিকার হয়ে এখন ১২-১৩ শতাংশ ভূমির উপর মাত্র একটি ঘর টিকে আছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে সেটাও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
তারা বর্তমানে চরপৌলী খামার পাড়া এলাকায় সরকারি খাস জমিতে বসবাসের জন্য ঘর নির্মাণ করছেন।
কবরস্থান পাড়ার আব্দুল গফুর মন্ডল ও আজিজ মন্ডল জানান, বুধবার(৭ জুলাই) বিকালে হঠাৎ যমুনা বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রলয়ঙ্করী তান্ডব চালিয়ে মাত্র ৩০মিনিটের মধ্যে ৬০ শতাংশের বাড়িঘর নদীর পেটে চলে গেছে।
তারা পাশের হাটে বাজার সদাই করাবস্থায় চিৎকার-চেচাঁমেচি শুনে দৌঁড়ে এসে দেখেন তাদের বাড়িঘর নেই। মুহুর্তের মধ্যে যমুনা গ্রাস করে নিয়েছে।
কাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, ভাঙনের শিকার হয়ে তার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত ৩-৪দিনের ভাঙনে ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় গ্রাম চরপৌলীর বহু স্থাপনা ও বাড়িঘর যমুনার যমুনা গিলে খেয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেললেও তা কোন কাজে আসছে না। তারা সদর উপজেলার মাহমুদ নগর ইউনিয়নের গোলচত্তর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের বিশাল এলাকা প্রতিবছরই যমুনার ভাঙনের শিকার হয়। এ ভাঙনরোধে তিন বছর আগে একটি স্থায়ী বাঁধের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
দীর্ঘ তিন বছরেও প্রকল্পটি অনুমোদন না হওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা। জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
মধুপুরে বারোয়ারী মন্দির ও বনে অগ্নিকাণ্ডে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ!
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
-
মির্জাপুরে গভীর রাতে কৃষি শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা
-
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস :: তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে- বেড়েছে হয়রানিও
-
করোনার টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে নতুন উপসর্গ
-
নাগরপুরে কিশোরগ্যাংয়ের হামলায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৃত্যু শয্যায়
-
নাগরপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত
-
১২ কেজি এলপিজির দাম কমল ৪৯ টাকা