আজ- ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  বিকাল ৪:৫২

এলো খুশির ঈদ

 

বুলবুল মল্লিক:

দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। অর্থাৎ আজ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামিকাল বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। ইতোমধ্যে বুধবার সৌদি আরব সহ মধ্য প্রাচ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকেরই মনে গুঞ্জরিত হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সেই গান ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।


ঈদ উৎসবকে ঘিরে সাজ সাজ রব সবখানে। কেন না, ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানে খুশি ভাগাভাগি করা। ঈদ মানে আত্মত্যাগের মহিমায় নিজেকে শানিত করা। ধনী-গরিব এক কাতারে দাঁড়ানো, একই আনন্দে হারিয়ে সাম্যের নিদর্শন স্থাপনের নামই ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।


চিরাচরিত নিয়মে অনাবিল আনন্দ ও উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হতে যাচ্ছে ঈদুল ফিতর। এরই মধ্যে ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে রাজধানী ঢাকার সুপ্রিমকোর্ট এলাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়াসহ দেশের বড় বড় মসজিদ ও ঈদগাহ।

অনেকেরই ঈদ আনুষঙ্গিক কেনাকাটাও প্রায় শেষ। এখন অপেক্ষা ‘শওয়াল’ মাসের চাঁদের। আকাশের পশ্চিম কোণে খুশির বারতা নিয়ে দেখা দেবে একফালি চাঁদ। তাতে ঝরতে থাকবে খুশির জ্যোৎস্না। শুরু হবে খুশির ঈদ-আনন্দ উৎসব।


এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিক আহমেদ বলেন, রমজানে এক মাস ধরে আমরা যে সংযমের প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকি তার চূড়ান্ত রূপ হলো ঈদুল ফিতর। কিন্তু এই সংযমের প্রশিক্ষণটা আমাদের জীবনে যদি স্থায়ীভাবে প্রভাবিত না করতে পারি তাহলে রমজান বা ঈদের কোনো মাহাত্ম্য থাকবে না।

রমজান আমাদের শিক্ষা দেয় যে- চুরি করব না, প্রতারণা করব না, হারাম খাব না, কাউকে ঠকাব না, বাজার কারসাজি করব না, গীবত বা পরনিন্দা পরিহার করব, গরিব-অসহায়দের পাশে দাঁড়াব; কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের দেশে সেটা হয় না বা সেই প্রভাব নেই। অন্য দেশে রমজানে যখন দ্রব্যমূল্যের দাম কমায়, আমাদের এখানে তখন বাড়ায়। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা হয়। তাই রমজানের ওইসব মূল্যবোধ না থাকলে ঈদেরও কোনো মূল্যবোধ থাকে না। ইসলামে রমজান একটি সংযমের পরিচ্ছন্ন স্বভাব তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

ফিতরা দিয়ে গরিবের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। ঈদ-উৎসব ধনী-গরিবের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, ঈদ ধর্মীয় উৎসব হলেও এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান। রমজান ও ঈদের আদর্শিক দর্শন আছে, সেগুলো সেভাবে মানুষের বুঝতে হবে এবং পালন করতে হবে। তা না হলে সমাজে রজমান বা ঈদ-আনন্দের কোনো প্রভাব পড়বে না।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ঈদ আনন্দের। এটা সব জায়গায়, সব মানুষের জন্যই আনন্দের। বিশেষ করে যারা ইসলাম ধর্মের, তাদের জন্য আনন্দের। ঈদ মুসলিমদের হলেও সমাজে এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কিন্তু এই ঈদকে আনন্দমুখর করার জন্য সবারই দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ করে যেসব লোক ঈদকে ভালোভাবে আনন্দমুখর করতে পারছে না বা অভাবগ্রস্ত তাদেরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে ঈদকে আনন্দমুখর করার ক্ষেত্রে বিত্তশালীদের ভূমিকা রয়েছে।

সেটা যদি ঠিকমতো পালন করা না হয় তাহলে সবার জন্য ঈদ আনন্দমুখর হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া ঈদের খরচ বা ঈদ অর্থনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে, যা থেকে সামাজিক বৈষম্য দেখা দেয়। এটা ঠিক করতে হবে। সে বিষয়ে ইসলামেরও নির্দেশনা রয়েছে। ঈদের আনন্দ নিশ্চিত করার জন্য পারস্পরিক দায়িত্ব রয়েছে। কোনো অনুষ্ঠান নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের বা গোত্রের থাকে না। তার মধ্যে ঈদ অন্যতম। সমাজের বৈষম্য দূর করার জন্য ঈদ অন্যতম একটি উৎসব। সবাই সবার পাশে দাঁড়ালে ঈদ সত্যিকারের আনন্দ উৎসবে পরিণত হবে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ঈদ মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও বাংলাদেশের জনসমষ্টির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান। ঈদ ভাতৃত্ব ও সাম্যের প্রকাশ ঘটায়। তিনি বলেন, মানুষ যা করে সেটাই তার সংস্কৃতি। ঈদ বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। ভেদাভেদ দূর করার অন্যমত মাধ্যম।


ইসলামী বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, ঈদের ইবাদতে শরিয়ত নির্দেশিত কিছু বিধিবিধান রয়েছে, যা পালনে সামাজিক জীবনে পারস্পরিক আন্তরিকতা, সহমর্মিতা ও বন্ধন সুসংহত হয়। এ ছাড়া ঈদের নামাজের আগে ফিতরা ও ফিদিয়া আদায় করা, ঈদগাহে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা, খুতবা শোনা এবং উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করা শরিয়তের বিধান। ঈদে নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ও হিংসাবিদ্বেষ দূর হয়ে এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পবিত্র মাহে রজমান এবং ঈদুল ফিতর আমাদের সে শিক্ষাই দেয়।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno