আজ- ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  বিকাল ৫:১৯

এ মাসেই নয়া কমিটি :: জেলা বিএনপিতে কোন্দল চরমে ॥ নতুন নেতৃত্বের দাবি

 

দৃষ্টি নিউজ:

14691141_864731216997218_8496734817614590666_nটাঙ্গাইল জেলা বিএনপির দলীয় কোন্দলের কারণে একাধিকবার সম্মেলনের প্রস্ততি নিলেও সফল হয়নি। নেতাকর্মীরা নতুন কমিটিতে পদপদবী পেতে কেন্দ্রে জোড় লবিং শুরু করে দিয়েছে। এছাড়া সখীপুর ও ভূঞাপুর উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করলেও দলে কোন্দলের কারণে প্রতিপক্ষ গ্রুপ পাল্টা কমিটি গঠিত করেছে। এ ঝামেলা এড়াতে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির নতুন কমিটির সিদ্ধান্ত এখন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া হাতে রয়েছে। কেন্দ্র থেকে এ মাসেই টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির নতুন কমিটির চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, সর্বশেষ বিগত ২০০৯ সালের ২৯ নভেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান সভাপতি, শামসুল আলম তোফা সাধারণ সম্পাদক ও ফরহাদ ইকবাল সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। শুরু থেকেই দল ২-৩ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে দলীয় কার্যক্রম। গত বছর আহমেদ আযম খান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি মনোনীত হওয়ায় জেলা বিএনপির পদ ছেড়ে দেন। পরে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় সহ-সভাপতি ফকির মাহবুব আনাম স্বপনকে। নতুন জেলা কমিটির পদ-পদবী পেতে ইতোমধ্যেই নেতাকর্মীদের দৌঁড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, আগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনেই ঢাকায় অবস্থান করে জেলা বিএনপির দায়িত্ব পালন করায় জেলায় দল নেতৃত্ব শুন্য হয়ে পড়ে। জেলার ৮টি সংসদীয় আসনে ব্যাপক দলীয় কোন্দল শুরু হয়। জেলা বিএনপির কোন্দলের কারণে অংগ সংগঠনেও কোন্দলের সৃষ্টি হওয়ায় আন্দোলন-সংগ্রামে বার বার ব্যর্থই হচ্ছে। দলীয় কোন্দলের জন্য জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম তোফাকে দায়ী করে জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতারা একাট্টা হন। তৃণমূল থেকেও দাবি উঠে ‘তোফা মুক্ত বিএনপি’ গঠনের। ভূঞাপুর উপজেলায় পাল্টা কমিটি গঠন করার কারণে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ভূঞাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও পরপর তিনবার নির্বাচিত পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট খালেক মন্ডলকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এতে ভূঞাপুরে কোন্দল আরো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে।
দলীয় অন্ত:কোন্দলের কারণেই গত বছরের ২০ নভেম্বর ও ২৯ ডিসেম্বর দুই দফা প্রতিনিধি সভার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে একটি প্রতিনিধি দল জেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে বলো জানানো হয়। এরপর থেকেই পদ পেতে  ইচ্ছুক নেতারা তৎপর হয়ে উঠেছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে যাঁরা ছিলেন, মাঠের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যাঁদের সংযোগ রয়েছে তাঁদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
মূলত বিগত সরকার বিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক কোন্দল দেখা দেয়। কোন কোন সভা-সমাবেশে চেয়ারে বসা নিয়েও হাতহাতির মতো ঘটনাও ঘটে কয়েকবার। এখন নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দলটির ভেতরের কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। আগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে কর্মসূচি পালন করতো। এটি দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ফটোসেশনে পরিণত হয়। সারাদেশের জেলা বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকদের নামে বিগত আন্দোলনে ৪০-৫০টি করে মামলা হলেও টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির তৎকালিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি।
বিএনপির একটি বড় অংশের দাবি, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফকির মাহবুব আনাম স্বপনকে সভাপতি ও হাসানুজ্জামিল শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠন করা হোক। অপর অংশ বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফাকে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ ইকবালকে সাধারণ সম্পাদক করতে। সম্প্রতি এই দুইটি গ্রুপই পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
নতুন জেলা কমিটির সভাপতি পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শিল্পপতি ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা, সাবেক সভাপতি হামিদুল হক মোহন ও সহ-সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু’র নাম শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ও শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফরহাদ ইকবাল এবং সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) চিত্তরঞ্জন দাস।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে শহরের শিবনাথ স্কুলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম তোফার অনুসারিদের নিয়ে এক বৈঠক হয়। এ বৈঠকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ও শহিদুল ইসলাম বাবুল উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় দুই নেতার এই বৈঠকে যোগদানের কারণে তোফা বিরোধীরা তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়। ওই দুই নেতা শামছুল আলম তোফার পক্ষে কেন্দ্রে লবিং করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
এ ব্যাপারে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল এক গ্রুপের সাথে বৈঠকের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই বৈঠকটি কোন গ্রুপের নয় জেলা বিএনপির সভা ছিল। সে বৈঠকে  হয়তো কেউ কেউ আসেনি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ভাই। কেন্দ্রে তাঁর প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি পদ পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। অপরদিকে তাঁকে ঠেকাতে কেন্দ্রীয় বিএনপির পদে থাকা টাঙ্গাইলের অধিকাংশ নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সাংসদরা জোটবদ্ধ হয়েছেন।
জেলা বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এবার সভাপতি পদপ্রার্থী ফকির মাহবুব আনাম বলেন, টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়ায়, ভূঞাপুর ও মধুপুরে আমার পৈত্রিক বাড়ি রয়েছে। বিএনপির যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে দায়িত্ব পালন করেছি। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে যে কোন দায়িত্ব পালন করতে আমি প্রস্তত রয়েছি।
জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদপ্রার্থী শামসুল আলম তোফা বলেন, সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে টাঙ্গাইলে অবস্থান করে জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রেখেছি। তবে জেলা বিএনপিতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে কোন গ্রুপিং নেই। সে কারণেই তাঁকে মূল্যায়ন করা হবে বলে আশা করছেন তিনি।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এবার সভাপতি পদপ্রার্থী ছাইদুল হক ছাদু বলেন,  ঢাকা থেকে এসে জেলায় নেতৃত্ব দিলে সংগঠন চলবে না। ১/১১সহ সকল আন্দোলন-সংগ্রামে জীবন বাজী রেখে আন্দোলন করেছি। তাই দলীয় সভাপতির পদে তাকেই নির্বাচিত করা হবে বলে তিনি আশা করেন।
জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক, শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন, দলকে শক্তিশালী করতে হলে পরীক্ষিত নেতাদের দিয়ে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হলে আন্দোলন-সংগ্রাম ও নির্বাচনে টাঙ্গাইলে কাঙ্খিত ফলাফল আসবে। তৃণমূলের দাবি অনুযায়ি আন্দোলন সংগ্রামে পরীক্ষিত নেতৃত্বকেই প্রধান্য দিতে হবে।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ফরহাদ ইকবাল বলেন, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থেকে কাজ করেছি। এবং করছি। পুলিশী নির্যাতন ও সরকারের রক্তচক্ষুকে ভয় না করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। তাই সামনে সরকার বিরোধী আন্দোলনকে চাঙ্গা করতে হলে তৃণমূল থেকেই সাধারণ সম্পাদক পদ দিতে হবে। নিস্ক্রিয় কোন নেতা যাঁরা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন না, তাঁরা পদ পেতে মড়িয়া হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেটা দেখেই নতুন কমিটি দিবেন।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলী ইমাম তপন বলেন, শহরে যারা অবস্থান করেন না তাদের নেতৃত্ব কেউ মানে না। কাজেই দল শক্তিশালী করতে হলে বিগত কমিটির ব্যর্থ নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে মাঠের পরীক্ষিত কর্মীদের প্রাধান্য দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করলে আন্দোলন সংগ্রাম সফল হবে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনেও দল সাফল্য লাভ করবে।
টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিএনপির দুরাবস্থার জন্য বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম তোফা দায়ী। কাজেই শহরের ৯০ভাগ নেতাকর্মী তোফাকে বয়কট করে শহর বিএনপির নেতৃত্বে আলাদা কর্মসূচি পালন করছি।
ছয়টি সংসদীয় আসনের উপজেলা ও পৌর ইউনিট কেন্দ্রীয় নেতা ও সাংসদের সমর্থনের কারণে ফকির মাহবুব আনাম স্বপন সভাপতি ও হাসানুজ্জামিল শাহীন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অপর দিকে শামসুল আলম তোফা ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালের প্রতি একটি মাত্র সংসদীয় আসন সালাম পিন্টুর নির্বাচনী এলাকার ভুঞাপুর-গোপালপুর উপজেলার সমর্থন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno