আজ- ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ৮:০৪

‘কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত’

 

দৃষ্টি নিউজ:

‘কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত’ খনার বচনটি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার কলা চাষিদের কাছে বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে।

ধনবাড়ী উপজেলায় কলা চাষ করে কৃষকদের পরিবারে কেবল ভাত কাপড়ের ব্যবস্থাই নয়, সামাজিকভাবে একটা অবস্থানও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন অনেকে। কলা চাষ করে শুধু দুঃখ ঘুচিয়ে পারিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবেই চলতে পারছেন তারা। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা দিন দিন কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

ধান আবাদ করে বাজারে ধানের পর্যাপ্ত দাম না পেয়ে বার বার লোকসান হওয়ায় তারা কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এ উপজেলায় কলা চাষ করে অনেকে সাবলম্বীও হয়েছেন। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে পাওয়ায় সন্তানদের ভালোভাবে পড়ালেখাও করাতে পারছেন। অর্থকরি ফসল হিসেবে উপজেলায় বিবেচিত হচ্ছে ‘কলা চাষ’।

ধনবাড়ী উপজেলার কলা চাষি রুহুল আমিন, আস্কর আলী ও নুরুল ইসলাম জানান, কলা চাষ করে অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। কলা চাষে প্রথম অবস্থায় সাথী ফসল হিসেবে মসলা জাতীয় ফসল, নানা ধরনের সবজি, বিভিন্ন ফসল সহ ধানও আবাদ করা যায়।

কলার চারা লাগানোর অল্প দিনের মধ্যে বেড়ে উঠে এবং দ্রুত ফল পাওয়া যায়। বৈশাখ মাসে কলার চারা রোপন করলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফলন পাওয়া যায়। যেসব জমিতে পানি জমে না সেসব জমিতে কলা চাষ ভাল হয়। এক বিঘা জমিতে কলা চাষের জন্য জাতভেদে আড়াইশ’ থেকে সাড়ে তিনশ কলার চারা রোপন করা যায়। একটি কলা গাছে দুই থেকে আড়াই মণ পর্যন্ত কলার ফলন হয়। একবার কলার চারা রোপন করলে একটানা তিন বছর ভালোভাবে ফলন পাওয়া যায়- যা অন্য কোন ফসলে সম্ভব হয় না।

এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হলেও তিন-চার গুণ টাকার কলা বিক্রি করা যায়। ধনবাড়ী-মধুপুর এলাকার কলা ভালোমানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে কলা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কলা কিনে নেয়। এখানকার কলা কিনে পাইকাররা ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি করে থাকেন।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অনুপম, চাঁপা, মহেরে সাগর, মানকিসহ বিভিন্ন জাতের কলার চাষ করা হয়েছে। এসব জাতের কলাগাছ থেকে অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়। কড়য়া গ্রামের কৃষক মো. খলিলুর রহমান জানান, তিনি এবার চার বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সকল খরচ বাদে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকার মত লাভ থাকবে বলে আশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, কলা বিক্রি করতে আমাদের কোন ঝামেলা হয় না। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা এসে কলা কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় সহজেই কলা বিক্রি করা যায়।

অপর কলাচাষি সমির হোসেন ও লিটন মিয়া জানান, তাদের অঞ্চলে কলার ভালো ফলন হয়। এখানকার চাষিরা কলা আবাদ করে কোন ধরনের লোকসান না হওয়ায় দিনদিন তাদের আগ্রহ বাড়ছে। এ এলাকার প্রতি ছড়ি কলা প্রকারভেদে সাগর কলা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, সবজি কলা(আনাজ) ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাঁপা কলা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ অঞ্চলের কলা দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি হয়। এছাড়া ধনবাড়ী বাজার, পাইস্কা বাজার, বলিভদ্র বাজার, মুশুদ্দি বাজার ও ইসলামপুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে কলার হাট বসে।

ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ৭০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। কলা চাষে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কলা চাষের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কলা চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno