আজ- ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  সন্ধ্যা ৭:৫০

ঘাটাইলে ইটভাটার পেটে কৃষিজমি ও বন

 

দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় ৬০টির বেশি ইটভাটার মধ্যে ৩৭টি ভাটার লাইসেন্স নেই। বৈধগুলোর লাইসেন্সও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে দেয়া হয়নি। বৈধ-অবৈধ ভাটাগুলোতে ফসলি জমি ও পাহাড়ের মাটি এবং বনের গাছ পোড়ানো হচ্ছে। বন, পরিবেশ বা জেলা-উপজেলা প্রশাসন এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা হয়েছে, বন বিভাগের তিন কিলোমিটার আর বসতভিটা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে, তিন ফসলি জমিতে এবং পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো স্থানে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইলে আবাদি ভূমির পরিমাণ ৩০ হাজার ১৫০ হেক্টর। ৬০টির মতো ইটভাটা স্থাপনে চলে গেছে কমপক্ষে ৪০০ একর আবাদি ভূমি।
ঘাটাইল উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২৩টি ভাটার লাইসেন্স রয়েছে। অনেকের আবার লাইসেন্স নবায়ন নেই। বাকিরা অবৈধ। কেউ উচ্চ আদালতে রিট করে বছরের পর বছর ধরে চলছে। এর মধ্যে উপজেলার ধলাপাড়া ইউনিয়নে বনের ভেতর গড়ে উঠেছে ১০টি, রসুলপুর ইউনিয়নে ১১টি, দেউলাবাড়ী ইউনিয়নে ফসলি জমিতে ১০টি, ঘাটাইল সদর ইউনিয়নে দুটি, জামুরিয়া ইউনিয়নে আবাসিক এলাকা এবং তিন ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ১৬টি ভাটা গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া লোকেরপাড়া, আনেহলা, দিগড়, দেওপাড়া ও দিঘলকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে দুই ও তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ে উঠেছে।
উপজেলার চানতারা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এ গ্রামে আটটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। গ্রামের প্রায় সব আবাদি জমিই চলে গেছে ভাটার পেটে। এটি এখন ভাটার গ্রাম হিসেবে পরিচিত।
গ্রামবাসী জানায়, এক সময় এ এলাকার জমিতে বছরে তিনটি ফসল উৎপাদিত হতো। এখন আর আবাদ করা যায় না। শুধু এ গ্রামের নয়, আশপাশের গ্রামের আবাদি জমি নষ্ট হয়েছে। যেসব জমি ফাঁকা রয়েছে সেগুলোর উপরিভাগের মাটি চলে গেছে ভাটায়। ফসলি জমির পাশাপাশি ভাটার কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। ফলে এর বিরূপ প্রভাবে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে মৌসুমী ফল। মাটির ওপরের অংশের উর্বরতাও নষ্ট হচ্ছে। একই অবস্থা উপজেলার রসুলপুর, পেঁচারআটা, ধলাপাড়া ও সরাবাড়ী এলাকায়। এসব গ্রাম ঘিরে স্থাপিত হয়েছে ১৫ থেকে ২০টি ইটভাটা।
যত্রতত্র নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে ইটভাটা স্থাপন করায় ট্রাকের চাপে গ্রামীণ সড়কগুলো ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। জনগণের ভোগান্তির পাশাপাশি সরকারের লোকসান হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কয়লা পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও তারা আইনের তোয়াক্কা না করে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করছে। বিশেষ করে উপজেলার বন বিভাগের ভেতরে ধলাপাড়া, পেঁচারআটা, সরাবাড়ীসহ বন সংলগ্ন ইটভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সেদিকে নজর নেই বন বিভাগের। ফলে অবাধে কাটা হচ্ছে গাছ, উজাড় হচ্ছে বনভূমি।
কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়া স্থাপিত বেলদহ গ্রামে রানা বিকস বন্ধের দাবিতে আদালতে মামলা করেছে এলাকাবাসী। ভাটাটি বন্ধের দাবিতে সম্প্রতি এলাকায় মানববন্ধনও করেছে তারা। মাকড়াই কেআরবি বিকস স্থাপন করা হয়েছে আবাসিক এলাকার মাঝখানে। কোনো অনুমতি ছাড়াই ভাটাটি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে মালিকপক্ষ। ইটভাটাগুলো স্থাপিত হওয়ায় এলাকার কৃষিজমির ক্ষয়ক্ষতিসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানায় এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন ধলা বলেন, ‘অনেকের লাইসেন্স না থাকলেও সব ইটভাটা বৈধ। যেহেতু সবাই উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে এবং অনুমতি চেয়ে আবেদন করে ভাটা পরিচালনা করছে।’
দুই ও তিন ফসলি জমিতে ইটভাটার অনুমতি দেয়া প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বিশ্বাস বলেন, ‘ইটভাটার অনুমোদন দেয়ার বিষয় কৃষি বিভাগের না। কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক আমরা শুধু প্রতিবেদন দাখিল করে থাকি।’
বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, ইটভাটার লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে বন বিভাগের কোনো ভূমিকা নেই। ভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি দেখে বন বিভাগ। ভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানো হলে ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা আহমেদ জানান, অবৈধভাবে স্থাপিত এবং লাইসেন্সবিহীন ভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অনুমতি না থাকায় নতুন স্থাপিত দুটি ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno