আজ- ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  বিকাল ৪:১০

চাঞ্চল্যকর ফারুক হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র মুক্তির জামিন মঞ্জুর

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় শর্ত সাপেক্ষে টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান থান মুক্তির অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রথম অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মাসুদ পারভেজ ওই জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌসুলী(এপিপি) মনিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ভাই ও বর্তমান সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে।


আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌসুলী মনিরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। এদিন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিউলী রাণী দাসের সাক্ষ্য গ্রহন ছিল।

কিন্তু সাক্ষী আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সুচিকিৎসার দাবিতে সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিন আবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি মনিরুল ইসলাম ও বাদি পক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম জামিনের বিরোধীতা করেন।

পরে আদালতের বিচারক উভয়পক্ষের বক্তব্য বিবেচনা করে শর্ত সাপেক্ষে সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে ২০ বার আবেদন করেও তিনি জামিন পাননি। এ মামলার পরবর্তী তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি। জামিন মঞ্জুরের সময় আসামি সহিদুর রহমান খান মুক্তি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় তার ভাই সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও বর্তমান সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান সহ বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক আদালত চত্ত্বরে উপস্থিত ছিলেন।


জামিনে মুক্তি পেয়ে সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি চারটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও প্রায় অর্ধশত মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে তার কর্মী-সমর্থকদের সাথে আদালত চত্ত্বর ত্যাগ করেন। পরে তিনি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়ায় তার পৈত্রিক বাড়িতে যান। জামিন পাওয়ার পর সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলেন নি।


আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুল বাকী মিঞা জানান, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি নানা রোগে আক্রান্ত। তার সুুচিকিৎসা প্রয়োজন। আদালত মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে পাসপোর্ট জমা রেখে শর্ত সাপেক্ষে তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন।


মামলার বাদি নাহার আহমদ এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অস্বীকার করে জানান, মামলার সাক্ষ্যগ্রহন শেষ পর্যায়ে থাকাবস্থায় হত্যা মামলার আসামি কীভাবে জামিন পায়। জামিন পেয়ে কাগজপত্র কারাগারে না পৌঁছুতেই কীভাবে বেড়িয়ে যায়? তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। পরে সাংবাদিকদের জানাবেন।


জেলার সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০১৪ সালের আগস্টে আনিসুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। আদালতে দেওয়া ওই দুজনের স্বীকারোক্তিতে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে।

এরপর অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে যান। আমানুর রহমান খান রানা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আত্মসমর্পণ করেন। প্রায় তিন বছর হাজতবাসের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। সহিদুর রহমান খান মুক্তি অভিযুক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ ছয় বছর পলাতক থেকে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

অন্য দুই ভাই ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা এখনও পলাতক রয়েছেন। এ মামলায় ৩৩জন সাক্ষীর মধ্যে গত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ কনস্টেবল মামুর রশিদের সাক্ষ গ্রহনের মধ্য দিয়ে ২৪ জনের সাক্ষগ্রহন ও জেরা সম্পন্ন হয়।


প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়ার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার হয়। এ ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno