আজ- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার  দুপুর ২:০৩

জমি দখল ও চাঁদাবাজি করে যুবলীগ নেতা শামীম কোটিপতি!

 

দৃষ্টি নিউজ:

আওয়ামী যুবলীগ নেতা শামীম আল মামুনের বিলাসী জীবন

‘টু শব্দটি করতেও নারাজ’ এলাকার মানুষ। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জমি দখল, মাদক ব্যবসা, জুয়াসহ হেন অপরাধ নেই- যা তিনি করেন না। তিনি উপজেলার মানুষের কাছে দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠছেন। মাত্র ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। তিনি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার পোষ্টকামুরী গ্রামের ট্রাক চালক আবুল মিয়ার ছেলে শামীম আল মামুন। তার এহেন কর্মকান্ডে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এক সময়ের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতা শামীম আল মামুন ১৯৯৫ সালে ছাত্রলীগে যোগদান করেন। দলীয় সভা-সমাবেশ ও মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহন না করেও উপজেলার শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতার আশীর্বাদ লাভ করেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শামীম আল মামুন রাতারাতি স্থানীয় সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেনের এপিএস বনে যান। এরপর থেকে তার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার কার্যক্রম শুরু হয়। গড়ে তুলেন বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। ওই বাহিনীর মাধ্যমে উপজেলায় বেপরোয়া চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড শুরু করেন। বাবার নামে গ্রামের বাড়ি মির্জাপুরের পোষ্টকামুরী গ্রামে পাঁচ শতাংশ জমি থাকলেও বর্তমানে শামীমের রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও বিলাশবহুল গাড়ি। দেশের বাইরে দুবাই বিমানবন্দরের পাশে হোয়াইট হাউজ, আল-বায়াত ও বিগব্র্যান্ড স্টোর নামে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন শামীম।

২০০৭ সালে মির্জাপুরের চন্দ্রবিন্দু ডায়াগনস্টিক সেণ্টারের মালিক অনন্ত দাস নামে এক সংখ্যালঘু ব্যক্তির কাছে তিনি ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বিষয়টি র‌্যাবকে জানায় অনন্ত। গোপনে র‌্যাবের সদস্যরা ওই ডায়াগনস্টিক সেণ্টারে উপস্থিত হয়ে চাঁদার টাকাসহ শামীম ও তার সহযোগীদের হাতেনাতে আটক করে। এ ঘটনায় অনন্ত দাস বাদি হয়ে ২০০৮ সালে চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় শামীমকে সাত নম্বর আসামি করা হয়। ২৬দিন করাগারে থাকার পর জামিনে বের হয়ে শামীম বাদিকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলাটি আপোষ করতে অনন্তকে বাধ্য করেন। মামলা আপোষের পরপরই শামীমের ভয়ে এলাকা ছেড়ে সপরিবারে অন্যত্র চলে যান অনন্ত দাস।

২০০৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত স্থানীয় এমপি একাব্বর হোসেনের ডিও লেটার ব্যবহার করে সরকারি চাকুরি দেয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন শামীম ও তার চাচাত ভাই ফারুক, জহিরুল, বাহাদুর, ইয়ানুর। পরবর্তীতে চাকুরি প্রার্থীরা প্রতারিত হওয়ার পরও টাকা ফেরত চাইতে সাহস পাচ্ছে না। বরং এ বিষয়ে কারো কাছে মুখ খুলতেও নিষেধ করে দিয়েছেন ক্ষমতাধর শামীম আল মামুন। গোড়াই মমিন নগর মৌজার খতিয়ান নং ১৩০৪-এর দাগ নং ২৮২৮ এর ১০০ শতাংশ খাস জমি শামীম তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রভাব খাটিয়ে মা ও নিজের আত্মীয়-স্বজনদের নামে বন্দোবস্ত নেয়।

আওয়ামী যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে ট্রাক চালকের ছেলে কোটিপতি শামীম

শামীম আল মামুন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসের সহযোগিতায় কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়কের পদও বাগিয়ে নেন। ওই আহ্বায়ক কমিটিতে শামীমের নিজের লোকজন স্থান পায়। ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই ওমর ফারুক চৌধুরী ১৮ সদস্য বিশিষ্ট মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের কমিটির অনুমোদন দেন। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন পদবঞ্চিতরা।

চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল ও মাদক ব্যবসার পাশাপাশি তিতাস গ্যাসের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজসে মির্জাপুরে প্রায় দেড়হাজার বাসা-বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ পাইয়ে দেন শামীম আল মামুন। প্রতিটি সংযোগের জন্য ৭০ হাজার টাকা করে নেয় শামীম। পরবর্তীতে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে উর্র্ধতন কর্তৃপক্ষ অভিযান চলায়। অভিযানের পর তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ শামীম আল মামুনসহ কয়েকজনকে আসামি করে মির্জাপুর থানায় ২০১৪ সালের ৮ মে এবং ৯ মে দুইটি মামলা দায়ের করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু পরিবারের প্রধান অনন্ত দাস জানান, তিনি শামীমের ভয়ে মামলাটি আপোষ করতে বাধ্য হন। এরপর থেকেই শামীম তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বাড়িতে গিয়ে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। পরে বাধ্য হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এলাকা ছেড়ে টাঙ্গাইল শহরে বসবাস শুরু করেন। এরপরও শামীম তার লোকজন দিয়ে হুমকি দিচ্ছে।

স্থানীয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকনেতারা জানান, শামীমের প্রভাব খাটিয়ে তার চাচা নান্নু মিয়া পরিবহন থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদা আদায় করছেন। এর অন্তরালে শামীমের সম্পৃক্ততা রয়েছে। শামীমের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম মাসুম সম্প্রতি অস্ত্র মামলায় গেস্খপ্তার হয়ে হাজতবাসও করেন।

এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক শামীম আল মামুন জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। উপজেলায় একটি মহল তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সমাজে তার সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করছে। তিনি কোন চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস বা মাদক ব্যবসার সাথে কোনভাবেই জড়িত নন। বরং এসব অপরাধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর আবস্থানে থেকে সামাজিক দায়িত্ব পালন করছেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno