আজ- ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার  সন্ধ্যা ৭:০৫

টাঙ্গাইলে বাসে ডাকাতি-যৌন নিগ্রহ :: একাধিক নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়

 

দৃষ্টি নিউজ:

মো. রতন হোসেন, বয়স ২১ এর কাছাকাছি। পেশায় বাসের হেলপার। হেলপারির ছদ্মবেশে ২০১৮ সাল থেকে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করছিল। তিনি ডাকাত দলেরএ চক্রের দলনেতা।

তার অধীনে ১৩-১৫ জন্য সদস্য রয়েছে। ডাকাতির ঘটনায় দুই দুইফায় সে কারাভোগও করেছেন। দ্বিতীয় দফায় ৯ মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আসে এবং পুনরায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি সংঘটিত করেন।


সম্প্রতি কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ গামী ঈগল পরিবহণের যাত্রীবাহী একটি বাসে ডাকাতির সময় পালাক্রমে যৌন নিগ্রহের পাশাপাশি একাধিক নারীর শ্লীলতাহানি করে ডাকাত দলের সদস্যরা।


র‍্যাব বলছে, রাত্রিকালীন কোচ ঈগল পরিবহণের ওই বাসে মোট ২৪ জন যাত্রী ছিল। এদের মধ্যে ৫-৭ জন ছিলেন নারী যাত্রী। ওই বাসে ১৩ জন ডাকাত সদস্য অস্ত্রের মুখে সব যাত্রীকে জিম্মি করে ফেলে। যাত্রীদের বাসের জানালার পর্দা দিয়ে হাত-পা বেধে ফেলা হয়। ডাকাত দলের সদস্যরা নারী যাত্রীদের মধ্যে একজনকে দলবদ্ধ ভাবে যৌন নিগ্রহ করে। পাশাপাশি একাধিক নারীর শ্লীলতাহানি করে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।


গত ২ আগস্ট রাতে সংঘটিত টাংগাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও যৌন নিগ্রহের ঘটনায় ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেন সহ চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১২ ও ১৪)।


রোববার (৭ আগস্ট) রাজধানীর ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গ্রেপ্তার ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা হচ্ছেন- মো. আলাউদ্দিন (২৪), মো. সোহাগ মন্ডল (২০), খন্দকার মো. হাসমত আলী ওরফে দীপু (২৩), মো. বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস (২১), মো. জীবন (২১), মো. আব্দুল মান্নান (২২), মো. নাঈম সরকার (১৯), রাসেল তালুকদার (৩২) ও আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান (১৮)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ২০টি মোবাইল, ২টি রূপার চুড়ি, ১৪টি সিমকার্ড ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত ১টি দেশিয় অস্ত্র (ক্ষুর) জব্দ করা হয়।


সোমবার (৮ আগস্ট) বেলা ১২ টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


তিনি বলেন, গত ২ আগস্ট সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ঈগল পরিবহণের একটি বাস নারায়নগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি খাবারের হোটেলে যাত্রাবিরতি নেয় বাসটি। সেখান থেকে ছেড়ে আসার পর তিন দফায় যাত্রী সেজে ওই বাসে ওঠেন ডাকাত চক্রের সদস্যরা।

ওই বাসে ডাকাত দলের ১৩ সদস্য ডাকাতি ও এক নারী যাত্রীকে পালাক্রমে যৌন নিগ্রহ করে। এ ঘটনায় ৩ আগস্ট ওই বাসের এক যাত্রী বাদি হয়ে মধুপুর থানায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযোগের ছায়া তদন্ত করে ডাকাত দলের মুলহোতাসহ ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এর আগে এ চক্রের তিন সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল।


র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ডাকাত সদস্যরা জানায়- দলনেতা রতন হোসেন বাস ডাকাতির ঘটনার ৩ দিন আগে তার সহযোগী রাজা মিয়াকে প্রস্তাব দেয়। এরপর রাজা তাদের দলের অন্যান্য সদস্যদের সংঘটিত করে। গ্রেপ্তার রতন, মান্নান, জীবন, দীপু, আউয়াল ও নুরনবীকে ডাকাতির পরিকল্পনার কথা জানায় এবং দলের অন্যতম সদস্য মান্নান তার সহযোগী সোহাগ, আসলাম, রাসেল, নাঈম ও আলাউদ্দিনকে নিয়ে ডাকাতিতে যোগ দেয়।


পরিকল্পনা অনুযায়ী রতন ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫ হাজার টাকার একটি ফান্ড তৈরি করে। পরে ডাকাত সদস্যরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে যায়। পরিকল্পনা মোতাবেক, রতন ডাকাত ২ আগস্ট রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ৪টি চাকু, ২টি ধারালো কাঁচি ও ১টি ক্ষুর কিনে এবং তা ব্যাগে ভরে সঙ্গে নিয়ে যায়। পরে তারা ওই রাত ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রামগামী ঈগল পরিবহণের বাসটি সিরাজগঞ্জ রোড মোড়ে থামিয়ে যাত্রীবেশে রতন, রাজা, মান্নান ও নুরনবী উঠে। পরে আরও দুই দফায় ডাকাত দলের অন্য সদস্যরা বাসটিতে যাত্রীবেশে ওঠে।


বাসটি যখন বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু এলাকা পার করে, তখন দলনেতা রতন সবাইকে চাকু ও ধারালো কাঁচি দেয়। আওয়াল ডাকাত ধূমপানের কথা বলে বাসের গেটের কাছে যায় এবং অন্যান্যদের ইশারা দিলে রাজা, রতন, মান্নান ও নূরনবী ড্রাইভিং সিটের কাছে গিয়ে চালককে জিম্মি করে এবং বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।


ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা বাসের চালক ও সুপারভাইজার, হেলপারসহ যাত্রীদের হাত-মুখ বেঁধে ফেলে। তারা যাত্রীদের সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নেয়। সেখানে এক নারীকে পালাক্রমে যৌন নিগ্রহ ও শ্লীলতাহানি করে।

পরে বাসটি যখন টাঙ্গাইলের হাটুভাঙ্গা মোড় হয়ে মধুপুরে ঢুকে তখন ডাকাত সদস্যদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বাকবিতণ্ডা ঘটে এতে বাসের স্টেয়ারিংয়ে থাকা রতন পেছনে তাকালে বাসটি রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে বালির মধ্যে পড়ে যায়। তখন ডাকাত সদস্যরা সবাই লুণ্ঠিত মালামাল নিয়ে বাস থেকে পালিয়ে যায়৷


খন্দকার আল মঈন বলেন, আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই বাসে থাকা এক নারী যাত্রীকে পালাক্রমে যৌন নিগ্রহ এবং অন্য নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটায় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।


জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা আরও জানায়, সেখান থেকে ডাকাত সদস্যরা টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় যায় এবং অটোরিকশাযোগে মধুপুরের কুড়ালিয়া এলাকায় রতনের এক আত্মীয়ের ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করে।

সেখানে লুণ্ঠিত মালামাল ভাগবাটোয়ারা করে রতন গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় আত্মগোপন করে। গ্রেপ্তার মান্নান, আলাউদ্দিন ও বাবু আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকায় আত্মগোপন করে।

আসলাম, নাঈম, রাসেল প্রথমে নিজের এলাকায় ও পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকায় আত্মগোপন করে। ডাকাত জীবন কোনাবাড়ীতে এবং দীপু গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় আত্মগোপন করে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno