আজ- ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সকাল ৯:৫২

টাঙ্গাইলে রবি-১ ও ভারতীয় জাতের পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলে প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের জিনতত্ত্ববিদ মাকসুদুল আলম উদ্ভাবিত রবি-১ ও ভারতীয় জাতের পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।

রবি-১ ও ভারতীয়(ইন্ডিয়ান) জাতের পাট প্রতিকূল পরিবেশে অনায়াসে বেড়ে উঠতে পারে এবং ফলন আশানুরূপ হওয়ায় কৃষকরা এ জাতের পাট চাষে ঝুঁকছে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৫ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে।

কিন্তু ১৬ হাজার ৮৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। রবি-১ ও ভারতীয় জাতের বীজ সহজে পাওয়া এবং পাটের দাম বেশি পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১০৩ হেক্টর জমিতে বেশি পাট চাষ হয়েছে। কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদ বিবেচনায় না নিয়ে নির্ধারণ করায় জাতীয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কম হলেও গত তিন বছরে জেলায় পাটের উৎপাদন বেড়েছে।

সূত্রমতে, ২০১৯-২০২০ মৌসুমে ১২ হাজার ৪৪৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮২ বেল(১ বেল= দুই টন) পাট উৎপাদন হয়। যা প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হার ৯.৮৪৬ বেল।

২০২০-২০২১ মৌসুমে ১৬ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে পাট চষে এক লাখ ৬২ হাজার ৩০২ বেল পাট উৎপাদন হয়। যা প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ১০.১৩১ বেল। ২০২১-২০২২ অর্থাৎ চলতি মৌসুমে ১৬ হাজার ৮৮ হেক্টর জমিতে এক লাখ ৬৯ হাজার ৮৮৯ বেল পাট উৎপাদন হয়। যা প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ১০.৫৬৬ বেল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় দুই হাজার ৭৮০ হেক্টর, দেলদুয়ারে এক হাজার ৪৩৫ হেক্টর, নাগরপুরে এক হাজার ৪১৮ হেক্টর, মির্জাপুরে এক হাজার ৮৫ হেক্টর, বাসাইলে ৪৪৫ হেক্টর, সখীপুরে ১৩৫ হেক্টর, কালিহাতীতে এক হাজার ৮৫ হেক্টর, ঘাটাইলে ৯৬০ হেক্টর, ভূঞাপুরে ৪ হাজার ১২৯ হেক্টর, গোপালপুরে দুই হাজার ২১০ হেক্টর, মধুপুরে ২০৬ হেক্টর এবং ধনবাড়ী উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে।

পাট চাষীরা জানায়, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি চাষ করতে সাড়ে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ মণ পাট হয়। প্রতি মন পাটের বর্তমান মূল্য সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। অপরদিকে, প্রতি বিঘায় চার থেকে সাড়ে চারশ’ আটি পাটখড়ি হয়। প্রত্যেক আটি পাটখড়ির দাম ১০-১২ টাকা।

এ কারণে চলতি বছর কৃষকরা অন্যান্য ফললের চেয়ে পাট চাষে বেশি লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া রবি-১ ও ভারতীয় জাতের পাটবীজ সহজে পাওয়ার পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। এবার বন্যার পানিও দেরিতে জমিতে আসে এবং স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পয়লা গ্রামের পাট চাষী মইদুল জানান, ১০ শতাংশ জমিতে তিনি পাট চাষ করেছেন। এ বছর তিন মণ পাট ও প্রায় দুই হাজার টাকার পাটকাঠি(পাটখড়ি) পাবেন বলে আশা করছেন। এ বছর পাটের দাম বাজারে মণপ্রতি ৩৫০০-৩৬০০ টাকা। পাট চাষে তার খরচ হয়েছে আড়াই-তিন হাজার টাকা। এ বছর পাট চাষ করে তিনি বেশ লাভবান হবেন।

একই উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের রাঙ্গাচিরা গ্রামের পাট চাষী আব্দুল হামিদ জানান, ইরি ধান কেটেই তিনি ওই জমিতে পাটের বীজ ছিটিয়েছিলেন। হাল চাষ না করেও তার পৌনে তিন বিঘা জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি রবি-১ জাতের পাট চাষ করেছিলেন। দেরিতে বন্যা ও বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন খুবই ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে তার ২০ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে।

তিনি জানান, সম্প্রতি বাড়িতে পাইকার এসে মণপ্রতি পাটের দাম ৩৮০০ টাকা দিবে বলেছে, তিনি মণপ্রতি চার হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেছেন। বনিবনা না হওয়ায় বিক্রি করেননি। এবার পাটের দাম আরও বাড়বে বলে তার ধারণা।

টাঙ্গাইল পৌরসভার অলোয়া ভবানী এলাকার পাট চাষী শফিকুল ইসলাম জানান, তার এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। ভারতীয় জাতের পাট চাষ করায় সাড়ে ৬ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। তিনি সাড়ে তিন হাজার টাকা মণদরে পাট বিক্রি করেছেন। এছাড়া চারশ’ আটি পাটখড়ি হয়েছে। পাইকাররা প্রতি আটি পাটখড়ি ৮-৯ টাকা দাম বলায় তিনি বিক্রি করেননি।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাশার জানান, চলতি মৌসুমে বিএডিসির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে কৃষকদের উন্নত জাতের রবি-১ বীজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া বেসরকারি বীজ বিক্রেতাদের কাছ থেকে কৃষকরা ভারতীয় জাতের পাটবীজ সংগ্রহ করে চাষ করেছেন। এ কারণে এবার স্থানীয় জাতের চেয়ে ওই দুটি জাতের পাট বেশি চাষ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, গত তিন বছরে জেলায় পাট চাষ ও উৎপাদন ক্রমাগত বেশি হয়েছে। এছাড়া বাজারে পাটের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা পাটচাষে আরও বেশি আগ্রহী হচ্ছে।

প্রকাশ, বাংলাদেশি জিনতত্ত্ববিদ মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটাসফট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাটের জিন নকশা সফলভাবে উন্মোচিত হয়।

পরে ২০১০ সালের ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পাটের জিনোম অনুক্রম আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। জিনতত্ত্ববিদ মাকসুদুল আলম পরে রবি-১ জাতের পাট আবিস্কার করেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno